আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ্। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুন। এখানে রয়েছে ইসলামী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জানা অত্যাবশ্যক।***
যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা সহ অনলাইনে ফ্রি ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সুযোগ ***
ডাঃ আহমদ ইমতিয়াজ ডি.এইচ.এম.এস, বি.এইচ.এম.সি (ঢাকা) মোবাইল - 01914440430 ই-মেইলঃ drahmadimtiaj@gmail.com ***

উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছফিয়াহ আলাইহাস সালাম


পরিচিতি মুবারক ও নসবনামা:

ত্বহিরা, ত্বাইয়্যিবাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন হযরত ছফিয়াহ আলাইহাস সালাম। তিনি তৎকালীন আহলে কিতাবধারী ইয়াহুদী সম্প্রদায়ভূক্ত ছিলেন। উনার পিতা হুয়াই বিন আখতাব, ইয়াহুদী বনু নাদ্বীর গোত্রের সর্দার ছিলেন, যিনি জলিলুল ক্বদর নবী হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভাই হযরত হারুন ইবনে ইমরান আলাইহিস সালাম উনার অধঃস্তন পুরুষ। উনার নসবনামা হচ্ছেন- হযরত ছফিয়াহ বিনতে হুয়াই আলাইহিস সালাম ইবনে আখত্বব আলাইহিস সালাম ইবনে সাঈদ আলাইহিস সালাম ইবনে আমির আলাইহিস সালাম ইবনে ওবাইদ আলাইহিস সালাম ইবনে কা’ব ইবনুল খাযরাজ আলাইহিস সালাম ইবনে আবু হাবীব আলাইহিস সালাম ইবনে নুছাইর আলাইহিস সালাম ইবনে নাহহাম আলাইহিস সালাম ইবনে মাইখুম আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার মাতার নাম হযরত বারা বিনতে সামাওয়াল আলাইহাস সালাম। তিনি ছিলেন ইয়াহুদীদের মশহুর খান্দান বনু কুরাইজা গোত্রের মহিলা। এই হিসাবে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার পিতৃকুল বনু নাদ্বীর এবং মাতৃকুল বনু কুরাইজার ইহুদীদের এক বংশে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার পিতা ও দাদা উভয়ই ছিলেন জাতির সম্ভ্রান্ত এবং সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। আর এ কারণে বনী ইসরাঈলের সকল আরবীয় গোত্রের মধ্যে উনাকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হতো। উনার পিতা হুয়াই বিন আখত্ববকে বেমেছাল সম্মান করা হতো। জাতির সব লোক বিনা দ্বিধায় উনার নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব মেনে নিত। উনার মাতা হযরত বাররা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন হযরত সামাওয়াল আলাইহিস সালাম উনার কন্যা। বীরত্বের জন্য তিনি গোটা জাযিরাতুল আরবে বিখ্যাত ছিলেন। মোটকথা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার নসবনামা এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

বিলাদত:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আ’শিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের ৩য় বৎসর পবিত্র ২৫শে রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল আহাদ বা রোববার পবিত্র মদীনা শরীফে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! 

শৈশবকাল মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। কাজেই উনার সম্মানিত শৈশবকাল পবিত্র মদীনা শরীফেই অতিবাহিত হয়। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার পিতা ছিলেন ইয়াহুদী আলিমদের সাইয়্যিদ, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভাই, নবী হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উনার বংশধর। কাজেই তিনি ও উনার পরিবার হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দ্বীন ও তাওরাত শরীফ উনাদের উপর দায়িম-ক্বায়িম ছিলেন। তিনি উনার শৈশবকাল সম্পর্কে বলেন-

كنت احب ولد أبى إليه و إلى عمى أبى ياسر، لم ألقهما قط مع ولدهما إلا أخذانى دونه -

অর্থ: আমি ছিলাম আমার পিতার সর্বাধিক প্রিয় আওলাদ এবং আমার চাচা আবু ইয়াসিরের মুহব্বতের পাত্র। উনারা আমাকে উনাদের অন্যান্য সন্তানদের মাঝে একা রেখে যেতেন না। 
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার অন্যান্য খুছুছিয়ত মুবারকের কারণে উনার পিতা ও চাচা সকলেই উনাকে সর্বাধিক মুহব্বত করতেন এবং উনাকে সব সময় নজরে রাখতেন, যেন কেউ কখনো উনার শান মুবারকে ত্রুটি করতে না পারে। সুবহানাল্লাহ!

শাদী মুবারক:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীমা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে উনার দু’টি শাদী মুবারক হয়েছিল। উনার শাদি মুবারক সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ আছে-

زوجها قبل إسلامها سلامه بن مكشوح القرظي، وقيل سلام بن مشكم، فارس قومها ومن كبار شعرائهم، ثم تزوّجها كنانة بن أبي الحقيق، وقٌتل كنانة يوم خيبر،

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কবুল করার পূর্বে বনু কুরাইজা গোত্রের সালামাহ ইবনে মাকশুহ বা সালাম ইবনে মিশকাম শাদী করে। সে তার গোত্রের বড় বীর ও বড় কবিদের একজন ছিল। সালাম ইবনে মিশকামের সাথে জুদায়ির পর কিননাহ ইবনে আবিল হুকাইকের সাথে উনার শাদী হয়। কিনানাহ খায়বরের জিহাদে নিহত হয়। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক অল্প থাকা অবস্থাতেই উনার প্রথম শাদী অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে বনু কুরাইজার যোদ্ধা ও কবি সালাম ইবনে মিশকামের সাথে উনার শাদী হয়। কিন্তু সে উনার খেদমতে অযোগ্য প্রমাণিত হয় এবং উনার সাথে তার জুদায়ী হয়ে যায়। হিজরী ৩য় সনে উহুদের জিহাদের পর বিশ্বাস ঘাতকতার অপরাধে বনু কুরাইজাকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে নির্বাসিত করা হলে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার পিতার সাথে খায়বরে গমন করেন এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭ম হিজরীর শুরুতে খায়বর অবরোধের কিছু দিন পূর্বে বনু নাদ্বীর গোত্রের নেতা ও যোদ্ধা কিনানাহ ইবনে আবিল হুকাইকের সাথে উনার দ্বিতীয় শাদী অনুষ্ঠিত হয়। কিনানা ইবনে আবিল হুকাইক খায়বরের বিখ্যাত দুর্গ কামুসের নেতা ছিল, সে খায়বরের জিহাদে নিহত হয়।
(যারক্বানী, সিয়ারু আলামিন নুবালা)। 

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবাতুল আযীম শরীফ:
হিজরী ৭ম সনে খায়বর বিজয়ের পরে যখন যুদ্ধ বন্দিনীগণকে একত্রিত করা হলো, হযরত দাহিয়াতুল কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এসে বললেন: ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যুদ্ধ বন্দিনীগণ হতে আমাকে একজন দান করুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন: আপনি যে কোন একজন নিয়ে যেতে পারেন। তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনাকে নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা এতে আপত্তি উত্থাপন করে বললেন: তিনি বংশগতভাবে নবুয়তী খান্দানের এবং বনু কুরাইজা ও বনু নাদ্বিরের সর্দারের কন্যা ও আহলিয়া, কাজেই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ভিন্ন অন্য কেউ উনাকে গ্রহণ করা ঠিক হবে না। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজমা এবং অনুরোধ অনুযায়ী হযরত দাহিয়াতুল কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে অন্য যুদ্ধবন্দিনী দেয়া হয়। এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করে দেয়ার পর উনার সাথে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
(ইছাবা, আছাহহুস সিয়ার)।

হিজরী ৭ম সনের ২৫ মুহররমুল হারাম শরীফ, খায়বর থেকে ফেরার পথে পবিত্র মদীনা শরীফ অভিমূখে রওয়ানা হলে ছহবা নামক স্থানে এই সম্মানিত নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় । এখানে ওয়ালিমা মুবারকও সম্পন্ন হয়। ছহবা নামক স্থানে আগমনকালে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনাকে নিজ উটের পিঠে বসান আর নিজের জুব্বা মুবারক দিয়ে উনাকে ছায়া দেন, যাতে লোকেরা জানতে পারে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনিও হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি হিজরী ৫০ সনের ২৩ শে মাহে রমাদ্বান শরীফ, জুমুয়া বার ৬০ বৎসর বয়স মুবারকে পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফে উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার দাফন মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
(আছাহহুস সিয়ার, যারক্বানী)। 

বেমেছাল ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
মহাপবিত্র আহলু বাইত শরীফ উনাদের মর্যাদা মর্তবার দিক থেকে সর্বপ্রথম হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত আব্বা আলাইহিস সালাম এবং মহাসম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম। উনারা হচ্ছেন সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ উনাদের মূল। অতঃপর হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবা। অতঃপর হযরত আবনাউ রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এবং বানাতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মর্যাদা এবং অতঃপর অন্যান্য আওলাদে রসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্তবা-মর্যাদা। সামগ্রিকভাবে সকল উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অপরিসীম মর্যাদা মর্তবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম মজীদে ইরশাদ মুবারকে করেছেন:

لستن كاحد من النساء -

অর্থাৎ উনারা অন্য কোন নারীর মত নন।

সুরা আহযাবের ৬নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে উম্মাহাতুল মু’মিনীন বলে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে:

ألنَّبِيُّ أوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أنْفُسِهِمْ وَ أزْوَاجُهُ أمُّهَاتُهُمْ

নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈমানদারগণের নিকট উনাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। আর উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনগণের মাতা। 
মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পবিত্র আয়াত শরীফে উনাদেরকে أمَّهَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ (মু’মিনগণের মাতা) এই সম্মানিত লক্বব মুবারকে উল্লেখ করেছেন। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মর্ম থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ তিনি ব্যতীত অন্যান্য সকল মু’মিন অর্থাৎ হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন, এখন আছেন এবং ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন উনাদের সকলেরই মহা সম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবা কত যে বেমেছাল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার ফাযায়েল-ফযিলত মুবারক সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ আছে-

كانت حضرت صفيه عليها السلام شريفة عاقله، ذات حسب و جمال، و دين و تقوى، و ذات حلم و وقار - 

অর্থ: সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের শরীফ, সর্বাধিক সমঝদার, সম্মানিত নসব মুবারক উনার অধিকারিণী, অত্যন্ত ধৈর্যশীলা ও ইবাদতগুজার। সুবহানাল্লাহ! তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, তাক্বওয়া পরহেজগারির অধিকারিণী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! 

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সম্বোধন করে ইরশাদ মুবারক করেছিলেন-

إنّكِ لإبنَةَ نبئٍ، و إن عمَّكِ لنبئٌ، و إنكِ لتحتَ نبئٍّ، فَفِيْمَ تفخَّرَ عليكِ - 

অর্থ: নিশ্চয়ই আপনার সম্মানিত পূর্ব-পুরুষ পিতা একজন সম্মানিত নবী আলাইহিস সালাম (অর্থাৎ হযরত হারুন আলাইহিস সালাম), আপনার সম্মানিত পূর্ব-পুরুষ চাচাও একজন সম্মানিত নবী আলাইহিস সালাম (অর্থাৎ হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম)। আপনার মহাসম্মানিত আহাল তিনিও একজন সম্মানিত নবী আলাইহিস সালাম (অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তাই অন্যান্যরা কি নিয়ে আপনার সাথে ফখর করবে? 

অর্থাৎ মহাসম্মানিত তিনজন নবী ও রসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার খাছ নিসবত মুবারক রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

খয়বরের জিহাদের পূর্বে তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, উনার কক্ষে চন্দ্র উদিত হয়েছে। তিনি এই স্বপ্নের কথা উনার মাতাকে জানালেন। ইহা শুনে উনার মাতা উনার মুখে খুব জোরে চপেটাঘাত করল, যাতে উনার চেহারা মুবারকে দাগ পড়ে যায় এবং বলল: আপনি আরবের বাদশাহর ক্ষমতার নীচে আপনার গর্দান প্রসারিত করে দিবেন। যখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হলো উনার পবিত্র চেহারা মুবারকে উক্ত দাগ দেখে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ বিষয়ে বিবরণ দান করেন । সুবহানাল্লাহ!
(ইছাবা)

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন,উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন খুবই দৃঢ় চিত্তের অধিকারিনী, জীবনে কখনও ধৈর্যহারা হননি। ইহুদীদের জন্য খায়বরের জিহাদ ধ্বংসকর প্রমাণিত হয়। এই জিহাদের ফলে তাদের সকল আশা-আকাঙ্খা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এই জিহাদে তাদের নাম করা সর্দারগণ মারা যায়। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার পিতা ও ভাইও এদের মধ্যে ছিলো। কিন্তু এদের জন্য জীবনে কখনও উনাকে দুঃখ ও শোক প্রকাশ করতে কেউ দেখেনি। এ কারণে খায়বরবাসিরা উনাকে বিশেষ মর্যাদা দিতো। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরা আলাইহাস সালাম উনার প্রতি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক ছিল অনন্য ও বেমেছাল। তিনি একবার সফরে ছিলেন। অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও সঙ্গে ছিলেন। ঘটনাক্রমে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরা আলাইহাস সালাম উনার সওয়ারী উট অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি খুব চিন্তিত হলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানতে পেরে উনার নিকট গমন করলেন এবং আপন হস্ত মুবারক দ্বারা উনার চোখের পানি মুবুারক মুছে দেন। সুবহানাল্লাহ! 

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরা আলাইহাস সালাম তিনিও নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অপরিসীম মুহব্বত মুবারক করতেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন অন্তিম মারিদ্বী শানে শায়িত তখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরা আলাইহাস সালাম তিনি ক্রন্দন করে বললেন: ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সমস্ত কষ্ট যদি আমার উপর আপতিত হতো! অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ ইহা শুনে আশ্চর্যান্বিত হলেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন: মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তিনি সত্য বলেছেন (ইছাবা)। সুবহানাল্লাহ!

উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত দানশীলা ছিলেন। উনার একটিমাত্র বাড়ী ছিল যা তিনি উনার দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারকে অবস্থান মুবারক করাকালীন দান করে দেন (তাবাকাত)। 

উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম যখন প্রথমে পবিত্র আহলু বাইত শরীফে তাশরীফ মুবারক আনয়ন করেন, উনার বেশ কিছু স্বর্ণের অলংকার অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুর রাবিয়া যাহরা আলাইহাস সালাম উনাদেরকে হাদিয়া হিসাবে দিয়ে দেন (যারক্বানী)। সুবহানাল্লাহ!
শত্রুরা যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম গৃহ অবরোধ করে এবং খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরহ আলাইহাস সালাম তিনি কিছু খাদ্য নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার গৃহের দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু শত্রুরা উনাকে বাধা দান করে। অতঃপর তিনি ইমামুছ ছানি আলাইহিস সালাম উনাকে দিয়ে এই খাদ্য দ্রব্যগুলি সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট পৌঁছাতে সমর্থ্য হন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারক আমলে একবার সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার এক অপপ্রচারকারী বাঁদী হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট মিথ্যাভাবে বলে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি ইয়াহুদীদের বড় দিন “শনিবার” পালন করেন এবং ইয়াহুদীদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করেন। এ বিষয়ে উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন যে, যেদিন আমি সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করেছি, সেদিন থেকে মহান আল্লাহ পাক শনিবারের পরিবর্তে উত্তম দিন জুমুয়াবার আমাকে দান করেছেন, সুতরাং শনিবার পালন করার কোন অর্থই হয় না। আর ইয়াহুদিদের মধ্যে আমার রক্ত সম্পর্ক রয়েছে, সেজন্য আমি “ছিলাহ রেহেম” রক্ত সম্পর্ক রক্ষা করে থাকি, যা শরীয়তসম্মত। অতঃপর তিনি উনার বাঁদীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে কিসে প্ররোচিত করল, আমার সম্পর্কে এসব কথা বলতে? বাঁদী উত্তর দিল: শয়তান। অর্থাৎ শয়তানী ওয়াসওয়াসা বশত সে এসব কথা বলেছে। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন: ঠিক আছে, তোমাকে আমি আযাদ করে দিলাম। অর্থাৎ তিনি বাঁদীকে কোন শাস্তি দিলেন না বা তিরষ্কারও করলেন না, অর্থের বিনিময়ে বিক্রয়ও করলেন না, বরং তাকে আযাদ করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (যারক্বানী) 

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন,উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার পরিত্যক্ত সম্পদের এক তৃতীয়াংশ উনার বোনের ছেলের জন্য অসীয়ত মুবারক করেছিলেন, বোনের ছেলে তখনও ইয়াহুদি ছিল। উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে লোকেরা উনার অসীয়ত মুবারক পূর্ণ করতে দ্বিধা করছিলেন। কিন্তু সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার নির্দেশে উক্ত অসীয়ত মুবারক পূর্ণ করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
(তাবাক্বাত)

অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ন্যায় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরা আলাইহাস সালাম ছিলেন ইলম ও মা’রিফাতের কেন্দ্র। বিভিন্ন মহিলারা উনার নিকট বিভিন্ন বিষয়ে জানার জন্য প্রশ্ন করত, তিনি সে বিষয়ে তাদেরকে তালিম মুবারক দান করতেন। হযরত ছুহায়রা রহমতুল্লাহি আলাইহা নামে এক তাবেয়ী মহিলা বলেন: আমি একবার হজ্জ হতে প্রত্যাবর্তন করে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা, হযরত আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাক্ষাত করতে গেলাম। আমি দেখলাম বহু সংখ্যক মহিলা উনার নিকটে বসা। এমনকি সুদুর কূফা নগরী হতেও অনেক মহিলা এসেছেন। তারা উনাকে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করছিলেন এবং তিনি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। হযরত ছুহায়রা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এই একই উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (মসনদে আহমদ)।

মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হিসাব মতে উনার কাছ থেকে ১০টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা পেয়েছেন। ইহা রাবীদের বর্ণনা অনুযায়ী উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা, নতুবা উনাদের চাল চলন, আচার ব্যবহার সবই পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার অন্তর্ভূক্ত। বহু দূর দুরান্তর থেকে অনেক মহিলা তা’লীম গ্রহণ করার জন্য উনার নিকট আগমন করতেন। হিজরী ৭ম সনে খায়বর বিজয়ের পরে তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্তর্ভূক্ত হন। দেখা যায় হিজরী ৫০ সনে তিনি উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করা পর্যন্ত প্রায় ৪৩ বছর উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে তিনি সকল মহিলাদের তা’লীম তালক্বীনে ব্যাপৃত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

সূত্র: উসুদুল গবা, ইছাবা, যারকানী, তাবাকাত, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান 

No comments:

Post a Comment