হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দুয়া কবুল হয়ে থাকে।
১) রজব মাসের পহেলা রাত
২) শবে বরাত
৩) শবে ক্বদর
৪) ঈদুল ফিতর ও
৫) ঈদুল আদ্বহার রাত্র।
ঈদুল
ফিতর-এর
রাত্রি
সুতরাং চতুর্থ রাত্রিটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর-এর রাত্রি অর্থাৎ আমাদের দেশে যে রাত চাঁদ রাত হিসেবে পরিচিত সেই রাত্রি। কাজেই এই রাত্রিতে সকলের উচিত বিশেষভাবে তওবা-ইস্তিগফার করা, ইবাদত বন্দেগী করা যেরূপ শবে বরাত, শবে ক্বদরে করা হয়ে থাকে।
ঈদুল
ফিতর
ঈদ অর্থ খুশি, আনন্দ। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ-এর এক মাস রোযার পর শাওওয়াল মাসের প্রথম তারিখ মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরকে কুল-মুসলিমের জন্য খুশির দিন হিসেবে হাদিয়া করেছেন।
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফ-এ যেতেন এবং সকাল সকাল গোসল করে ঈদুল ফিতরের দিন হলে বেজোড় সংখ্যক
(৩,
৫ অথবা ৭টি)
খোরমা খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর ঈদুল আযহার দিন হলে কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ঈদের নামায আদায় করতেন। অতঃপর খুতবা দিতেন ও নছীহত করতেন।
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নজরানের আমীর বা প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ করেন যে,
ঈদুল আযহার নামায খুব সকাল সকাল পড়বেন এবং ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরিতে পড়বেন এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবেন।
সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের ২৩ মিনিট পর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যোহরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে; তারপর মাকরূহ ওয়াক্ত শুরু হয়। সেই মাকরূহ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করতে হবে। সুতরাং ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং ঈদের নামায আদায়ে দেরি না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য সকল নফল নামাযসহ সমস্ত নফল ইবাদত করা মাকরূহে তাহরিমী।
ঈদুল
ফিতর-এর
হুকুম-আহকাম
সর্বপ্রথম ফজর নামাযের পর গোসল করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরে আতর-সুরমা মেখে খুব সকাল সকাল ঈদগাহে গিয়ে ঈদুল ফিতর-এর দুই রাকাআত নামায আদায় করার মধ্য দিয়েই এই ঈদ শুরু হয়। নামায শেষে মুছাফাহা-মুআনাকা করে পরস্পরে কুশল বিনিময় করে, যথাসাধ্য ভাল খাদ্য খেয়ে এদিন ম’মিন-মুসলমানগণ ঈদ উদযাপন করে থাকেন।
ঈদুল ফিতরের দিন বিজোড় সংখ্যক খুরমা-খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া,
আল্লাহু আকবার আল্লাহু
আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়ালিল-ল্লা-হিল হামদ তাকবীর বলতে বলতে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়িতে ফেরা খাছ সুন্নত।
হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, ঈদুল ফিতর-এর নামায আদায় করে ফিরার পথে ফেরেশতাগণ রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে রোযা পালনকারীকে এই বলে ইস্তিক্ববাল জানাতে থাকেন যে, “হে আল্লাহ পাক উনার বান্দা! আপনাদেরকে ক্ষমা করা হলো। আপনাদের গুনাহ-খতা মাফ করা হলো। আপনাদেরকে কবুল করা হলো। সুবহানাল্লাহ!
ঈদুল ফিতর-এর নামাযের নিয়ত
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة العيد الفطر مع ستة تكبرات واجب الله تعالى اقتديت بهذا الامام متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রকা’আতাই ছলাতিল ঈদিল ফিতর মা’আ সিত্তাতি তাকবিরতি ওয়াজিবুল্লাহি তা’য়ালা ইক্বতাদাইতু বি হা-যাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল ক্বা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবার।
বাংলায়: আমি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য ছয় তাকবীরের সাথে ঈদুল ফিতর-এর ওয়াজিব নামায এই ইমামের পিছনে আদায় করছি- আল্লাহু আকবার।
ঈদুল ফিতরের নামায আদায়ের নিয়ম
সূর্যোদয়ের ২৩ মিনিট পর মাকরুহ ওয়াক্তের পূর্বে জামাআতের সাথে অতিরিক্ত ছয় তাকবীরসহ দু’রাকাআত নামায আদায করা ওয়াজিব। ঈদের নামাযে খুৎবা পাঠ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
ঈদুল ফিতরের নামাজ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার একটু পর আদায় করা সুন্নত।
অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলার নিয়ম হলো,
নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা বলে ইমাম সাহেব পর তিন বার
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলবেন।
প্রথম দু’বার হাত ছেড়ে দিবেন অতঃপর তৃতীয় তাকবীরে হাত বেঁধে যথারীতি প্রথম রাকাআত নামাজ আদায় করবেন।
দ্বিতীয় রাকাআতে যথারীতি সূরা-ক্বিরায়াত আদায় করে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে ইমাম সাহেব পর পর তিন বার তিন তাকবীর আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলবেন। প্রত্যেক তাকবীরেই হাত ছেড়ে দিতে হবে। চতুর্থ তাকবীর বললে রূকূতে যাবেন। এরপর যথারীতি নামায শেষ করবেন।
ঈদুল আদ্বহা-এর রাত্রি
এবংপঞ্চম রাত্রিটি হচ্ছে ঈদুল আদ্বহা এর রাত্রি অর্থাৎ আমাদের দেশে যে রাত চাঁদ রাত হিসেবে পরিচিত সেই রাত্রি। কাজেই এই রাত্রিতেও ঈদুল ফিতরের ন্যায় সকলের উচিত বিশেষভাবে তওবা-ইস্তিগফার করা, ইবাদত বন্দেগী করা যেরূপ শবে বরাত, শবে ক্বদরে করা হয়ে থাকে।
ঈদুল আদ্বহার নামায আদায়ের নিয়ম
সূর্যোদয়ের ২৩ মিনিট পর মাকরুহ ওয়াক্তের পূর্বে জামাআতের সাথে অতিরিক্ত ছয় তাকবীরসহ দু’রাকাআত নামায আদায করা ওয়াজিব। ঈদের নামাযে খুৎবা পাঠ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
ঈদুল আদ্বহার নামাজ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা সুন্নত।
ঈদুল ফিতরের ন্যায় একই নিয়মে ঈদুল আদ্বহার নামাজ আদায় করতে হয়।
ঈদুল আদ্বহা-এর নামাযের নিয়ত
নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রকা’আতাই ছলাতিল ঈদিল আদ্বহা মা’আ সিত্তাতি তাকবিরতি ওয়াজিবুল্লাহি তা’য়ালা ইক্বতাদাইতু বি হা-যাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল ক্বা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবার।
বাংলায়: আমি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য ছয় তাকবীরের সাথে ঈদুল আদ্বহা-এর ওয়াজিব নামায এই ইমামের পিছনে আদায় করছি- আল্লাহু আকবার।
বাংলায়: আমি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য ছয় তাকবীরের সাথে ঈদুল আদ্বহা-এর ওয়াজিব নামায এই ইমামের পিছনে আদায় করছি- আল্লাহু আকবার।
No comments:
Post a Comment