সাহরী
রমাদ্বান শরীফ মাসে শেষ রাতের খাবারকে সাহরী বলে। অর্থাৎ ছুবহি ছাদিক্বের পূর্বে রোযা রাখার নিয়তে পানাহার
করাকে সাহরী বলে। সাহরী করা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
রোযার নিয়ত
نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك فرضا لك ياالله فتقبل منى انك انت السميع العليم.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম মিং শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আংতাস সামীউল আলীম।
অর্থ: আয় আল্লাহ পাক! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকালের রমাদ্বান শরীফ-এর ফরয রোযা রাখার নিয়ত করছি।আমার তরফ থেকে আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা , সর্বজ্ঞাত।
মাসআলা: কেউ যদি ছুবহি ছাদিক্বের পূর্বে নিয়ত করতে ভুলে যায় তাহলে তাকে দ্বিপ্রহরের পূর্বে নিয়ত করতে হবে।তখন এভাবে নিয়ত করবে:
نويت ان اصوم اليوم من شهر رمضان المبارك فرضا لك يالله فتقبل منى انك انت السميع العليم.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমাল ইয়াওমা মিন শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফা তাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আংতাস সামীউল আলীম।
সাহরীর সুন্নত আমল: জরুরত আন্দাজ খাওয়া-দাওয়া করার পর বেজোড় সংখ্যক খুরমা-খেজুর খাওয়া খাছ সুন্নত।রাতের শেষভাগে সাহরী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
ইফতার
ইফতার অর্থ ভঙ্গ করা। সন্ধ্যা রাতে তথা মাগরিবের আযানের পর খুরমা-খেজুর, দুধ, শরবত ইত্যাদি দ্বারা পানাহারের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলে।
ইফতার-এর দুআ
اللهم لك صمت و على رزقك افطرت.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু।
অর্থ: আয় আল্লাহ পাক! আমি আপনারই সন্তুষ্টির জন্য রোযা রেখেছি এবং আপনারই দেয়া রিযিক্ব দ্বারা ইফতার
করছি।
করছি।
ইফতার-এর সুন্নত আমল:
খুরমা-খেজুর দ্বারা ইফতার শুরু করা খাছ সুন্নত।
ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা খাছ সুন্নত। হাদীছে কুদসী শরীফ-এ রয়েছে, আল্লাহ পাক তিনি বলেন: “আমার বান্দাদের মধ্যে আমার নিকট অধিকতর প্রিয় ওই ব্যক্তিরাই যারা তাড়াতাড়ি ইফতার করে অর্থাৎ সময়
হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করে।” কিন্তু সময় হয়নি এ অবস্থায় তাড়াতাড়ি করে পানাহার করলে ক্বাযা-কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে।
হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করে।” কিন্তু সময় হয়নি এ অবস্থায় তাড়াতাড়ি করে পানাহার করলে ক্বাযা-কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে।
ইফতার করার পূর্বে তিনবার দুরূদ শরীফ পাঠ করা।
কোন রোযাদারকে ইফতার করানো। এটা অত্যধিক ফযীলতের কারণ।
বিঃ দ্রঃ সাহরী ও ইফতার-এর সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে যেন সময় কম-বেশি না হয়। ঘড়ির সময় হের ফের থাকতে পারে। প্রচলিত ক্যালেণ্ডারে ৩ মিনিট সতর্কতার জন্য ধরা হয়ে থাকে। সেজন্য সাবধানতার নিমিত্তে সাহরী-এর ক্ষেত্রে সুবহি সাদিক হতে ৫ মিনিট কমিয়ে ও ইফতারী- এর ক্ষেত্রে সূর্যাস্ত হতে ৫ মিনিট বাড়িয়ে সময় নির্ধারণ করা বাঞ্চনীয়। সারাদিন প্রায় ১৫ ঘন্টা রোযা রাখার পর ২/১ মিনিট বিলম্বে কি আসে যায়? সাহরী না হয় একটু আগেই
করে নিলেন কিংবা ২ মিনিট পরেই ইফতার করলেন তাতে কোন অসুবিধে নেই। এটা তাক্বওয়ার বর্হিপ্রকাশ পক্ষান্তরে মাত্র ১ মিনিট পরে সাহরী খেলে কিংবা ১ মিনিট পূর্বে ইফতার করলে রোযা নষ্ট
করে নিলেন কিংবা ২ মিনিট পরেই ইফতার করলেন তাতে কোন অসুবিধে নেই। এটা তাক্বওয়ার বর্হিপ্রকাশ পক্ষান্তরে মাত্র ১ মিনিট পরে সাহরী খেলে কিংবা ১ মিনিট পূর্বে ইফতার করলে রোযা নষ্ট
হয়ে যাবে। এবং গাফলতির দ্বারা বা ইচ্ছাকৃত এমনটি হলে ক্বাজা এবং ক্বাফফারা উভয়ই আদায় করতে হবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে “আমার উম্মত ততদিন খায়ের বরকতে থাকবে যতদিন তারা তাড়াতাড়ি ইফতার
করবে।” অর্থাৎ সময়মত ইফতার করবে। তাড়াহুড়ো করে আগে আগে ইফতার করবে না। হাদীস শরীফে তাড়াতাড়ি ইফতার করার ব্যাপারে যে তাগিদ রয়েছে সেটা মূলত ইহুদীদের থেকে পার্থক্য করার
নিমিত্তে বলা হয়েছে। কেননা ইহুদীরা রোযা রেখে ইফতার করে আকাশে তারা দেখে অর্থাৎ সূর্যাস্তের ১ থেকে দেড় ঘন্টা পর, যখন প্রায়
ঈ’শার ওয়াক্ত হয়ে যায়।
রোযা সম্পর্কিত কতিপয় মাসয়ালা-মাসায়িল
রোযা ফরয হওয়ার শর্তাবলী
নিম্নবর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে রোযা ফরয হয়।
১) মুসলমান হওয়া। ২) বালিগ হওয়া। ৩) জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া। ৪) সুস্থ হওয়া। ৫) মুক্বীম হওয়া। অর্থাৎ মুসাফির না হওয়া, কেননা মুসাফিরের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকেনা। তবে মুক্বীম হওয়ার
পর অবশ্যই ক্বাযা আদায় করতে হবে।
রমাদ্বান শরীফের রোযা ফরয হওয়ার পরও যাদের উপর রোযার হুকুম ফরয থাকেনা
১।. মুসাফির এর জন্য রোযা আদায় করা ফরয নয়। তবে আদায় করাই উত্তম। মুক্বীম হওয়ার পর অবশ্যই ক্বাযা আদায়
করতে হবে।
২। অসুস্থ ব্যাক্তির উপর রোযা আদায় করা ফরয নয়। তবে সুস্থ হলে ক্বাযা আদায় করতে হবে। ৩। মহিলাদের মাসিক স্বভাবিক মাজুরতা, সন্তান হওয়ার কারণে মাজুরতার সময় তাদের উপর রোযা ফরয নয় । তবে
উভয় মাজুরতা থেকে পবিত্র হলে ক্বাযা আদায় করতে হবে।
বিঃ দ্রঃ বালিগ না হলেও ছোট ছেলে-মেয়ে যারা রোযা রাখতে পারবে তাদেরকে রোযা রাখিয়ে অভ্যাস করানো পিতা-
মাতার দায়িত্ব-কর্তব্য।
রোযা ভঙ্গ না হওয়ার কারণ সমূহ
নিম্নোক্ত কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না-
১। ভুলক্রমে কোন কিছু পানাহার করলে। অতঃপর শেষ সময় পর্যন্ত পানাহার না করলে।
২। ভুলক্রমে নির্জনবাস করলে।
৩। রোযার মধ্যে দিনে ঘুমালে এবং ঘুমের মধ্যে গোসল ফরয হলে।
৪। আহলিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করার কারণে মনি নির্গত হলে।
৫। তেল মালিশ করলে।
৬। শিঙ্গা লাগালে।
৭। চোখে সুরমা বা ওষুধ দিলে। উল্লেখ্য, ওষুধের স্বাদ গলায় অনুভূত হলে বা সুরমার রঙ থুথুর সাথে দেখা গেলেও রোযা
ভঙ্গ হবে না।
৮। আহলিয়াকে বুছা দিলে।
৯। আপনা আপনি বমি করলে।
১০। রোযাদারের গলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়া গেলে।
১১। মুখে থুথু এলে বারবার না ফেলে গিলে ফেললে।
১২। রোযা অবস্থায় নখ ও চুল কাটলে।
১৩। রোযাদার ব্যক্তি স্বপ্নে কিছু খেলে বা পান করলে।
১৪। রাস্তায় চলাচলের সময় গাড়ির ধোঁয়া, রান্না করার সময় রান্নার ধোঁয়া নাকে প্রবেশ করলে মাজূর বা অক্ষমতার
কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না।
১৫। রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি ওযূও ভঙ্গ হবে না।
রোযা ভঙ্গের কারণসমূহ
নিম্নলিখিত কারণসমূহে রোযা ভঙ্গ হয় এবং তার জন্য শুধু ক্বাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। সেগুলো
হচ্ছে:
১। ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে।
২। আহলিয়াকে বুছা বা স্পর্শ করার কারণে মনি নির্গত হলে।
৩। কোন অখাদ্য বস্তু তথা পাথর, লোহার টুকরো, ফলের আঁটি ইত্যাদি গিলে ফেললে।
৪। স্বাভাবিক স্থান ব্যতীত অন্যস্থানে মেলামেশায় মনি নির্গত হলে।
৫। জোরপূর্বক রোযাদারকে কিছু খাওয়ানো হলে।
৬। ভুলক্রমে কিছু খেতে আরম্ভ করে রোযা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে পুনরায় আহার করলে।
৭। কুলি করার সময় পেটে পানি চলে গেলে।
৮। প্রস্রাব -পায়খানার রাস্তায় ওষুধ বা অন্য কিছু প্রবেশ করালে।
৯। রাত মনে করে ছুবহি ছাদিক্বের পর পানাহার করলে।
১০। সন্ধ্যা মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বেই ইফতার করলে।
১১। মুখে বমি এনে পুনরায় তা পেটে প্রবেশ করালে।
১২। দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্য কণা বের করে খেয়ে ফেললে।
১৩। শরীরের কোন ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগানোর ফলে তা ভেতরে প্রবেশ করলে।
১৪। রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন, ইনসুলিন ইত্যাদি ব্যবহার করলে।
১৫। নাকে বা কানে তেল বা তরল ওষুধ প্রবেশ করালে।
১৬। আগরবাতির ধোঁয়া নাকে প্রবেশ করলে।
১৭। রোযা রেখে পেস্ট, কয়লা, পাউডার, ছাই ইত্যাদি যে কোন প্রকার মাজন দ্বারা দাঁত মাজা মাকরূহ। এগুলোর
সামান্য অংশও যদি গলায় প্রবেশ করে তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এছাড়া সর্বাবস্থায় গুল ব্যবহার করা হারাম।
কারণ গুল মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত।
১৮। রাত্রি বাকি আছে মনে করে ছুবহি ছাদিক্বের পর পানাহার করলে বা নির্জনবাস করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হলে এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়
নিম্নলিখিত কাজসমূহ দ্বারা রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব হয়। যথা:
১। ইচ্ছাকৃত নির্জনবাস করলে।
২। স্বেচ্ছায় পানাহার করলে।
৩। স্বেচ্ছায় ওষুধ পান করলে।
৪। শিঙ্গা লাগানোর পর রোযা নষ্ট হয়েছে মনে করে পানাহার করলে।
৫। ধূমপান করলে।
কাফফারা আদায় করার নিয়ম
কাফফারা হচ্ছে দু’মাস ধারাবাহিক রোযা রাখা অথবা ষাটজন মিসকীনকে দু’বেলা তৃপ্তিসহকারে খাদ্য খাওয়ানো অথবা
কোন গোলাম আযাদ করা।
সন্তানসম্ভবা ও দুগ্ধদায়িনীর রোযা রাখার হুকুম
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী যদি আশঙ্কাবোধ করে যে, রোযা রাখলে যথাক্রমে তাদের গর্ভস্থ ভ্রুণ ও দুগ্ধপানকারী সন্তান
ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাহলে তাদের জন্য রোযা না রাখা ইখতিয়ার রয়েছে। তবে পরে এর ক্বাযা আদায় করে নিতে হবে।
অতিরিক্ত ক্কাফফারা বা ফিদিয়া প্রদান করতে হবে না।
অতিশয় বৃদ্ধের রোযা রাখার হুকুম
অতিশয় বৃদ্ধ যে রোযা রাখতে অক্ষম তার জন্য অনুমতি রয়েছে যে, সে রোযা ভঙ্গ করতে পারবে এবং প্রতিদিনের
রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে তৃপ্তি সহকারে দু’বেলা খাওয়াবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি
ইরশাদ ফরমান:
وعلى الذين يطيقونه فدية طعام مسكين
অর্থ: “যাদের রোযা রাখতে অতিশয় কষ্ট হয় তাদের কর্তব্য হলো এর পরিবর্তে ফিদিয়া তথা একজন অভাবগ্রস্তকে
(মিসকীন) খাদ্য দান করা।”(সূরা বাক্বারা)
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত তথা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের মতানুসারে তারাবীহ নামায বিশ
রাকায়াত। যা স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং
উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আর পরবর্তীতে সকল অনুসরণীয় হযরত ইমাম,
মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আমল ও ক্বওল শরীফ উভয়ের দ্বারা প্রমাণিত। অতএব,
তারাবীহ-এর নামায বিশ রাকায়াতই পড়তে হবে। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর ফতওয়া। এক রাকায়াতও
কম পড়া যাবে না। বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামাযের বিরুদ্ধে যারা ফতওয়া দেয় তারা গুমরাহ ও বাতিল ৭২ ফিরক্বার
অন্তর্ভুক্ত।
ই’তিকাফ
ই’তিকাফ-এর ফযীলত
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি রমাদ্বান শরীফ-এর শেষ দশ দিন (সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া) ই’তিকাফ করবে
, আল্লাহ পাক তাকে দুটি হজ্জ ও দুটি ওমরাহ করার সমতুল্য ছাওয়াব দান করবেন। আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ
পাক তার পিছনের গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। আরো বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি একদিন ই’তিকাফ করবে, আল্লাহ পাক
তাকে জাহান্নাম থেকে তিন খন্দক দূরে রাখবেন। প্রতি খন্দকের দূরত্ব পাঁচশত বছরের রাস্তা। সুবহানাল্লাহ!
ই’তিকাফ-এর হুকুম
ই’তিকাফ-এর অর্থ হলো- গুনাহ হতে বেঁচে থাকা, অবস্থান করা, নিজেকে কোন স্থানে আবদ্ধ রাখা, কোণায় অবস্থান
করা ইত্যাদি। শরীয়তের পরিভাষায়- রমাদ্বান শরীফ-এর শেষ দশদিন (অর্থাৎ বিশ তারিখ বা’দ আছর একুশ তারিখ মাগরীবের পূর্ব হতে ঈদের বা শাওওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত) দুনিয়াবী যাবতীয় কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন হতে ভিন্ন হয়ে, আলাদাভাবে পুরুষের জন্য জামে মসজিদে ও মহিলাদের জন্য ঘরে ইবাদত কার্যে মশগুল থাকাকে ই’তিকাফ বলে। এক দিন, তিন দিন, পাঁচ দিন এবং সাত দিন ই’তিকাফ করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া আদায় হবে না। অর্থাৎ ৩০শে রমাদ্বান-এর ১০ দিন কিংবা ২৯ দিনে রমাদ্বান শরীফ মাস হলে ৯ দিনের এক মিনিট কম হলেও সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া আদায় হবে না। ই’তিকাফ তিন প্রকার- ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ও নফল। যিনি ই’তিকাফ করেন তাকে মু’তাকিফ বলা হয়। প্রত্যেক মসজিদে এলাকার তরফ হতে একজন মু’তাকিফ হলেই সকলের আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কেউই ই’তিকাফ না করে, তাহলে সকলেরই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরকের গুনাহ হবে।
ই’তিকাফের র্শত
ই’তিকাফ-এর শর্ত তিনটি। যথা:
পুরুষের জন্য মসজিদে, মহিলাদের জন্য ঘরের মধ্যে ই’তিকাফ করা।
ই’তিকাফ-এর জন্য নিয়ত করা।
রোযা রাখা।
বিঃ দ্রঃ ই’তিকাফ-এর জন্য বালিগ হওয়া শর্ত নয়।
ই’তিকাফকারীর জন্য নিষিদ্ধ কাজ
ই’তিকাফ অবস্থায় জাগতিক ফায়দাদায়ক কাজ করা অবস্থাভেদে হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী হবে।
মু’তাকিফ ব্যক্তি মসজিদে এসে কোন বেহুদা কথা বা কাজ করবে না বা চুপ করে বসে থাকবে না। বরং ঘুম ব্যতীত
বাকি সময় ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকতে হবে। যেমন- নফল নামায, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকির-ফিকির করা, ইলম অর্জন করা ইত্যাদি। ই’তিকাফকারী বিনা প্রয়োজনে এক সেকেন্ডের জন্য মসজিদের বাহিরে অবস্থান করলে ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। নির্জনবাস করা। অন্যান্য অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন: অযথা গল্প-গুজব, কথা-বার্তা না বলা। পবিত্র শবে ক্বদর
রমাদ্বান শরীফের শেষ দশদিনের মধ্যে বিজোড় রাত্রিতে পবি্ত্র শবে ক্বদর রয়েছে। অর্থাৎ ২১, ২৩.২৫,২৭, ২৯ রমাদ্বান
কিংবা রমাদ্বান শরীফের শেষ রাত্রিতে পবিত্র শবে ক্বদর রয়েছে। ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ২৭
রমাদ্বান শরীফে পবিত্র শবে ক্বদর হওয়ার অধিক সম্ভবনার কথা উল্লেখ করেছেন বিধায় আমাদের উপমহাদেশে বিশেষ
করে আমরা যারা হানাফী মাযহাবের অনুসারী উক্ত দিনটি বিশেষ তাতপর্যের সাথে পালন করে থাকি। তবে হাদীস
শরীফে
উল্লেখিত প্রতিটি বিজোড় রাত্রিতেই কম বেশী ইবাদত বন্দেগী করা বাঞ্ছনীয়। আর এ কারনেই সয়ং নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্রাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিক্বাফ করে পবিত্র শবে ক্বদর তালাশ করা এবং পবিত্র শবে
ক্বদরের রাত্রিতে জাগ্রত থেকে বিভিন্ন প্রকারের ইবাদত-বন্দেগী করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তষ্টি
রেজামন্দি হাসিল করার উত্তম তারতীব শিক্ষা দিয়েছেন।
* ইনজেকশন, স্যালাইন বা ইনসুলিন *রোযা অবস্থায় যে কোনো ধরনের ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনসুলিন বা
ইনহেলার নেয়া হোক না কেন তাতে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে
আ’যম, আওলাদুর রসূল, হাবীবুল্লাহ, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি
বলেন, রমযান মাসের ৩০ দিন বা ২৯ দিন (চাঁদের হিসাব মুতাবিক) রোযা রাখা ফরয। রোযা অস্বীকারকারী কাফির
এবং তরক করলে কবীরা গুনাহ হবে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, শরীয়ত
সম্পর্কিত সকল বিষয়ের প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করা যেমন ফরয তদ্রুপ রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন নিলে
রোযা ভঙ্গ হবে কিনা এ সম্পর্কিত ইলম অর্জন করাও ফরয। সুতরাং যারা না জেনে রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেবে,
ইনসুলিন গ্রহণ করবে তারা এ সম্পর্কিত ইলম অর্জন না করার কারণে ফরয তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, রোগ
নিরাময়ের জন্যে রোগীরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওষুধ সেবন করে থাকে; এর মধ্যে ইনজেকশন ও ইনসুলিন গ্রহণও একটি
পদ্ধতি।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ওষুধ মূলত রক্তস্রোতের মাধ্যমেই শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ রক্ত হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে খাদ্য, অক্সিজেন, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান টিস্যুসমূহে পৌঁছে এবং বর্জ্য দ্রব্যসমূহ বহন করে নিয়ে আসে। এটা এক ধরনের সংযোগ কলা। সুতরাং ওষুধ শরীরের সর্বাংশে ছড়ায় অর্থাৎ মগজে পৌঁছে, একই কায়দায় সব ধরনের
স্যালাইনই মগজে পৌঁছে।
এ প্রসঙ্গে ‘মাবসূত’ কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, “ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বলেন, রোযা ভঙ্গের কারণ হলো- রোযা ভঙ্গকারী কোনো কিছু ভিতরে প্রবেশ করা, সুতরাং পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য।”
আর ফতহুল ক্বাদীর ২য় জিলদ ২৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে “ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য।”
তিনি বলেন, অতএব, মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করুক অথবা মূল রাস্তা ব্যতীত অন্য যে কোনো স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক
না কেন, যদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে রোযা অবশ্যই ভঙ্গ হয়ে যাবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে ইনজেকশনের
দ্বারা প্রবেশকৃত ওষুধ পাকস্থলী ও মগজে পৌঁছে থাকে। আর শরীয়তের বিধান হলো, পাকস্থলী বা মগজে কিছু প্রবেশ
করলেই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে; তা যেভাবে এবং যে স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন। এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার
নির্ভরযোগ্য। কিতাবসমূহের অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে। যেমন,
হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়..তাহলে
রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ
হবে।” “বাহরুর রায়েক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়... তাহলে
রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ
হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।” “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “এবং
যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়.... তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবেও উল্লেখ আছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, কম ইলম
ও কম সমঝের কারণে কোনো কোনো মৌলভী সাহেবরা বলে থাকে যে, উল্লিখিত ফিক্বাহর কিতাবসমূহে যে ‘হুকনা’ বা ‘
ইহতাক্বানা’ শব্দ উল্লেখ আছে তার অর্থ ইনজেকশন নয়, বরং তার অর্থ হলো ‘ডুশ বা সাপোজিটর’; যা পায়ুপথে দেয়া হয়।
তাদের উক্ত বক্তব্য চরম অজ্ঞতা, মূর্খতা, প্রতারণা ও গুমরাহীমূলক;যা কাট্টা কুফরীর শামিল। কারণ সমস্ত আরবী
কিতাব ও অভিধানগ্রন্থে ‘হুকনা’ বা ‘ইহতাক্বানা’ শব্দের অর্থ সরাসরি ইনজেকশন বা সিরিঞ্জ বলে উল্লেখ আছে। যেমন,
আরবী-উর্দু অভিধান ‘কামুস আল জাদীদ’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ‘হুকনাতুন- অর্থ ইনজেকশন, সিরিঞ্জ।’ ‘আধুনিক আরবী-
বাংলা’ অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ‘ইহতাক্বানুন’ অর্থ ইনজেকশন এবং সরাসরি ইহতাক্বানা ‘ইনজেকশন নেয়া’ শব্দটিও
উল্লেখ রয়েছে। এমনিভাবে সমস্ত লোগাত বা অভিধানগ্রন্থে ‘ইহতাক্বানা’ শব্দের অর্থ ইনজেকশন বলে উল্লেখ রয়েছে।
তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস থেকে একটি দলীলও পেশ করতে পারবে
না। তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যে সকল দেওবন্দী কিতাবের নাম উল্লেখ করছে, যেমন ইমদাদুল ফতওয়া, আপকে
মাসায়িল, আহসানুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে রহিমিয়া, ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া- এসকল কিতাবগুলো দেওবন্দীদের নিজস্ব
লেখা; যা সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।
তাছাড়া তাদের উক্ত কিতাবের অনেক বক্তব্যই বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য কিতাবের বিপরীত। অর্থাৎ যে সমস্ত কিতাব
সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয় এবং বিশ্বখ্যাত সে সমস্ত ফিক্বাহ-এর কিতাব, যেমন হিদায়া, বাহরুর রায়িক্ব,
ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে শামী, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি সর্বজনমান্য কিতাবের বক্তব্যের বিপরীত হওয়ায় তা
সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, রোযা
অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন নেয়া হারাম ও রোযা ভঙ্গের কারণ এবং এর সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২১ ও ২২তম সংখ্যায়
আশরাফ আলী থানভীর ‘ইমদাদুল ফতওয়ায়’ ইনজেকশন সম্পর্কিত প্রদত্ত ফতওয়াটির ভুল খন্ডন করতঃ বিস্তারিত
দলীল-আদিল্লাহ উল্লেখ করা হয়েছে; যা হক্ব তালাশীদের জন্য যথেষ্ট।
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর আলোকে পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ-এর ফাযায়িল-ফযীলত
মাহে রমাদ্বান মাসটি উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য ফযীলত হাছিলের মাস। মহান আল্লাহ
পাক তিনি ইরশাদ ফরমান-
يايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون .
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে; যেরূপ ফরয করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী
উম্মতদের উপর। এর মাধ্যমে অবশ্যই তোমরা তাক্বওয়া হাছিল করতে পারবে।” (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ১৮৩)
স্মরণীয়, ‘তাক্বওয়া’ সমস্ত আমলের মূল। তাই আল্লাহ পাক তাক্বওয়া হাছিল করার জন্য বান্দাদের আদেশ করেছেন-
تزودوا فان خير الزاد التقوى
অর্থ: “তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া। (সূরা বাক্বারা শরীফ : আয়াত শরীফ ১৯৭)
‘তাক্বওয়া’ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহ ভীতি। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে উনার নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ হতে সম্পূর্ণরূপে
বিরত থাকার নাম তাক্বওয়া। আর রমাদ্বান শরীফ মাসের রোযার দ্বারা সেই তাক্বওয়া হাছিল হয়ে থাকে। এ মর্মে হাদীছ
শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আদম সন্তানের প্রত্যেক নেক আমল দশ গুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়ে থাকে।
আল্লাহ পাক বলেন, রোযা ব্যতীত। কেননা, রোযা একমাত্র আমারই জন্য রাখা হয় এবং তার প্রতিফল আমি নিজেই (যত
ইচ্ছা) দান করব। সে (বান্দা) আমারই জন্য আপন প্রবৃত্তি ও খাদ্য-পানীয় হতে বিরত থাকে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ নামায, হজ্জ, যাকাত, ফিতরা, কুরবানী ইত্যাদি অনেকে লোক দেখানোর জন্য করতে পারে। কিন্তু রোযা কেউ
লোক দেখানোর জন্য করতে পারেনা। কেননা গোপনে পানাহারের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একমাত্র আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে সে পানাহার থেকে বিরত থাকে।
রমাদ্বান শরীফ-এর ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে রমাদ্বান
শরীফ-এর রোযা রাখবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে রমাদ্বান শরীফ-
এর রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে আর যে ব্যক্তি ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে ক্বদর রাত্রি
ইবাদতে কাটাবে, তারও পূর্বকৃত গুণাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
হাদীছে শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি রমাদ্বান শরীফ এ শুরু হতে শেষ পর্যন্ত রোযা রাখবে, সে ওই দিনের
মত নিষ্পাপ হবে যেদিন তার মা তাকে (নিষ্পাপরূপে) জন্মদান করেছেন।” (মুসলিম শরীফ)
অপর এক হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “রমাদ্বান শরীফ-এর প্রত্যেক রাত্রির শেষভাগে প্রত্যেক রোযাদার উম্মতে
হাবীবীকে ক্ষমা করা হবে।” (আহমদ)
অপর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “রোযাদারের ঘুম ইবাদতের শামিল, রোযাদারের নিশ্চুপ থাকা তাসবীহ পাঠের
মধ্যে পরিগণিত, রোযাদারের দুআ নির্ঘাত কবুলযোগ্য এবং রোযাদারের আমলের ছাওয়াব দ্বিগুণ হতে বহুগুণে বাড়িয়ে
দেয়া হয়। ” (কানযুল উম্মাল)
অতএব, যে ব্যক্তি এ মাসের হক্ব আদায় করবে সে আল্লাহ পাক উনার রহমত, মাগফিরাত ও নাযাত হাছিল করবে। আর
যে ব্যক্তি হক্ব আদায় করবে না সে কোনটিই হাছিল করতে পারবে না। উপরন্তু তার জন্য কঠিন পরিণতি রয়েছে। যে
সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “হালাকি বা ধ্বংস ওই ব্যক্তির
জন্য যে রমাদ্বান শরীফ-এর মাস পেল অথচ সে তার গুনাহখতা ক্ষমা করাতে পারলোনা।” (আহমদ)
আয় আল্লাহ পাক! আমাদের সকলকে মাহে রমাদ্বান শরীফ-এর যথাযথ হক্ব আদায় করতঃ তার রহমত, বরকত, সাকীনা,
মাগফিরাত, নাজাতের পরিপূর্ণ হিস্যাহ দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন!
|
No comments:
Post a Comment