হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর বহু স্থানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অশেষ ফাযায়িল-ফযীলত বর্ণিত রয়েছে। পাশাপাশি উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করার বিষয়ে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। কারণ উনাদের মুহব্বত জুযয়ে ঈমান বা ইমানের অঙ্গ। আর তাই উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিব।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আলোকে
পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ’ উনার ২৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথী অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাফিরদের প্রতি কঠোর। নিজেদের পরস্পরের মধ্যে সহানুভূতিশীল। মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি মুবারক কামানায় উনারা রুকূ ও সিজদাবনত। উনাদের মুখমÐলে রয়েছে সিজদার চিহ্ন।” উনাদের এরূপ অবস্থার বর্ণনা পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে।
উক্ত ‘পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ’ উনার ২৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “কেবল কাফিরেরাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।”
‘পবিত্র সূরা হাদীদ শরীফ’ উনার ১০ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সকলকে হুসনা তথা উত্তম পরিণতির ওয়াদা দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
‘পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ’ উনার ১০১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “যাঁদের জন্য আমার তরফ থেকে হুসনা তথা উত্তম পরিণতির ফায়ছালা হয়ে গেছে উনাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে।
‘পবিত্র সূরা তওবা শরীফ’ উনার ১০০ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে যাঁরা (ঈমান গ্রহণের দিক থেকে) অগ্রগামী ও প্রথম উনারা এবং উনাদেরকে যাঁরা উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, উনাদের সকলের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছেন। উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ বেহেশত নির্ধারণ করে রেখেছেন, যার নির্দেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত থাকবে। সেই বেহেশতে উনারা সর্বদা অবস্থান করবেন। এটা উনাদের জন্য বিরাট-বড় সফলতা।” সুবহানাল্লাহ!
‘পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ’ উনার ৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তরসমূহকে তাক্বওয়ার জন্য পছন্দ করেছেন এবং উনাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা প্রতিদান।”
উক্ত ‘পবিত্র হুজুরাত শরীফ’ উনার ৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তরে ঈমানকে প্রিয় ও সুশোভিত করে দিয়েছেন। আর কুফর, পাপাচার ও নাফরমানী উনাদের নিকট অপ্রিয় করে দিয়েছেন।”
‘পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ’ উনার ১১০ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই হলেন সর্বোত্তম উম্মত। মানুষের মধ্য থেকে উনাদেরকে বের করা হয়েছে এজন্য যে, উনারা সৎ কাজের আদেশ প্রদান করবেন এবং অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করবেন।”
‘পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ’ উনার ১৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেরূপ ঈমান এনেছেন, তোমরাও তদ্রƒপ ঈমান আনো।”
উক্ত পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ১৩৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মানুষেরা যদি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় ঈমান আনে, তবেই তারা হিদায়েত লাভ করবে।
এমনিভাবে সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো বহু আয়াত শরীফ রয়েছে যার দ্বারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ছানা-ছিফত, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান বর্ণনা করা হয়েছে।
উক্ত ‘পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ’ উনার ২৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “কেবল কাফিরেরাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।”
‘পবিত্র সূরা হাদীদ শরীফ’ উনার ১০ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সকলকে হুসনা তথা উত্তম পরিণতির ওয়াদা দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
‘পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ’ উনার ১০১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “যাঁদের জন্য আমার তরফ থেকে হুসনা তথা উত্তম পরিণতির ফায়ছালা হয়ে গেছে উনাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে।
‘পবিত্র সূরা তওবা শরীফ’ উনার ১০০ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে যাঁরা (ঈমান গ্রহণের দিক থেকে) অগ্রগামী ও প্রথম উনারা এবং উনাদেরকে যাঁরা উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, উনাদের সকলের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছেন। উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ বেহেশত নির্ধারণ করে রেখেছেন, যার নির্দেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত থাকবে। সেই বেহেশতে উনারা সর্বদা অবস্থান করবেন। এটা উনাদের জন্য বিরাট-বড় সফলতা।” সুবহানাল্লাহ!
‘পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ’ উনার ৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তরসমূহকে তাক্বওয়ার জন্য পছন্দ করেছেন এবং উনাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা প্রতিদান।”
উক্ত ‘পবিত্র হুজুরাত শরীফ’ উনার ৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তরে ঈমানকে প্রিয় ও সুশোভিত করে দিয়েছেন। আর কুফর, পাপাচার ও নাফরমানী উনাদের নিকট অপ্রিয় করে দিয়েছেন।”
‘পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ’ উনার ১১০ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই হলেন সর্বোত্তম উম্মত। মানুষের মধ্য থেকে উনাদেরকে বের করা হয়েছে এজন্য যে, উনারা সৎ কাজের আদেশ প্রদান করবেন এবং অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করবেন।”
‘পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ’ উনার ১৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেরূপ ঈমান এনেছেন, তোমরাও তদ্রƒপ ঈমান আনো।”
উক্ত পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ১৩৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মানুষেরা যদি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় ঈমান আনে, তবেই তারা হিদায়েত লাভ করবে।
এমনিভাবে সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো বহু আয়াত শরীফ রয়েছে যার দ্বারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ছানা-ছিফত, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান বর্ণনা করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেভাবে পবিত্র ঈমান এনেছেন, জিন-ইনসান যদি সেভাবে পবিত্র ঈমান আনে, তাহলে তারা অবশ্যই হিদায়েত লাভ করবে।’
হাদীস
শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তিনি বর্ণনা
করেন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আমার প্রত্যেকটি ছাহাবী
এক একটি নক্ষত্র তুল্য। উনাদের যে কাউকে যে কেউ অনুসরণ করবে সে হেদায়েত প্রাপ্ত হবে।’
সুবহানাল্লাহ।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আনহুন্না উনারা পুরুষ হোন অথবা মহিলা হোন; উনারা হলেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা উনার অধিকারী ও অধিকারিনী। তাই সকল মুসলমান উনাদের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে-
পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাসসহ সারা বৎসরই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম ও আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ছানা-ছিফত মুবারক বেশি বেশি বর্ণনা করা এবং উনাদের প্রতি মুহব্বতও বেশি বেশি প্রকাশ করা। যা ইহকালে হিদায়েত ও পরকালে নাজাতের উসীলা হবে। সুবহানাল্লাহ!
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যূল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল, মাওলানা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন- পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাসসহ সারা বৎসরই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও ছানা-ছিফত মুবারক বেশি বেশি বর্ণনা করা এবং উনাদের প্রতি বেশি বেশি মুহব্বতও প্রকাশ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। তবে বিশেষভাবে পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাসে উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও ছানা-সিফত মুবারক বেশি বেশি বর্ণনা করা এবং মুহব্বতও বেশি বেশি প্রকাশ করার কথা বলার কারণ হলো- পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার দশ তারিখ অর্থাৎ পবিত্র আশূরা শরীফ এ কারবালায় সংঘটিত ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির অপকর্মকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ বিশিষ্ট ছাহাবী, কাতিবে ওহী, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়া’বিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার সমালোচনা করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যা পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। তাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয হচ্ছে, বিশেষভাবে পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার মাঝে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের বেশি বেশি ফাযায়িল-ফযীলত ও ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করা ও মুহব্বত প্রকাশ করা।
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল এবং উনার খাদিম বা হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা কাফিরদের প্রতি কঠোর ও দৃঢ়চিত্ত, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি মুবারক কামনায় আপনি উনাদেরকে রুকূ ও সিজদাবনত দেখবেন। উনাদের মুখম-ল মুবারক উনার মধ্যে রয়েছে পবিত্র সিজদা মুবারক উনার চিহ্ন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের গুণাবলী, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশেষ লক্ষণাদি বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও নুযূল খাছ, তবে হুকুম হচ্ছে আম অর্থাৎ এতে সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনারাই দাখিল রয়েছেন। অর্থাৎ সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা ছিলেন পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল আর কাফিরদের প্রতি কঠোর। মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক লাভের উদ্দেশ্যেই পবিত্র আক্বাইদ মুবারক, ইবাদত মুবারক, মুয়ামিলাত মুবারক, মুয়াশারাত মুবারক, তাছাউফ মুবারক ইত্যাদি সবই করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, অথচ সেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে অনেকেই বেখবর। অনেকেই আবার উনাদের সমালোচনায় মুখর। নাঊযুবিল্লাহ!
উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে, উনাদেরকে সত্যের মাপকাঠি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। নাঊযুবিল্লাহ!
উপরন্তু উনাদেরকে নাক্বিছ ও অপূর্ণ বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে চায় মূলত, এরা সকলেই লা’নতগ্রস্ত বা মালউন। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! কারণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি মুহব্বত রাখা, উনাদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা হচ্ছে পবিত্র ঈমান। উনাদের ইত্তিবা বা অনুসরণ করা ফরয। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, উনাদেরকে কষ্ট দেয়া, সমালোচনা করা, নাক্বিছ বা অপূর্ণ বলা কাট্টা কুফরী। এটাই সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা বা বিশ্বাস এবং ফতওয়া। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা কুফরী ।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মূলকথা হলো- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আনহুন্না উনারা পুরুষ হোন অথবা মহিলা হোন; উনারা হলেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর সর্বশ্রেষ্ঠ
মর্যাদা উনার অধিকারী ও অধিকারিনী। তাই সকল মুসলমান উনাদের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে- পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাসসহ সারা বৎসরই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ছানা-ছিফত মুবারক বেশি বেশি বর্ণনা করা এবং উনাদের প্রতি মুহব্বতও বেশি বেশি প্রকাশ করা। যা ইহকালে হিদায়েত ও পরকালে নাজাতের উসীলা হবে। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং
হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করলে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের
হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেভাবে পবিত্র ঈমান এনেছেন, জিন-ইনসান যদি সেভাবে পবিত্র ঈমান আনে তাহলে তারা অবশ্যই হিদায়েত লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! আর হযরত ছাহাবা আজমাঈন রিদ্বওয়ানুল্লাহি তায়ালা আনহুম উনাদের বিশাল কাফিলার মধ্যে প্রধান হলেন হযরত খুলাফায়ে রাশিদা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রথম চার খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা। উনাদের ছানা-ছিফত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যদিও আমভাবে প্রত্যেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ও অনুসরণ পরবর্তী সকল উম্মতের জন্য হিদায়েত, জান্নাত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত ও অনুসরণের ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মুহব্বত ঈমানের অঙ্গ এবং উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী
এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক ও উনার রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের প্রতি আল্লাহ পাক-উনার অভিসমপাত এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আহ্যাব-৫৭)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সমপর্কে আল্লাহ পাককে ভয় কর, আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সমপর্কে আল্লাহ পাককে ভয় কর। আমার বিছাল (ওফাত) শরীফের পরে তাঁদেরকে তোমরা তিরষ্কারের লক্ষ্যস্থল করো না। যে ব্যক্তি তাঁদেরকে মুহব্বত করলো, সে আমাকে মুহব্বত করার কারণেই মুহব্বত করলো, আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তা করলো। যে ব্যক্তি তাঁদেরকে কষ্ট দিল, সে মূলত: আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে ব্যক্তি আমাকে কষ্ট দিল, সে মূলত: আল্লাহ পাককেই কষ্ট দিল, আর যে আল্লাহ পাককে কষ্ট দিল, আল্লাহ পাক তাকে শীঘ্রই পাকড়াও করবেন।” (তিরিমিযী শরীফ)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, “একমাত্র কাফিররাই তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।” (সূরা ফাতহ্-২৯)
এই আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, সে কাফির। (মিশকাত শরীফ) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি মুহব্বত ঈমান, আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী।” (কানযুল উম্মাল)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উমর ফারুক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মুহব্বত ঈমানের অন্তর্ভুক্ত, আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ কুফরী। (বুখারী শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালি দিও না। কেননা যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক-উনার রাস্তায় দান করে, তবুও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের এক মূদ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মূদ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলতও অর্জন করতে পারবে না। (বুখারী শরীফ)
অতএব, সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সমপর্কেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম মাত্রই সম্মান ও তা‘যীম-তাকরীম এবং মুহব্বতের পাত্র।
অথচ আজকাল অনেকেই হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের এবং বিশেষ করে হযরত মু‘য়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু -এর ব্যাপক সমালোচনা করে থাকে। তাঁদের সমালোচনা করতে গিয়ে যুক্তি পেশ করে থাকে যে, যদি তাঁরা হক্বের উপর থাকতেন, তবে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু -এর জিহাদ হলো কেন ? দু’দলের মধ্যে একদল নিশ্চয়ই হক্ব ও অপর দল নাহক্ব।
মূলত: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের উক্ত যুক্তি মোটেও শুদ্ধ নয়। তার প্রমাণ আল্লাহ পাক কুরআন শরীফেই উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহ পাক বলেন, “হে হাবীব! (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, প্রত্যেকেই তার অভ্যাস বা আদত অনুযায়ী আমল করে থাকে। তবে তোমাদের রব ভালো জানেন কে অধিক সুপথে রয়েছে । (সূরা বণী ইসরাঈল-৮৪)
এ আয়াত শরীফ থেকে মুফাস্সিরীনে কিরাম দু’টি পথ নির্ধারণ করেছেন। একটি হলো সুপথ, অপরটি হলো অধিক সুপথ। কাজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে যে জিহাদ হয়েছে, ইখতিলাফ বা মতবিরোধ হয়েছে, তাতে কেউ সুপথে ছিলেন, আর কেউ অধিক সুপথে ছিলেন। অর্থাৎ প্রত্যেকেই হক্বের মধ্যে ছিলেন, কেউই নাহক্বের মধ্যে ছিলেন না।
পূর্বোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমানিত হয়েছে যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ প্রত্যেক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই হক্বের উপর কায়িম ছিলেন । এ সমপর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : আমার বেছাল (ওফাত) শরীফের পরে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সমপর্কে আমি আল্লাহ পাককে জিজ্ঞাসা করেছি । আল্লাহ পাক আমাকে বললেন : হে হাবীব, নিশ্চই আপনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আমার নিকট তারকা সমতূল্য। কারো আলোর চেয়ে কারো আলো বেশী, তবে প্রত্যেকেরই আলো আছে । সুতরাং, তাঁদের যে কোন ইখতিলাফকে যারা আঁকড়িয়ে ধরবে, তারা হিদায়েত পেয়ে যাবে । কারণ তাঁদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট হিদায়েত হিসাবে গণ্য। অত:পর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ (প্রত্যেকেই) তারকা স্বদৃশ, তাঁদের যে কেউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়াত প্রাপ্ত হবে।
বুঝা গেল যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইখতিলাফও হিদায়াতের কারণ এবং আল্লাহ পাকের নিকট গ্রহণযোগ্য । অর্থাৎ তাঁদের যে কাউকে, যে কোন ব্যক্তি, যে কোন বিষয়ে অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি সে বিষয়েই হিদায়াত লাভ করবে বা হিদায়াতের উপর থাকবে ।
হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ফযীলত সমপর্কে যিনি ইমামে আ‘যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি -এর বিশিষ্ট ছাত্র ও খলীফা আমিরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি শ্রেষ্ঠ ? তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার কসম ! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধূলাবালিগুলো প্রবেশ করতো, সে ধুলাবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ন্যায় শত শত ব্যক্তি হতেও শ্রেষ্ঠ, সুবহানাল্লাহ। (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ)
সুতরাং, উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা এবং তাঁদেরকে (নাকিছ) অপূর্ণ বলা সমপূর্ণ হারাম ও কুফরী । মূলত: ইসলাম বিদ্বেষীদের আন্তর্জাতিক একটি চক্রান্ত যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দোষারোপ করা। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে অপূর্ণ বাতিল সাব্যস্ত করতে পারলে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ তথা দ্বীন ইসলাম বাদ হয়ে যাবে । কাজেই ইসলাম বিদ্বেষীদের চক্রান্ত সমপর্কে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে । আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বেছাল (ওফাত) শরীফের পরে যে ছাহাবা বিদ্বেষী নামে ইসলাম ধ্বংসকারী একটি দল আত্মপ্রকাশ করবে, সে সমপর্কে তিনি উম্মতের প্রতি সতর্ক করে ভবিষ্যদ্বাণীতে ইরশাদ করেন, “অতি শীঘ্রই একটি দল বের হবে, যারা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালি দিবে, তাঁদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলবে । সাবধান ! তোমরা তাদের মজলিসে বসবে না, তাদের সাথে পানাহার করবে না, তাদের সাথে বিয়ে শাদির ব্যবস্থা করবে না। অন্য রেওয়ায়াতে উল্লেখ রয়েছে, তাদের পিছনে নামায পড়বে না এবং তাদের জন্য দোয়া করবে না ।” তিনি আরো ইরশাদ করেন, যখন তোমরা কাউকে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালি দিতে দেখবে, তখন তোমরা বলো, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের প্রতি আল্লাহ পাক-উনার লা‘নত বর্ষিত হোক । (তিরমিযী শরীফ)
প্রসিদ্ধ সীরাত গ্রন্থ’তে বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার ছাহাবাদের আলোচনাকালে তোমরা সংযত থেকো।” হানাফী মায্হাবের ইমাম, ইমামে আ‘যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ‘‘ফিকহুল আকবরে’’ উল্লেখ করেন, ‘আমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রত্যেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সমপর্কেই সুধারণা পোষণ করি ।’ বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ হাফিয ইবনে হাজার আছকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন' ‘‘ইছাবা’’-এর ১ম খণ্ডে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ হাফিয্ আবু যার‘আ রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিম্নোক্ত বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, যখন কাউকে দেখবে যে সে কোন একজন ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর অবমাননা করছে তখন তুমি জানবে- সে ব্যক্তি নির্ঘাত যিন্দিক তথা কাফির ।
অতএব, আমাদের প্রত্যেককেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে, তাঁদেরকে মুহব্বত ও যথাযথ তা‘যীম-তাকরীম করতে হবে এবং তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না, তাঁদের কোনরূপ সমালোচনা ও তাঁদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলা যাবে না । কারণ শরীয়তের ফায়সালা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি মুহব্বত রাখা, তাঁদের যথাযথ তা‘যীম-তাকরীম করা ঈমানের অঙ্গ এবং তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার বুযুর্গী ও ফযীলত মুবারক বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি একাধিক স্থানে উনার পবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করেছেন। উনার প্রশংসায় অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের পরে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী তিনিই সাইয়্যিদুনা
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট মুবারক করার লক্ষ্যে উনার মাল ও জান সব মহান আল্লাহ পাক উনার পথে ব্যয় করেছেন। অর্থাৎ উনি মাল ও জানের চেয়েও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অধিক মুহব্বত করতেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিনে কামিল হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত করবে।”
অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তার মাল ও জান হতেও যতক্ষণ পর্যন্ত বেশি মুহব্বত না করবে।”
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র হিজরত মুবারক উনার কথা জানালেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে প্রিয় ছাহাবী, খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে বললেন, “হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! আমাকে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ যেতে হবে। আর সেই পবিত্র হিজরত মুবারকের সময় আপনিই হবেন আমার একমাত্র সঙ্গী। কাজেই আপনি হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকুন। পবিত্র হিজরত মুবারক করার নির্দেশ মুবারক এলে আমি আপনাকে জানাবো।
এদিকে এ ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র হিজরত মুবারক করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। পবিত্র হিজরত মুবারক উনার পথে বিশ্রাম নেয়ার উদ্দেশ্যে গারে ছুর বা ছাওর পর্বতের গুহায় প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করে দেখলেন সেখানে অনেক ছিদ্র রয়েছে। সে ছিদ্রতে বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু থাকতে পারে এ আশঙ্কায় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পাগড়ী মুবারক ও চাদর মুবারক টুকরো টুকরো করে ছিদ্রের মুখগুলো বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু একটি ছিদ্র বন্ধ করার মতো কোনো কাপড় অবশিষ্ট রইলো না। তাই হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পা মুবারক উনার গোড়ালি মুবারক দ্বারা উক্ত ছিদ্রের মুখে চাপ দিয়ে রাখলেন।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার উক্ত জানু মুবারক উনার উপর মাথা মুবারক রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন।
উল্লিখিত ছিদ্রের ভিতর অবস্থান করছিল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার যুগের একটি সাপ। সাপটি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক যিয়ারত লাভ করার উদ্দেশ্যই এখানে অবস্থান করছিল। সাপটি শত চেষ্টা করেও বের হতে না পেরে অপারগ হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পা মুবারকে আঘাত করলো। আঘাতের সাথে সাথে বিষের ক্রিয়ায় এবং বিষের যন্ত্রণায় উনার চোখ মুবারক দিয়ে দর দর করে পানি মুবারক পড়তে লাগলো। তবুও তিনি নিজ পা মুবারক একটুও নড়াচড়া করলেন না যেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক উনার কোনো ব্যাঘাত না হয়। হঠাৎ করে উনার চোখ মুবারক উনার এক ফোঁটা পানি মুবারক আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক উনার উপর পড়লো। সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক ভেঙে গেলো। দেখলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বিষের যন্ত্রণায় কাঁদছেন।
এ অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ মুখ মুবারক থেকে একটু নূরুল বারাকাত মুবারক (থু থু) মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! আপনার এ অবস্থা হওয়ার সাথে সাথে কেন আমাকে ঘুম মুবারক থেকে জাগ্রত করলেন না?” জবাবে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার ঘুম মুবারক উনার ব্যাঘাত ঘটবে এবং আপনার সাথে বেয়াদবী হবে ভেবে আমি কোনো নড়াচড়া করিনি এবং আপনাকে ঘুম মুবারক থেকে জাগ্রত করিনি। সুবহানাল্লাহ!
ফিকিরের বিষয় যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কত গাঢ় মুহব্বত ছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এত গাঢ় মুহব্বত উনার পরিপ্রেক্ষিতে উনার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যে কোনো ব্যক্তি আমাদের প্রতি যে কোনো প্রকারের ইহসান করেছে আমরা তার প্রতিদান দিয়েছি, কিন্তুসাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার ইহসান ব্যতীত। তিনি আমাদের প্রতি যে ইহসান করেন তার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন উনাকে প্রদান করবেন। আর কারো ধন-সম্পদ আমাকে ততখানি উপকৃত করেনি যতখানি উপকৃত করেছে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ধন-সম্পদ। আর আমি যদি আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। জেনে রেখ! নিশ্চয়ই (তোমাদের সঙ্গী) অর্থাৎ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ তায়ালা উনার বন্ধু।” (তিরমিযী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিনে কামিল হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত করবে।”
অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তার মাল ও জান হতেও যতক্ষণ পর্যন্ত বেশি মুহব্বত না করবে।”
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র হিজরত মুবারক উনার কথা জানালেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে প্রিয় ছাহাবী, খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে বললেন, “হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! আমাকে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ যেতে হবে। আর সেই পবিত্র হিজরত মুবারকের সময় আপনিই হবেন আমার একমাত্র সঙ্গী। কাজেই আপনি হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকুন। পবিত্র হিজরত মুবারক করার নির্দেশ মুবারক এলে আমি আপনাকে জানাবো।
এদিকে এ ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র হিজরত মুবারক করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। পবিত্র হিজরত মুবারক উনার পথে বিশ্রাম নেয়ার উদ্দেশ্যে গারে ছুর বা ছাওর পর্বতের গুহায় প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করে দেখলেন সেখানে অনেক ছিদ্র রয়েছে। সে ছিদ্রতে বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু থাকতে পারে এ আশঙ্কায় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পাগড়ী মুবারক ও চাদর মুবারক টুকরো টুকরো করে ছিদ্রের মুখগুলো বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু একটি ছিদ্র বন্ধ করার মতো কোনো কাপড় অবশিষ্ট রইলো না। তাই হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পা মুবারক উনার গোড়ালি মুবারক দ্বারা উক্ত ছিদ্রের মুখে চাপ দিয়ে রাখলেন।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার উক্ত জানু মুবারক উনার উপর মাথা মুবারক রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন।
উল্লিখিত ছিদ্রের ভিতর অবস্থান করছিল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার যুগের একটি সাপ। সাপটি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক যিয়ারত লাভ করার উদ্দেশ্যই এখানে অবস্থান করছিল। সাপটি শত চেষ্টা করেও বের হতে না পেরে অপারগ হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পা মুবারকে আঘাত করলো। আঘাতের সাথে সাথে বিষের ক্রিয়ায় এবং বিষের যন্ত্রণায় উনার চোখ মুবারক দিয়ে দর দর করে পানি মুবারক পড়তে লাগলো। তবুও তিনি নিজ পা মুবারক একটুও নড়াচড়া করলেন না যেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক উনার কোনো ব্যাঘাত না হয়। হঠাৎ করে উনার চোখ মুবারক উনার এক ফোঁটা পানি মুবারক আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক উনার উপর পড়লো। সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক ভেঙে গেলো। দেখলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বিষের যন্ত্রণায় কাঁদছেন।
এ অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ মুখ মুবারক থেকে একটু নূরুল বারাকাত মুবারক (থু থু) মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! আপনার এ অবস্থা হওয়ার সাথে সাথে কেন আমাকে ঘুম মুবারক থেকে জাগ্রত করলেন না?” জবাবে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার ঘুম মুবারক উনার ব্যাঘাত ঘটবে এবং আপনার সাথে বেয়াদবী হবে ভেবে আমি কোনো নড়াচড়া করিনি এবং আপনাকে ঘুম মুবারক থেকে জাগ্রত করিনি। সুবহানাল্লাহ!
ফিকিরের বিষয় যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কত গাঢ় মুহব্বত ছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এত গাঢ় মুহব্বত উনার পরিপ্রেক্ষিতে উনার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যে কোনো ব্যক্তি আমাদের প্রতি যে কোনো প্রকারের ইহসান করেছে আমরা তার প্রতিদান দিয়েছি, কিন্তুসাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার ইহসান ব্যতীত। তিনি আমাদের প্রতি যে ইহসান করেন তার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন উনাকে প্রদান করবেন। আর কারো ধন-সম্পদ আমাকে ততখানি উপকৃত করেনি যতখানি উপকৃত করেছে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ধন-সম্পদ। আর আমি যদি আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। জেনে রেখ! নিশ্চয়ই (তোমাদের সঙ্গী) অর্থাৎ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ তায়ালা উনার বন্ধু।” (তিরমিযী শরীফ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সুমহান উপদেশ
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী, দুনিয়া বিরাগী, আখিরাতের প্রতি অনুরাগী, পরহেজগার, মহাজ্ঞানী, চিন্তাশীল, সম্মানিত দ্বীন উনার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনকারী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আশিক, পবিত্র সুন্নত উনার একনিষ্ঠ অনুসারী, পদের মোহমুক্ত, ইবাদতগুজার, দানশীল-দানবীর, বিশিষ্ট মুজাহিদ, আত্মত্যাগী, বিনয়ী, অল্পে তুষ্ট, স্পষ্টবাদী, অধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও ফকীহ, আল-কুরাইশী বংশোদ্ভূত অত্যন্ত বুযূর্গ ছাহাবী, খিলাফত আলা মিনহাজুন নুবুওয়াত উনার অধীনে বিভিন্ন দায়িত্ব প্রাপ্ত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর বিন খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার যোগ্যতম সন্তান হলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনার পবিত্র ও মহিমান্বিত জীবনকাল ৮৩/৮৪ বছরের। এ সময়ের মধ্যে তিনি অনেক সুন্দর সুন্দর ও সুমহান উপদেশ দিয়ে গেছেন। এর মধ্য থেকে কয়েকটি উপদেশ হলো-
১. সর্বাপেক্ষা সহজ নেকী হলো প্রফুল্ল মুখ এবং মিষ্টি কথা।
২. সুমিষ্ট সরবত যেভাবে পান করো, সেভাবেই ক্রোধ হজম করো।
৩. চরিত্র খারাপ হলে ঈমানও খারাপ হয়।
৪. পাপ করতে চাইলে সে স্থান তালাশ করো যেখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি নেই।
৫. বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট যতই প্রিয় হোক না কেন, সে যখন পার্থিব কিছু চায়, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তার মর্যাদা কমে যায়।
৬. ইবাদতে স্বাদ পেতে হলে একাকিত্ব তালাশ করো (তবে এটা পরিবার পরিজনের রুজীর ব্যবস্থা করার পর)।
৭. সেই জ্ঞানী যে অপরকে অবজ্ঞা করে না।
৮. শত্রুর কাছ থেকে হলেও জ্ঞানার্জন করো।
৯. অন্যের দোষ খোঁজার আগে নিজ দোষের প্রতি নজর দাও।
১০. নিজে আমল করে তারপর অন্যকে উপদেশ দাও।
মহান আল্লাহ পাক আপনি আমাদেরকে উপরোক্ত উপদেশগুলো মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!
১. সর্বাপেক্ষা সহজ নেকী হলো প্রফুল্ল মুখ এবং মিষ্টি কথা।
২. সুমিষ্ট সরবত যেভাবে পান করো, সেভাবেই ক্রোধ হজম করো।
৩. চরিত্র খারাপ হলে ঈমানও খারাপ হয়।
৪. পাপ করতে চাইলে সে স্থান তালাশ করো যেখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি নেই।
৫. বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট যতই প্রিয় হোক না কেন, সে যখন পার্থিব কিছু চায়, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তার মর্যাদা কমে যায়।
৬. ইবাদতে স্বাদ পেতে হলে একাকিত্ব তালাশ করো (তবে এটা পরিবার পরিজনের রুজীর ব্যবস্থা করার পর)।
৭. সেই জ্ঞানী যে অপরকে অবজ্ঞা করে না।
৮. শত্রুর কাছ থেকে হলেও জ্ঞানার্জন করো।
৯. অন্যের দোষ খোঁজার আগে নিজ দোষের প্রতি নজর দাও।
১০. নিজে আমল করে তারপর অন্যকে উপদেশ দাও।
মহান আল্লাহ পাক আপনি আমাদেরকে উপরোক্ত উপদেশগুলো মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!
No comments:
Post a Comment