মীলাদ শরীফ মনগড়া কোন পদ্ধতি নয় বরং স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই জারি ছিল এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা তা পালন করেছেন। অতঃপর পর্যায়ক্রমে সম্ভ্রান্ত
মুসলমানগণ অত্যন্ত ধর্মীয় তাৎপর্য ও শান শওকতের সাথে আজও
পালন করে আসছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত
, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আবু আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে,
তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন,
জ্ঞাতি-গোষ্ঠী,
পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন,
এই দিবস;
এই দিবস
(অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা উনার রহমতের দরজা আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে,
সেও আপনার মত নাযাত
(ফযীলত)
লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ
উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক
উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক
উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর
(ছলাত-সালাম)
দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূল-এ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন এবং
(মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে)
বললেন:
“আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)
খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম
মীলাদ শরীফ পাঠের জন্য খুলাফায়ে রাশিদীন উনার প্রথম চার খলীফাই উনাদের খিলাফতকালে বিশেষ উৎসাহ ও গুরুত্ব প্রদান করেছেন। যেহেতু আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ মীলাদ শরীফ উনার মাহফিল করেছেন এবং সে মাহফিলে স্বয়ং আল্লাহ পাক
উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হয়ে মীলাদ শরীফ পাঠকারীগণকে রহমত,
মাগফিরাত,
নাযাত ও শাফায়াত লাভের সুসংবাদ দান করেছেন। শুধু তাই নয়,
ক্বিয়ামত পর্যন্ত যারা মীলাদ শরীফ পাঠ করবে তাদের জন্যও একই সুসংবাদ দান করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত ইমাম মুহাদ্দিছ, মুফাসসির হযরতুল আল্লামা আহমদ শিহাবুদ্দীন হাইতামী (হাইছামী) শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্ব সমাদৃত, সর্বজন স্বীকৃত ও সুপ্রসিদ্ধ মীলাদ শরীফ উনার কিতাব “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম-এ বর্ণিত রয়েছে,
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহি সালাম বলেন, “যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে,
সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত উমর ফারূক আলাইহি সালাম বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফকে বিশেষ মর্যাদা দিল,
সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো। সুবহানাল্লাহ!(আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত উছমান আলাইহি সালাম বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করল,
সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহি সালাম
বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার মীলাদ শরীফ পাঠের কারণে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো,
সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পরবর্তী তাবিয়ীনগণের যুগে এবং তৎপরবর্তী প্রত্যেক যুগেই অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ মীলাদ শরীফ পাঠের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি: যিনি শতাধিক ছাহাবায়ে কিরাম উনার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। যিনি ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহি সালাম উনার খলীফা ও ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন . “আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে,
আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে আল্লাহ পাক
উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে ব্যয় করতাম। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
মাযহাবের ইমামগণ
অনুরূপভাবে মাযহাবের ইমামগণও আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠের ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরি করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং উত্তমভাবে
(তথা সুন্নাহভিত্তিক)
আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব,
শহীদ, ছালিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং তাঁর ঠিকানা হবে জান্নাতুল নায়ীমে। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
তরীক্বতের ইমামগণ
আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত ইমাম মারূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি মীলাদ শরীফ পাঠের ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, “ যিনি আল্লাহ পাক
উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ উপলক্ষে খাদ্য প্রস্তুত করবেন এবং আল্লাহ পাক
উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার মীলাদ শরীফ উনার সম্মানার্থে মুসলমান ভাইদের একত্রিত করবেন, (আলো দানের উদ্দেশ্যে)
প্রদীপ বা বাতি জ্বালাবেন,
নতুন পোশাক পরিধান করবেন,
(সুগন্ধির উদ্দেশ্যে)
ধূপ জ্বালাবেন এবং আতর-গোলাপ মাখবেন,
ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তাঁর হাশর-নশর করবেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের প্রথম দলের সাথে এবং তিনি সুউচ্চ ইল্লীনে অবস্থান করবেন। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত সাররী সাক্বতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করল,
সে যেন তাঁর জন্য জান্নাতে রওযা বা বাগান নির্দিষ্ট করলো। কেননা সে তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত উনার জন্যেই করেছে। (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
সয়ং আল্লাহ পাক
উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- “যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, আন নি’মাতুল কুবরা)
সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,“যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আয়োজনে উপস্থিত হল এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করলো। সে তাঁর ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে অর্থাৎ সে বেহেশতী হবে। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ
বিশ্বখ্যাত আলিমে দ্বীন হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে, লবণ,
গম বা অন্য কোন খাদ্যদ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়,
তাহলে এই খাদ্যদ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন।
(তাতে বরকত হবেই)। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
তিনি আরো বলেন, “উক্ত মুবারক খাদ্য মীলাদ শরীফ পাঠকারীর বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ পাক
উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি তাঁকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয়না। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
তিনি আরো বলেন, “যদি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে কোন পানিতে ফুঁক দেয়, অতঃপর উক্ত পানি কেউ পান করে তাহলে তাঁর অন্তরে এক হাজার নূর ও রহমত প্রবেশ
করবে। আর তাঁর থেকে হাজারটি বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রোগ দূর হবে যে দিন সমস্ত ক্বলব (মানুষ)
মৃত্যুবরণ করবে সেদিনও ঐ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পানি পানকারী ব্যক্তির অন্তর মৃত্যুবরণ করবেনা। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে রৌপ্যের অথবা স্বর্ণের দেরহামসমূহের উপর ফুঁক দেয় অতঃপর তা অন্য জাতীয় মুদ্রার সাথে মিশায় তাহলে তাতে অবশ্যই বরকত হবে এবং এর পাঠক কখনই ফকীর হবে না। আর উক্ত পাঠকের হাত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার (মীলাদ শরীফ পাঠের)
বরকতে কখনো খালি হবে না। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
মুসলমানদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি কিতাব লিখেছেন, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি হিজরী দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, উনার
ওসায়িল
ফী শরহি শামায়িল নামক কিতাবে বলেন, “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন এবং আল্লাহ পাক তাঁদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরাঈল,
মীকাইল, ইসরাফিল ও আজরাইল আলাইহিমুস সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। সুবহানাল্লাহ!(আন নিমাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
তিনি আরো বলেন,“যখন কোন মুসলমান নিজ বাড়িতে মীলাদ শরীফ পাঠ করে তখন সেই বাড়ির অধিবাসীগণের উপর থেকে আল্লাহ পাক অবশ্যই খাদ্যাভাব, মহামারি,
অগ্নিকা-, ডুবে মরা, বালা-মুছিবত, হিংসা-বিদ্বেষ, কু-দৃষ্টি, চুরি ইত্যাদি উঠিয়ে নেন। যখন উক্ত ব্যক্তি মারা যান তখন আল্লাহ পাক তাঁর জন্য মুনকার-নকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর তাঁর অবস্থান হয় আল্লাহ পাক
উনার সন্নিধানে সিদকের মাক্বামে। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
এই উপমহাদেশে যিনি হাদীছ শাস্ত্রের প্রচার-প্রসার করেছেন, ইমামুল মুফাসসিরীন ওয়াল মুহাদ্দিছীন ওয়াল ফুক্বাহা হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ দিবসকে তা’যীম করবে এবং সে উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করবে সে চির শান্তিময় জান্নাতের অধিকারী হবে।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, স্বয়ং আল্লাহ পাক এবং
উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্য নির্দেশ
দিয়েছেন।
খুলাফায়ে রাশিদীন, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম,-অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং পালন করার জন্য উম্মাহকে উৎসাহিত করেছেন।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত
, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আবু আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে,
তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন,
জ্ঞাতি-গোষ্ঠী,
পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন,
এই দিবস;
এই দিবস
(অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা উনার রহমতের দরজা আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, সেও আপনার মত নাযাত (ফযীলত)
লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত , তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ
উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত-সালাম) দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূল-এ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন এবং
(মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন:
“আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)
উপরে বর্ণিত হাদীছ শরীফ-দ্বয়েএ মীলাদ শরীফ
উনার সাথে ক্বিয়ামের বিষয়টি সম্পৃক্ত রয়েছে। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন উক্ত মীলাদ শরীফ
উনার মজলিসে তাশরীফ নিলেন তখন সমবেত ছাহাবীগণ দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করে অভ্যর্থনা জানিয়ে আসনে বসালেন।
বাস্তবতা ও হাদীছ শরীফ প্রমাণ করে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উক্ত মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে ক্বিয়াম করেছেন। কারণ, বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে “আখিরী রসুল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে স্বশরীরে উপস্থিত হলেন।
কারণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মজলিসে উপস্থিত হতেন তখন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনার সম্মানার্থে ‘ক্বিয়াম’ করতেন। যেমন হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে বসে আমাদেরকে নছীহত বা ওয়ায করছিলেন।যখন তিনি উঠলেন বা দাঁড়ালেন, আমরাও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম,
ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ আমরা উনাকে দেখতে পাচ্ছিলাম।এমনকি উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ঘরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়েই রইলাম। (বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ ছবীহ)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে যে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যেতেন,
তখন তিনি
(হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়ের মুহব্বতে)
দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তাঁর হাতে বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম উনার নিকট যেতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত, মিরকাত, বযলুল মাজহুদ, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ ছবীহ, শরহুত ত্বীবী)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত মুহম্মদ বিন হিলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে,
“সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘর হতে বের হতেন, তখন আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি স্বীয় ঘরে প্রবেশ না করতেন
(আমরা দাঁড়িয়ে থাকতাম)। এ হাদীছ শরীফখানা বাযযার বর্ণনা করেছেন,
যার রাবী অত্যন্ত শক্তিশালী। (বাযযার, মাজমাউল যাওয়ায়েদ, ফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছার)
“বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ইরশাদুস সারী” উনার ৯ম খণ্ড, ১৫৫ পৃষ্ঠায় ছাহীহ সনদে হযরত উসামা ইবনে শারীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীম উনার জন্য দাঁড়িয়ে উনার হস্ত মুবারক চুম্বন দিলাম।
মীলাদ শরীফ-এ যে ক্বিয়াম করা হয় তা শুধু সুন্নতই নয় বরং আদব,
শরাফত ও তা’যীম বা সম্মানার্থেই করা হয়। অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সালাম পেশ করার সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে
সালাম দেয়াই সুন্নত ও আদব। চাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত থাকুন, আর অনুপস্থিত থাকুন। সর্বাবস্থায় দাঁড়িয়ে সালাম দেয়াই সুন্নত, আদব,
শরাফত ও ভদ্রতা।
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
উনার উপস্থিতিতে এবং অনুপস্থিতে ঠিক একই রকম সম্মান করতে হবে। হযরত ক্বাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুপ্রসিদ্ধ কিতাব শিফা শরীফ’-এ বর্ণনা করেছেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ উনার পর উনার ইজ্জত,
সম্মান, মর্যাদা তেমনভাবে অবশ্যকরণীয় কর্তব্য হবে; যেমন উনার যমীনে অবস্থানকালে কর্তব্য ছিল এবং তা করতে হবে উনার ছানা-ছিফত কালে, হাদীছ শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, নাম মুবারক, জীবনী মুবারক আলোচনা কালে এবং উনার পরিবারের অর্থাৎ আহাল ও ইয়ালগণের আচার-ব্যবহার আলোচনার সময়ে। (শিফা শরীফ, ২য় খ-, পৃষ্ঠা ৪০)
হযরত ক্বাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে হযরত আবু ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্যকে উল্লেখ করে লিখেন, “প্রতিটি মু’মিনের জন্যে ওয়াজিব হল যে,
যখনই সে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার ছানা-ছিফত করবে বা তার নিকট বা তার উপস্থিতিতে অথবা তার উপস্থিতিতে আলোচনা করা হবে,
যেন অত্যন্ত বিনয়ী হয়ে যায় এবং নড়া-চড়া বন্ধ করে ভাবমুগ্ধ অবস্থায় চূড়ান্ত আদব সহকারে এমনভানে সম্মান যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বশরীরে তার সম্মখে উপস্থিত হলে করতো এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে যেমন আদব করার নির্দেশ আল্লাহ পাক আমাদেরকে প্রদান করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে আদব প্রদর্শন করতে হবে। (শিফা শরীফ, ২য় খ-, পৃষ্ঠা ৪০)
বর্ণিত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান
হয়
যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার শানে সালাম পেশ করার সময়,-দাঁড়িয়ে যাওয়া বা দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করা ওয়াজিব। যেহেতু সম্মানীকে উনার সামনে যেমন সম্মান করা হয়, উনার আড়ালেও তেমনভাবে সম্মান করতে হয়। শরীয়তের বহুল পরিচিত একটি মাসয়ালাকে এ বিষয়টি সহজভাবে বুঝার জন্যে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা যেতে পারে।
বাইতুল্লাহ শরীফ উনার সামনে অবস্থানকালে যেমন বাইতুল্লাহ শরীফ উনার দিকে সম্মুখ বা পিঠ দিয়ে ইস্তিঞ্জার জন্য বসা নিষেধ। তেমনিভাবে হাজার হাজার মাইল দূর দেশ হতেও ইস্তিঞ্জার সময় বাইতুল্লাহ শরীফ
উনার দিকে সম্মুখ পিঠ দিয়ে বসা নিষেধ।
যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবু আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, “যখন তোমরা ইস্তিঞ্জাখানায় যাবে, তখন ক্বিবলার দিকে তোমাদের সম্মুখ বা পিঠ করবেনা বরং পূর্ব বা পশ্চিম দিকে করে দিও।” হযরত আবু আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমরা যখন শাম দেশে গেলাম, তখন দেখি সেখানে বাথরুমগুলো ক্বিবলামুখী করে তৈরি করা হয়েছে। আমরা ঘুরে বসে কাজ সমাধা করতাম এবং আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতাম। হযরত ছুফিয়ান ইবনে উয়ায়নাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
হ্যাঁ। (মুসলিম, বুখারী, তিরমিযী)
এ প্রসঙ্গে মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর খলীফা মাওলানা শামছুল হক্ব ফরীদপুরী তার ‘তাছাওউফ তত্ত্ব’ নামক কিতাবে ৪১ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছে,“হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম করার সময় বসে বসে সালাম করা শরীফ তবীয়তের লোকের কাছে বড়ই বেয়াদবী লাগে। সেজন্য রওযা শরীফ উনার সামনে নিজেকে হাজির ধ্যান করে খাড়া হয়ে সালাম করাতে কোনই দোষ হতে পারেনা। যেমন মদীনা শরীফ-এ রওযা শরীফ উনার সামনে সালাম করার সময় সকলেই দাঁড়াইয়া সালাম করে থাকেন।”
মাওলানা শামসুল হক ফরীদপুরীর উক্ত বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ শরীফ-এ যে ক্বিয়াম করা হয়, তা মুহব্বত, আদব, শরাফত ও তা’যীমার্থে করা হয়। এখানে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিত হওয়া না হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ উনার কিতাব রদ্দুল মুহতার ও হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ক্বিয়াম তিন প্রকার-
(১)
ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী: এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার ইরশাদ হয়েছে- “তোমরা আজমীদের মত (মাথা নিচু করে নমস্কারের ছূরতে) দাঁড়ায়োনা।” এরূপ ক্বিয়াম শরীয়তে সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম ।
(২)
ক্বিয়ামে হুব্বী: যেমন- হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে আসলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মুহব্বতে) দাঁড়িয়ে যেতেন, এটাকে ক্বিয়ামে হুব্বী বলে।
(৩)
ক্বিয়ামে তা’যীমী: যেমন- হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীমের জন্য দাঁড়াতেন; যা উল্লিখিত হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
মূল কথা হলো- ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী শরীয়তে নাজায়িয, হারাম ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। আর ক্বিয়ামে হুব্বী ও ক্বিয়ামে তা’যীমী শরীয়তে জায়িয ও সুন্নত।
অতএব, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনার উপরোক্ত দলীল-প্রমাণের আলোকেই প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উভয়টিই খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
আর সুন্নতের বিরোধিতা করা প্রকাশ্য কুফরীর শামিল।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন, “বলুন,
আল্লাহ পাক ও রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত বা অনুসরণ করো। অতঃপর যদি তোমরা ফিরে যাও (তবে জেনে রেখ)
নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কাফিরদেরকে পছন্দ করেন না।”(সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৩১)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ না করে বরং উনার বিরোধিতা করবে সেটাকে বিদয়াত, কুসংস্কার, হারাম, শিরক ইত্যাদি বলে অভিহিত করবে তারা মূূলত কাফিরের অন্তর্ভুক্ত।
এ প্রসঙ্গে ছহীহ আবু দাউদ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক
উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতকে ত্যাগ কর তাহলে অবশ্যই তোমরা কাফির হয়ে যাবে। (আবু দাউদ শরীফ)
আর আক্বাঈদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, সুন্নতকে ইহানত বা অবজ্ঞা করা কুফরী।
শরীয়তের মাসয়ালা হলো, কোন মুসলমান কুফরী করলে সে আর মুসলমান থাকে না, মুরতাদ হয়ে যায়। মুরতাদের যিন্দিগীর সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ স্বত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। সে মারা গেলে তার জানাযা,
কাফন, দাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।
No comments:
Post a Comment