আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ্। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুন। এখানে রয়েছে ইসলামী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জানা অত্যাবশ্যক।***
যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা সহ অনলাইনে ফ্রি ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সুযোগ ***
ডাঃ আহমদ ইমতিয়াজ ডি.এইচ.এম.এস, বি.এইচ.এম.সি (ঢাকা) মোবাইল - 01914440430 ই-মেইলঃ drahmadimtiaj@gmail.com ***

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুনিয়াবী হায়াত মুবারকের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।

পবিত্র নসবনামা মুবারক

খাইরু খালক্বিল্লাহখাইরুল আলামীনহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নসবনামা মুবারক হাদীছ শরীফ- এসেছে,
সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনখাতামুন নাবিইয়ীনহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات.
অর্থ: “আমি সব সময় পবিত্র পুরুষগণের পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্রা নারীগণের রেহেম শরীফ- স্থানান্তরিত হয়ে যমীনে তাশরীফ এনেছি।” (তাহক্বীকুল মাকাম আল কিফাইয়াতিল আওয়াম)
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারক কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বোত্তম নসব মুবারক। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা  পিতামহ আলাইহিমুস সালাম উনার এবং মাতা  মাতামহ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম  হযরত হাওয়া আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকলেই ছিলেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম বা খাঁটি ঈমানদার। উনাদের মধ্যে কেউই ফাসিককাফির ছিলেন না। উনারা সকলেই পূত-পবিত্র ছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আল্লাহ পাক আমাকে সব সময় এমন পবিত্র পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্র রেহেম শরীফ- স্থানান্তরিত করতেছিলেন যা পূর্ব হতেই পবিত্রসুসজ্জিত এবং মনোনীত ছিলো। (সুবহানাল্লাহ) যখন দুটি শাখা বের হতো তখন আমি এই দুটি শাখার সর্বোত্তম শাখায় থাকতাম।” (বারাহীনুল ক্বাতইয়্যাহমাওয়াহিবুল লাদুননিয়া/১৩সীরাতুল হালবিয়া/৩১)

বিস্তারিত জানতে পবিত্র নসবনামা মুবারক দেখুন অথবা ক্লিক করুন।

পবিত্র মক্কা শরীফে


১। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ রজব মাসের প্রথম জুমুয়ার রাতে (লাইলাতুর রাগাইব) নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা হযরত আমিনা আলাইহাস্‌ সালাম-এর রেহেম শরীফে তাশরীফ আনেন।

২। হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্‌ আলাইহিস্‌ সালাম-এর বিছাল শরীফের ৬ মাস পরে, ৫৭০ খ্রীঃ ২৯শে আগস্ট পারস্যের সুবিখ্যাত সম্রাট নওশেরওয়াঁর রাজত্বের চতুর্বিংশ বৎসরে আছ্‌হাবে ফীল্‌-এর ঘটনার ৫৫ দিন পরে, পবিত্র রবিউল আউয়াল শরীফের ১২ই শরীফ তারিখে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফে (সর্বাধিক মশহুর মত) সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পূর্বে, ইমামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল কাওনাইন, নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ্‌ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুনিয়াতে তাশ্‌রীফ আনেন।

৩। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্‌ সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর তৃতীয় দিনে তাঁকে মক্কা শরীফে নিয়ে যান এবং নাম মুবারক রাখেন ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এর পূর্বে কারো নাম ‘মুহম্মদ’ ছিল না।

৪। বিলাদত শরীফ-এর পর তাঁর সম্মানিতা আম্মা আমিনা আলাইহাস্‌ সালাম-এর দুগ্ধ পান করেন।

৫। দু’দিন পর হযরত ছূওয়াইবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর দুগ্ধ পান করেন।

৬। অতঃপর ভাগ্যবতী হযরত হালিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁকে নিয়ে যান। ২ বৎসর প্রতিপালনের পর মক্কা শরীফে নিয়ে আসেন। কিন্তু মহামারি থাকার কারণে আবার নিয়ে যান এবং মোট ৬ বৎসর হযরত হালিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ঘরে ছিলেন। এর মধ্যে একবার সিনা মুবারক চাক করা হয়।

৭। ৬ বৎসর বয়স মুবারকেই তাঁর সম্মানিতা আম্মা হযরত আমিনা আলাইহাস্‌ সালাম বিছাল শরীফ লাভ করেন।

৮। এরপর পিতামহ হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্‌ সালাম-এর তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন। ৮ বৎসর বয়স মুবারকে পিতামহ বিছাল লাভ করলে, পিতৃব্য আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন।

৯। ১০ বৎসর বয়স মুবারকে ছাগল চড়ায়েছেন।

১০। ১২ বৎসর বয়স মুবারকে সিরিয়ায় বাণিজ্যার্থে গমন। এ সময় বিভিন্ন আশ্চর্য আশ্চর্য ঘটনা সংঘটিত হয় এবং বোহাইরা নামক পাদ্রী নবী হওয়ার ভবিষ্যত বাণী করেন এবং সাক্ষ্য দেন।

১১। ১৩/১৪ বৎসর বয়স মুবারকে দ্বিতীয়বার সিনা মুবারক চাক করা হয়।

১২। বয়স মুবারক যখন ১৪/১৫, তখন ‘হরবুল ফুজ্জারে’ পিতৃব্যদের সাথে গমন করেন।

১৩। ৫৯৫ খিস্টাব্দে ১৪ বৎসর বয়স মুবারকে ‘হিলফুল ফুজুল’ গঠন করেন।

১৪। ১৭ বৎসর বয়স মুবারকে পিতৃব্য হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সঙ্গে বাণিজ্যার্থে ইয়েমেন যান।

১৫। ২০ বৎসর বয়স মুবারকে বিভিন্ন রকম স্বপ্ব দেখতেন এবং ফিরিস্তাদের আওয়াজ শ্রবণ করতেন। আবু তালিব স্বপ্বের ঘটনা শুনে মনে করতো কোন অশুভ আছর হয়েছে, তাই বৈদ্য ডেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করলে বৈদ্য বলেছিল, আপনার ভাতিজার কোন রোগ হয়নি বা আছর করেনি, বরং তাঁর শিরার বিভিন্ন লক্ষণে মনে হচ্ছে, ইনি একজন মহান ব্যক্তিত্ব হবেন।

১৬। ২৪ বৎসর বয়স মুবারক হতে হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ব্যবসা পরিচালনা করেন।

১৭। ২৫ বৎসর বয়স মুবারকে হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা শাদী মুবারকের প্রস্তাব দেন এবং শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়। তখন হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বয়স মুবারক ছিল ৪০ বৎসর। শাদী মুবারকের মোহ্‌রানা ছিল ৫০০ দেরহাম (রৌপ্য মুদ্রা)।

১৮। ২৫ হতে ৩৫ বৎসর বয়স মুবারক পর্যন্ত বিশেষভাবে জনকল্যাণে নিয়োজিত থাকেন ও বিপন্ন মানুষকে আর্থিক সাহায্য করেন।

১৯। ৩৫ বৎসর বয়স মুবারকে পবিত্র ক্বাবা শরীফ সংস্কারে বিভিন্ন গোত্রের কলহ দূর করেন এবং হজরে আস্‌ওয়াদ নিয়ে যে ফিৎনা হয়, সেটাও সমাধা করেন।

২০। ৩৫ থেকে ৪০ বৎসর বয়স মুবারক পর্যন্ত হিরা গুহায় বিশেষভাবে ইবাদতে মশগুল হন। তিনি মাঝে মাঝে খাওয়ার জন্য বাড়ী আসতেন কিন্তু অধিকাংশ সময় হযরত খাদিজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা খাবার দিয়ে আসতেন।

২১। ৪০ বৎসর বয়স মুবারকে তৃতীয়বার সিনা মুবারক চাক করা হয়, ওহী নাযিল হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ঘোষণা করা হয়।

২২। নুবুওওয়াত প্রাপ্তির তৃতীয় বৎসর পর্যন্ত ভিতরে ভিতরে ইসলাম প্রচার করেন।

২৩। ৪৩ বৎসর বয়স মুবারকে প্রকাশ্যে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানান। আবু লাহাব তখন বিরোধিতা করেছিল, ফলে ‘সুরা লাহাব’ নাযিল হয়।

২৪। নুবুওওয়াতের ৫ম বৎসরে কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে আল্লাহ পাক-এর নির্দেশে ১৬ জন, কোন কোন মতে ১৫ জন নারী-পুরুষ নিয়ে আবিসিনিয়ায় প্রথম হিজরত করেন।

২৫। নুবুওওয়াতের ৬ষ্ট বৎসরে হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন হতে প্রকাশ্যে ক্বাবা শরীফে নামাজ পড়া শুরু হয়। তখন মুসলমানের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪০/৫৭ জন।

২৬। নুবুওওয়াতের ৭ম বৎসরে চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করেন।

২৭। নুবুওওয়াতের ৭ম হতে ১০ম বৎসর পর্যন্ত শিয়াবে আবু তালিবে অবস্থান করেছিলেন। এর দুই মাস পর আবু তালিবের মৃত্যু হয়, তার তিন মাস পর হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-বিছাল শরীফ লাভ করেন। এ দশম বৎসরকে বলা হয়, ‘আমুল হুযন’ অর্থাৎ শোকের বৎসর।

২৮। নুবুওওয়াতের এ ১০ম বছরের শেষের দিকে হযরত খাদিজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার পর, হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত আয়েশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (বয়স মুবারক ছিল ৬ বৎসর)-এর সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়।

২৯। নুবুওওয়াতের এ দশম বৎসরেই তায়েফ গমন করেন ও প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময় জ্বীন সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণ করে।

৩০। নুবুওওয়াতের দশম বৎসরের শেষে মদীনা শরীফ থেকে লোকজন আগমন করেন ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

৩১। নুবুওওয়াতের একাদশ বৎসরে প্রথম আকাবা হয়

৩৪২ নুবুওওয়াতের একাদশ বৎসরে স্বশরীরে মি’রাজ শরীফ সংঘঠিত হয়।

৩৩। নুবুওওয়াতের দ্বাদশ বৎসরেই হযরত মাসআব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে দ্বীনের তালিমের জন্য মদীনা শরীফে পাঠান।

৩৪। নুবুওওয়াতের ত্রয়োদশ বৎসরে বাইয়াতে উকবা সংঘঠিত হয়। এ বছরেই মুসলমানগণ মদীনা শরীফে হিজরত করেন। এ বৎসরেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নিয়ে হিজরত করেন এবং ছাওর গুহায় অবস্থান করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ঘটনা সংঘঠিত হয়।


পবিত্র মদীনা শরীফে


প্রথম হিজরীঃ হিজরতের সময় পথিমধ্যে বরিদা বিন হাসিব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করতে এসে নিজেই ৭০জন বাহিনীসহ ইসলাম গ্রহণ করে। অতঃপর কুবায় ১৪দিন অবস'ান করেন এবং সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন। মদীনা শরীফ গমনকালে বতনে ওয়াদি নামক স'ানে ১০০ জন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে নিয়ে জুময়ার নামাজ আদায় করেন এবং সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন। মদীনা শরীফে প্রবেশ করে ৭/৮ মাস হযরত আবু আইউব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গৃহে অবস্থান করেন। এ সময় মসজিদে নববী ও উম্মুল মু’মিনীনগণের কক্ষসমূহ নির্মাণ করা হয়। এরপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখান হতে নিজ অবস্থানে যান। এ সকল কক্ষের প্রত্যেকটি দৈর্ঘ্য ১০ হাত, প্রস্থ ৬ হাত এবং উঁচু একজন মানুষ দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে স্পর্শ করতে পারতো। এরপর আযানের প্রবর্তন হয়।

দ্বিতীয় হিজরীঃ ক্বিবলা পরিবর্তন, শাবান মাসে ক্বিবলা পরিবর্তনের আয়াত শরীফ নাযিল হয়। রমজান মাসে বদর যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এ যুদ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। আর কাফিরদের সংখ্যা এক হাজার। এ বৎসর যিলহজ্ব মাসে হযরত ফাতেমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৎসরই রোজা ফরজ হয়, ফিৎরা দেয়া ওয়াজিব হয়, জামায়াতের সাথে ঈদুল ফিৎরের নামায শুরু হয়।

তৃতীয় হিজরীঃ ওহুদ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়, হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত হাফসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে শাদী মোবারক সুসম্পন্ন হয়। উত্তরাধিকার আইন জারি হয়। এ বৎসর মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম করা হয়। হযরত জয়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয় এ বৎসরই।

চতুর্থ হিজরীঃ হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিলাদত লাভ করেন। এ বৎসরই মদ্য পান হারাম হয়, চোরের হাত কাটার দন্ডবিধি জারী হয়। হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে হিব্রু ভাষা শিক্ষার জন্য প্রেরণ। রাজির যুদ্ধ, বীরে মাউনা যুদ্ধ, বদরের দ্বিতীয় যুদ্ধ, সারিয়ায়ে বনী ছালমা, সারিয়ায়ে ইবনে উনাইছ ইত্যাদি সংঘটিত হয়। হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সাথে এ বৎসরই শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়।

পঞ্চম হিজরীঃ এ বৎসর মহিলাদের জন্য পর্দা ও তৎসংক্রান্ত অন্যান্য বিধান চালু হয়। যিনার শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত জারী হয়। হদ্‌ কায়েম-এর বিধান জারী হয়, তায়াম্মুমের বিধান এ বৎসরই জারী হয়। এ বৎসরই দওমাতুল জান্দালের যুদ্ধ, বনু কুরায়জার যুদ্ধ, পরিখার যুদ্ধ ইত্যাদি সংঘটিত হয়।

ষষ্ট হিজরীঃ হুদাইবিয়ার সন্ধি, এস্তেসকার নামায, জাতুরিকার যুদ্ধ, বনু লাহিয়ান যুদ্ধ বিভিন্ন দেশের বাদশাদের নিকট দূত প্রেরণ, বাদশা নাজ্জাসির নিকট দূত প্রেরণ, হেরাকিয়াসের নিকট দূত প্রেরণ, বাইয়াতে রিদওয়ান, হযরত উম্মে হাবিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়।

সপ্তম হিজরীঃ হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইসলাম গ্রহণ। নখর (হিংস্র) বিশিষ্ট পাখী খাওয়া নিষিদ্ধ, হিংস্র জন্তু খাওয়া হারাম, গাদা ও খ"চর খাওয়া হারাম, মু’তা বিবাহ হারাম, স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিণিময়ে তদপেক্ষা বেশী স্বর্ণ ও রৌপ্য গ্রহণ করা হারাম হওয়ার বিধান জারী হয়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বৎসরই বিষ পান করানোর চেষ্টা করা হয়। এ বৎসরই উম্‌রাতুল কাজা আদায় করেন, হযরত মায়মুনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত সুফিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন করেন।

অষ্টম হিজরীঃ মক্কা শরীফ বিজয়, মু’তার যুদ্ধ, হুনাইনের যুদ্ধ, মিম্বর নির্মাণ, তায়েফের যুদ্ধ, আওতাসের যুদ্ধ, সুদ হারাম হওয়ার বিধান এ বৎসরই জারী হয়।

নবম হিজরীঃ যাকাত ফরজ হয়, হজ্ব ফরজ হয়, তাবুকের যুদ্ধ, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হজ্ব যাত্রা (আমিরে হজ্ব) এবং বিভিন্ন কবিলার লোকদের দলে দলে ইসলাম গ্রহণ। মুনাফিকরা এ বৎসর মসজিদে যেরার তৈরী করে।

দশম হিজরীঃ হাজ্জাতুল বিদা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হজ্ব আদায়, বনু হারিছ ও বনু কায়াবদের ইসলাম গ্রহণ, কতিপয় খ্রীষ্টানদের সাথে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথোপকথন, নবম ও দশম হিজরীতে লোকগরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেন। এ সমস্ত গোত্রের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০টি। এভাবে অল্পসময়ের মধ্যেই সমুদয় আরববাসী, অগ্নি উপাসক, খ্রীষ্টান ও ইহুদীরা স্বেচ্ছায় আগ্রহের সাথে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নুবুওওয়াত লাভের তিন বৎসর পর হতে প্রায় ৬ষ্ট হিজরী পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১৬টি বৎসর স্বীয় জাতি, আত্মীয়-স্বজন, বর্হিশত্রু কতর্"ক আক্রমন সত্বেও, পৃথিবীর বুকে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আরবের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ও পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিকে দ্বীনের পরম বন্দনে আবদ্ধ করে তাদের মধ্যে ঐক্যের বীজ বপন করেন। আরবদের অধর্ম, অনাচার তাঁরই মহিমাময় মহান চারিত্রিক মাধুর্যে ও ব্যবহারে চিরকালের জন্য বিলুপ্ত হয়।

একাদশ হিজরীঃ মুসাইলামাতুল কাজ্জাবের নবী দাবী ও তাকে নিস্তানাবুদ করা, এ বৎসর ২৬শে সফর সোমবার উসামা ইবনে যাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নেতৃত্বে ওবনা নামক স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সৈন্যগণ তৈরী হচ্ছিলেন কিন্তু ২৯শে সফর বুধবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তথাপী তিনি সৈন্য বাহিনী পাঠিয়ে দিলেন।

২৯শে সফর বুধবার সকালে অসুস্থ হলেন, ঐ দিনই বিকালে একটু সুস্থ হলেন, এতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ খুশি হয়ে যাঁর যাঁর সামর্থ অনুযায়ী আল্লাহ্‌ পাক-এর রাস্তায় দান-খয়রাত করলেন আর এ দিনটিই সারাবিশ্বের মুসলমানগণ ‘আখিরী চাহার শোম্বা’ হিসেবে পালন করেন।

ঐদিন বিকালে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন, এ অসুস্থতা ৯ই রবিউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত চললো। ৯ই রবিউল আউয়াল শরীফ অসুস'তা আরো বৃদ্ধি পেল, ফলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে যেতে পারেননি। এ সময় ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত মোট ১৬ কি ১৭ ওয়াক্ত নামাযের ইমামতি করেন, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

অতঃপর ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ রোজ সোমবার শরীফ (ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি) আল্লাহ্‌ পাক-এর আহবানে সাড়া দিলেন এবং পর্দার অন্তরে চলে গেলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জিসিম মুবারক মঙ্গলবার পর্যন্ত মাটির উপরেই ছিল।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে দাফন মুবারক সম্পন্ন করা হয়। ৬৩ বৎসর বয়স মুবারকে আল্লাহ্‌ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌ পাক-এর সান্নিধ্যে চলে যান।

সন্মানিতা আহলিয়া বা উম্মাহাতুল মু;মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম 

উম্মাহাতুল মু'মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সংখ্যা ১৩ জন।

উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম
উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম
উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত যায়নাব বিন খুজাইমা আলাইহাস সালাম
উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম
উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত জুয়াইরিয়া আলাইহাস সালাম
উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম
উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত রাইহানা আলাইহাস সালাম
১০উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম।
১১উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছাফিয়্যা আলাইহাস সালাম।
১২উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারিয়া ক্বিবতিয়া আলাইহাস সালাম
১৩উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম

উনাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উম্মাহাতুল মু;মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম  দেখুন। অথবা নাম মুবারকের উপর ক্লিক করুন।


সন্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম 

সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আবনা তথা ছেলে আওলাদ আলাইহিমুস সালাম এবং মহাসম্মানিতা বানাত তথা মেয়ে আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন মোট আট (জন। সুবহানাল্লাহ!

১) ইবনু রসূল আল আউয়াল হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম
২) বিনতু রসূল আল উলা সাইয়্যিদাতুনাহযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম
৩) ইবনু রসূল আছ ছানী হযরত তাইয়্যিব আলাইহিস সালাম
৪) ইবনু রসূল আছ ছালিছ হযরত ত্বহির আলাইহিস সালাম
৫) বিনতু রসূল আছ ছানিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম
৬) বিনতু রসূল আছ ছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম
৭) বিনতু রসূল আর রবিয়া’সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম
৮)ইবনু রসূল আর রবি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম

সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি শুধু উম্মুল মুমিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত  মারিয়া ক্বিবত্বীয়াহ আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী  শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। আর অন্যান্য সকল আবনা আলাইহিমুস সালাম এবং বানাত  আলাইহিন্নাস সালাম উনারা উম্মুল মুমিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার  মাধ্যেমে  দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

উনাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নাম মুবারকের উপর ক্লিক করুন।


সাইয়্যিদুল কাওনাইন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পুর নূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতপূর্ণ হুলিয়া মুবারকের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।

হযরত জাবের বিন ছামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদা আমি চন্দ্র রাত্রিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তাকালাম। তখন তিনি চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত ছিলেন। এমতাবস্থায় আমি কখনো চাঁদের দিকে তাকাতাম আবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তাকাতাম। অতঃপর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাঁদের তুলনায় বহুগুণে সুন্দর ও উজ্জ্বল। (সুবহানাল্লাহ) (শামায়েলে তিরমিযী)
আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছিরত মুবারক, ছূরত মুবারক, আকার মুবারক, আকৃতি মুবারক ও সৌন্দর্য সম্পর্কে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। মূলতঃ সাইয়্যিদুনা নবী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক সৌন্দর্যে সমস্ত কিছু সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়েছে। সেই পবিত্রতম সৌন্দর্য মুবারকের উৎস হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকৃত সৌন্দর্য পেশ করার কোন ক্ষমতাই কোন মাখলুক তথা মানুষ রাখে না। তবু মানসপটে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটা দৃষ্টান্তমূলক অবয়ব পরিস্ফুটিত করার লক্ষ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কিছু উপমা পেশ করেছেন।
হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র চেহারা মুবারক সূর্যের ন্যায় উদ্ভাসিত হতো। (তিরমিযী শরীফ)
আফদ্বালুন নাস বাদাল আম্বিয়া, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র চেহারা মুবারক যেন দীপ্তমান চন্দ্র।” (আল ইনসানুল কামিল)
আল্লামা কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমাদের সামনে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিপূর্ণ মুবারক সৌন্দর্য প্রকাশ করা হয়নি, যদি তাঁর পূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশ করা হতো, তবে আমাদের চক্ষু নূর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখার শক্তি রাখত না।” (শামায়িলে তিরমিযী)
নিম্নে হাদীছ শরীফ-এর আলোকে নূরে মুজাস্‌সাম, মুহম্মদ মুস্তফা, আহমদ মুজতবা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আকার মুবারক, আকৃতি মুবারক, ছিরত মুবারক, ছূরত মুবারক ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করা হলো-
দৈহিক গঠন: সাইয়্যিদুর রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দৈহিক গঠন সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মধ্যম আকৃতির দেহ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। খুব লম্বাও ছিলেন না আবার বেটেও ছিলেন না, তিনি খুবই সুন্দর চেহারা মুবারকের অধিকারী ছিলেন। তাঁর চুল মুবারক অধিক কোঁকড়ানোও ছিল না আবার একেবারে সোজাও ছিল না, (সামান্য কোঁকড়ানো ছিল) শরীর মুবারক-এর রং ছিল- গোধূলী অর্থাৎ গন্দম রং-এর ন্যায়। তিনি হাঁটার সময় সামনের দিকে একটু ঝুঁকে হাঁটতেন। (শামায়িলে তিরমিযী)
চক্ষু মুবারক: বরকতময় মুবারক ছিল বড়, আকর্ষণীয় নয়নাভিরাম। চোখের মনি মুবারক ছিল গাঢ় কালো এবং মনির পার্শ্বেই সাদা অংশে হালকা লাল রেখা প্রতিভাত হতো। তিনি অভূতপূর্ব দৃষ্টি শক্তির অধিকারী ছিলেন।
আল ইনসানুল কামিল নামক কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনের আলোতে যেরূপ দেখতেন, রাতের আঁধারেও তদ্রূপ দেখতেন এবং পিছনেও অনুরূপ দেখতেন, যেরূপ দেখতেন সামনে।”
মাথা মুবারক: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র মাথা মুবারক ছিল (মানানসই) সাধারণের চেয়ে একটু বড়। তবে উহা তাঁর দেহ মুবারকের জন্য মানানসই ছিল।
কপাল মুবারক: আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশস্ত কপাল মুবারক-এর অধিকারী ছিলেন।
নাসিকা মুবারক: তাঁর নাসিকা মুবারক কিছুটা উঁচু ছিল এবং তাতে নূর চমকাতো।
দন্ত মুবারক: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দন্ত মুবারক ছিল সরু, মনোরম, সুমসৃণ, উজ্জ্বল ও চকচকে। সামনের দন্ত মুবারকে কিঞ্চিৎ ফাঁক ছিল, হাসি দিলে তা মুক্তার মত চমকাতো। কথা বলার সময় তা থেকে নূরের আলোক ছটা বের হতো। দাড়ি মুবারক: তার দাড়ি মুবারক ছিল ঘন, কালো এবং উভয় চোয়াল মুবারক পরিপূর্ণ, যা খুবই সুন্দর দেখাত। চুল মুবারক: তাঁর মাথার চুল মুবারক ছিল সামান্য কোঁকড়ানো এবং বাবরী, যা কানের লতি পর্যন্ত ঝুলানো ছিল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ৬৩ বছর হায়াত মুবারকে মোট চুল মুবারক-এর মাঝে প্রায় ১৪-২৮টি চুল মুবারক পেকেছিল। গর্দান মুবারক: গর্দান মুবারক ছিল পুরু, গোশতযুক্ত। উভয় স্কন্ধের মধ্যবর্তী স্থান চওড়া ছিল। পেট ও বক্ষদেশ মুবারক: পেট মুবারক ও বক্ষদেশ সমতল ছিল। কিন্তু বক্ষদেশ সুপ্রশস্ত ছিল। বক্ষ হতে নাভী মুবারক পর্যন্ত হালকা পশম বিদ্যমান ছিল। হাত ও পা মুবারক: তাঁর উভয় হাত ও পা মুবারকে গোশত পরিপূর্ণ ছিল। হাত মুবারক মোটামুটি (মানানসই) দীর্ঘ ছিল। পা মুবারক-এর তলদেশ বেশ গভীর ও মসৃণ ছিল। হাঁটার সময় সামনের দিকে একটু ঝুঁকে হাঁটতেন। মহরে নুবুওওয়াত মুবারক: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘাড় মুবারক-এর উপর কবুতরের ডিমের সমতুল্য এক খণ্ড গোশত ছিল, যার রং মুবারক ছিল হালকা লাল। আর উহার চার পাশে কাল তিলের মত দেখা যেত। ইহাকে মহরে নুবুওওয়াত বলা হয়। (সুবহানাল্লাহ)
পরিশিষ্ট: পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন মানুষের পক্ষে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর-এর প্রকৃত ছিরত মুবারক, ছূরত মুবারক বর্ণনা করা সাধ্যের বাইরে। তথাপি যে সমস্ত বর্ণনা আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পত্রিকার সংক্ষিপ্ত কলেবরে তা বর্ণনা করা সম্ভব হলো না। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন-এর কাছে বিনীত প্রার্থনা আমাদেরকে প্রিয় হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকৃত দর্শন লাভে ধন্য করুন।

বিঃদ্রঃ উল্লিখিত বর্ণনাসমূহ নির্ভরযোগ্য ছিরতগ্রন্থ এবং শামায়েলে তিরমিযী থেকে চয়ন করা হয়েছে।

আকরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, শাফিউল মুজনিবীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘শা’রে’ বা ‘শরীয়ত প্রণেতা’।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরীয়তের ধারক ও বাহক বা শরীয়ত প্রণেতা। তিনি যদি কোন জিনিসকে হারাম বলতেন, তবে তা চিরকালের জন্য হারাম হয়ে যেতো এবং কোন জিনিসকে হালাল বলতেন, তা চিরকালের জন্য হালাল হয়ে যেতো।
নিম্নে তার কয়েকটি উদাহরণ বর্ণিত হলো-
১. একবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করলেন, “হে মানুষ! তোমরা হজ্জ করবে, হজ্জ করা তোমাদের উপর ফরয। জনৈক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! প্রত্যেক বছরই কি হজ্জ করা ফরয? তার উত্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যদি আমি হ্যাঁ বলে, তবে প্রত্যেকের উপর প্রতি বছর হজ্জ করা ফরয হয়ে যাবে।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ)
২. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলেছিলেন, “হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বিদায়ের পর তাঁকে গোসল দিবেন। অথচ কোন স্বামীই তার মৃত স্ত্রীকে গোসল দিতে পারে না। কারণ মৃত্যুর সাথে সাথেই বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। (শামী)
৩. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামাত সহকারে কয়েকদিন তারাবীহ্‌ নামায পড়ার পর তা ছেড়ে দেন। ছাড়ার কারণ প্রসঙ্গে বলেছেন, “যদি আমি এ নামায এভাবে সবসময় পড়ি, তবে তোমাদের উপর ফরয হবার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে এটা তোমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
৪. একবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “পবিত্র মক্কা নগরীতে কেউই কাঁটাযুক্ত গাছ তুলতে পারবে না। কোন জন্তু শিকার করতে পারবে না।” হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে ইজখার নামক ঘাস কাটার অনুমতি দান করুন। কেননা তা ঘরের চালে ব্যবহৃত হয় এবং কামারগণ কয়লার পরিবর্তে সেগুলো জ্বালিয়ে থাকে। তদুত্তরে তিনি বললেন, “হ্যাঁ, ইজখার কাঁটার অনুমতি দেয়া হলো। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, শরহে নববী, ফতহুল মুলহীম)
৫. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাচা আবূ তালিব, যে ৪২ বছর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমত করেছে। তাঁর ইন্তিকালের সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে আমার চাচাজান আপনি কলেমা শরীফ পাঠ করুন।” উত্তরে আবূ তালেব বললো, “হে আমার ভাতিজা! এখন যদি আমি কলেমা শরীফ পড়ি, তাহলে মানুষ বলবে- ইন্তিকালের সময় সে তার ভাতিজার দ্বীন গ্রহণ করেছে।” তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আপনি শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলুন, মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ বলার দরকার নেই। এতেই আপনার জন্য আমি সুপারিশ করবো।” (সুবহানআল্লাহ) অথচ কিয়ামত পর্যন্ত কেউ যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে সে জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ‘মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না বলবে। (সমূহ সীরাতের কিতাব)
৬. একবার একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এসে বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ইচ্ছাকৃত একটি ফরয রোযা ভেঙ্গেছি, এখন আমি কি করবো? জবাবে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি একাধারে দু’মাস কাফ্‌ফারা স্বরূপ রোযা রাখ।” উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি অসুস্থ এবং রোযা রাখতে অক্ষম। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তা না পারলে তুমি ষাটজন মিসকীনকে পেটপুরে দু’বেলা খাওয়াও।”তখন উক্ত ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি খুব গরীব এবং আমি মিসকীনদের খাওয়াতেও অক্ষম।” অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যদি তাও না পার, তাহলে একজন গোলাম আযাদ করে দাও।” তখন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার কোন গোলাম নেই।’ অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি কিছুক্ষণ বস।” এমন সময় এক ঝুড়ি বা এক টুকরি খেজুর হাদিয়া আসলো। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললেন, “তুমি টুকরিটি নিয়ে যাও এবং মদীনা শরীফের দরিদ্রের মধ্যে বিলিয়ে দাও।” উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার চেয়ে গরীব মনে হয় মদীনা শরীফে আর কেউ নেই। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমার কাফ্‌ফারা তুমিই খেয়ে ফেলো।” (সুবহানাল্লাহ)
(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘শারে’ বা শরীয়ত প্রণেতা’, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনন্য মর্যাদা-মর্তবার বহিঃপ্রকাশ।


শাফিউল উমাম, নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পান পাত্র মুবারক ও মুবারক পান পদ্ধতি।

হযরত ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাদেরকে একটি লৌহপাত যুক্ত মোটা কাঠের নির্মিত পেয়ালা বের করে দেখালেন এবং বললেন, “ছাবিত! এটা নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পেয়ালা।” (শামায়েলে তিরমিযী শরীফ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সাইব ইবনে খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (খাব্বাব) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রোদে শুকনো গোশত একটি পাত্রে নিয়ে আহার করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি পানি ভর্তি একটি মাটির পাত্রের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং পানি পান করলেন। (আখলাকুন্‌ নবী)
হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের রেশমী ও রেশম সুতি মিশেল কাপড় পড়তে নিষেধ করেছেন। তিনি সোনা ও রূপার পাত্রে পান করা থেকেও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “এসব জিনিস দুনিয়া। তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) জন্য নির্ধারিত। আর তোমাদের জন্য আখিরাতে নির্দিষ্ট। (রিয়াদুছ্‌ ছলেহীন)
পান পদ্ধতি: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যমযমের পানি পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়িয়েই তা পান করেছেন।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
ব্যাখ্যা: তিন প্রকার পানি দাঁড়িয়ে পান করা মুস্তাহাব। যমযম কূপ এবং ওযুর পর অবশিষ্ট পানি ও মুর্শিদ বা পীর সাহেব-এর পানকৃত অবশিষ্ট পানি।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাউকে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। হযরত কাতাদাহ্‌ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, দাঁড়িয়ে খানা খাওয়ার ব্যাপারে কি হুকুম? তিনি বললেন, এটা খারাপ অথবা নিকৃষ্টতর কাজ। (রিয়াদুছ ছলেহীন)
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানিতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। একজন বললো- পাত্রে কখনো কখনো ময়লা আবর্জনা দেখা গেলে তখন কি করতে হবে? তিনি বললেন, ঢেলে ফেলে দেবে। লোকটি বলল, আমি এক নিঃশ্বাসে পান করতে তৃপ্ত হই না। তিনি বললেন, তখন মুখ থেকে পেয়ালা দূরে সরিয়ে নিবে। (রিয়াদুছ ছলেহীন)
হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানি পান করতে তিনবার শ্বাস নিতেন। (রিয়াদুছ ছলেহীন)


ছাহিবুল মদীনাহ, ছাহিবুল মক্কাহ, ছাহিবুল হাত্বীম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত ইল্‌মের অধিকারী ॥ সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখন তাঁর মু’জিযা ॥ তিনি মুয়াল্লিম হিসেবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে আক্ষরিক জ্ঞান শিক্ষা দিতেন।

“যিনি (আল্লাহ পাক) কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আলাক্ব/৪) অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বয়ং আল্লাহ পাক লিখার যাবতীয় ইল্‌ম দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন, তিনি (আল্লাহ পাক) ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন এবং বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আর রহ্‌মান/২, ৩)
এখানে ‘বয়ান’ এর তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সৃষ্টি হয়েছে এবং হবে। অর্থাৎ পূর্ব ও পরবর্তী সব ঘটনার জ্ঞান। (তাফসীরে মা’আলিমুত তানযীল)
অর্থাৎ আয়াত শরীফ-এর অর্থ হচ্ছে- আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সমস্ত কিছুর জ্ঞান দান করেছেন।
যেমন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জ্ঞান দান করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, ছাহিবে ছলাত ও সালাম, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমাকে (শুরু হতে শেষ পর্যন্ত) সমস্ত ইল্‌ম প্রদান করা হয়েছে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইল্‌মের অধিকারী। আর লিখাও হচ্ছে ইল্‌মের একটা অংশ। লিখা যে ইল্‌মের অংশ তা সূরা ‘আলাক্ব’-এর ৪ নম্বর আয়াত-এর ‘আল্লামা বিল ক্বলাম’ ‘তিনি (আল্লাহ পাক) তাঁেক কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন’, এ আয়াত শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। কারণ ‘আল্লামা’ শব্দটির মাছদার বা ক্রিয়ামূল হচ্ছে ‘তা’লীম’ বা শিক্ষা দেয়া। অতএব, স্বয়ং আল্লাহ পাক যাকে লিখার উপকরণ তথা কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন তিনি লিখতে জানতেন না বা লিখতে পারতেন না এ ধারণা পোষণ করা মিথ্যা তোহমত ও কুফরীর নামান্তর। মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই লিখতে জানতেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে (ওহী) লিখতেন, অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অক্ষর লিখার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে ইরশাদ করেন, দোয়াত এভাবে রাখ, কলম এভাবে ঘুরাও, ‘বা’কে এভাবে সোজা করে লিখ, ‘সীন’কে পৃথক কর, আর ‘মীম’কে বাঁকা করোনা, অথচ তিনি দুনিয়াবী কোন কাতিবের (লিখকের)-এর নিকট থেকে লিখা শিখেননি, আর কোন প্রাচীনকালীন কিতাব থেকেও তা পড়েননি।” (সুবহানাল্লাহি বিহামদিহী)
উল্লেখ্য, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লিখার প্রয়োজন হতো না। কারণ মানুষ লিখে থাকে এজন্য যে, লিখে না রাখলে ভুলে যাবে। কিন্তু রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লিখার প্রয়োজন নেই। কারণ তিনি সমস্ত কিছুই জানতেন এবং উনাকে সমস্ত ইল্‌ম দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি আল্লাহ পাক-এর কায়িম-মুক্বাম অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর যেমন লিখার প্রয়োজন নেই। তেমনি হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরও প্রয়োজন নেই। আর তাঁর মুয়াল্লিম স্বয়ং আল্লাহ পাক। সুতরাং তাঁর লিখা-পড়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। আর তিনি যদি লিখা-পড়া করতেন তাহলে বাতিলপন্থীরা সন্দেহ করতো। যেমন, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আবির্ভাবের পরিচয় দেয়া ছিল কয়েকটি। যেমন, তিনি হবেন ‘উম্মী’ (অর্থাৎ নবীগণের মূল হবেন) এবং সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখবেন কিন্তু পার্থিব ওস্তাদের কাছে লিখা-পড়া করবেন না। কোন বই-পুস্তক পড়বেন না। যেমন, এ সম্পর্কে কুরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছে, “এর পূর্বে (নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে) হে হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি না কোন কিতাব পড়তেন এবং না নিজ হাতে কোন কিছু লিখতেন, যদি তা করতেন, তবে বাতিলপন্থীরা নিশ্চয়ই সন্দেহ করতো (যে এটা আল্লাহ পাক-এর বাণী নয়, আপনার রচিত কোন কিতাব)।” (সূরা আনকাবুত/৪৮)
আর তিনি যে লিখতে জানতেন এ প্রসঙ্গে “ছহীহ বুখারী শরীফ”-এর ‘কিতাবুল ইল্‌ম’-এর ‘বাবু কিতাবাতিল ইল্‌মে’ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, “হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল। তখন তিনি উপস্থিত ছাহাবীদের বললেন, তোমরা এক টুকরা কাগজ নিয়ে এস। আমি তোমাদের জন্য কতিপয় উপদেশ লিখে দিব, যাতে তোমরা পরবর্তী কালে পথভ্রষ্ট হবে না। হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবীয়ে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিলক্বদ মাসে ওমরাহ্‌ করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু মক্কাবাসী তাঁকে মক্কা শরীফে প্রবেশ করতে দিতে রাজী ছিলনা, যতক্ষণ না তিনি তাদের সাথে এ মর্মে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হন যে, তিনি সেখানে (মক্কা শরীফে) তিনদিনের অধিক অবস্থান করবেন না। অতঃপর যখন সন্ধিপত্র লিখার উপর ঐক্যমত হলো, তারা লিখলো ‘এতদ্বারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব্‌ রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাথে সন্ধি করলেন।’ অতঃপর মক্কার কাফিররা বললো, আমরা এটা মানিনা, কারণ যদি আমরা আপনাকে আল্লাহ্‌র রসূল হিসেবে মেনে নিয়ে থাকি তাহলে আমরা আপনাকে তো কোন রকম বাঁধাও দিতাম না বরং আপনি হলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ”ইবনে আব্দুল্লাহ্‌ আলাইহিস সালাম। সুতরাং এটাই লিখতে হবে।” তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর রসূল এবং আমিই হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম-এর পুত্র, তারপর তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, “রসুলুল্লাহ” শব্দটা কেটে দিন।”হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, না, আল্লাহ পাক-এর কসম! আমার পক্ষে (আল্লাহ্‌ পাক প্রদত্ত্ব) আপনার (গুণবাচক) নাম কাটা সম্ভব নয়। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত চুক্তিপত্র খানা হাতে নিলেন। তাঁর নিজ হাতে লিখার ইচ্ছা ছিলনা, তবুও সুন্দরভাবে লিখলেন, “এতদ্বারা চুক্তি করলেন মুহম্মদ ”ইবনে আব্দুল্লাহ্‌ আলাইহিস সালাম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।”


নাবিয়্যুল উম্মী বা শ্রেষ্ঠতম নবী


কুরআন শরীফে এবং হাদীছ শরীফে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যুল উম্মী’ দ্বারা মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যে, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু দুনিয়াবী কোন শিক্ষক কর্তৃক লিখা-পড়া শিখেননি সেহেতু তিনি “নাবিয়্যুল উম্মী” লক্ববে অভিহিত। যা তাঁর শ্রেষ্ঠ নবী এবং রসূল হওয়ার প্রমাণ। কিন্তু তার পরেও তিনি যে লিখতেন সেটা ছিল তার মু’জিযা। যেমন, বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকারী আল্লামা কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “এখানে উম্মী মানে এ লিখাটা হচ্ছে তাঁর মু’জিযা।” (বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড)
মুলতঃ “নাবিয়্যুল উম্মী” এখানে ‘উম্মী’ অর্থ সাইয়্যিদ, মূল, অভিভাবক, প্রধান, শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি। অর্থাৎ যিনি সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌ সালামগণের মূল বা যাকে ব্যতীত কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌ সালামগণই সৃষ্টি হতেন না তিনিই “নাবিয়্যূল উম্মী” লক্ববে ভূষিত। উপরোক্ত অর্থ ছাড়াও অভিধানে ‘উম্মী’ শব্দটি ভিন্ন অর্থেও ব্যবহৃত হয় কিন্তু তা আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নবী গনের নবী, রসূল গনের রসূল, নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে প্রযোজ্য নয়।
স্মরণীয় যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌ সালামগণের ক্ষেত্রে কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফের এমন তাফসীর, অনুবাদ, ব্যাখ্যা করা যাবেনা যার কারণে তাঁদের শানের খিলাফ হয়। তাদের শানে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করার অর্থই হচ্ছে তাঁদের বিরোধিতা করা; আর তাদের বিরোধিতা করা হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর বিরোধিতা করা। ফলে তাদের জাহান্নাম ছাড়া আর কোন পথ নেই।
আয় আল্লাহ পাক! আমাদের সকলকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নাবিয়্যূল উম্মী তথা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন তিনি যে লিখতে জানতেন এ সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সঠিক আক্বীদা রাখার তাওফীক দান করুন এবং এর খিলাফ সমস্ত কুফরী আক্বীদা থেকে হিফাযত করুন। (আমীন)


ছাহিবুল কাওছার, ছাহিবুল মাহ্‌শার, ছাহিবুল মাক্বামিল মাহমূদ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মত মানুষ নন।


হযরত আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের কারো মত নই। (বুখারী ১/২৬৩ আবূ দাউদ/১৩৭)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনুরূপ নই। (বুখারী ১/২৬৩, ফতহুল বারী ৪/১৬৪)
হযরত আবূ সাঈদ খুদুরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি আকৃতিগতভাবে তোমাদের মত নই।” (বুখারী ১/২৬৩, ফতহুল বারী ৪/১৬৫)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে আমার অনুরূপ কে রয়েছে? (বুখারী ১/২৬৩, ফতহুল বারী ৪/১৬৭) অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে কেউই আমার মত নয়। বা আমি তোমাদের কারো মত নই। তাই জনৈক কবি বলেছেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাশার, তবে তিনি অন্যান্য বাশারের মত নন। যেরূপ ইয়াকুত পাথর অন্যান্য পাথরের মত নয়।”
বাহ্‌রুল উলুম হযরত মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল আলী লখনবী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি “মীর যাহিদ” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমস্ত বিষয়েরই ইল্‌ম দান করেছেন, যা মহান আল্লাহ পাক-এর মহান কুদরতী কলম বা কলমে আ’লার আওতায়ও আসেনি। যা লাওহে; মাহ্‌ফুজও আয়ত্ব করতে পারেনি। কস্মিনকালেও সৃষ্টির শুরু থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত তাঁর মত কেউ পয়দা হয়নি, কেউ তাঁর সমকক্ষ হবে না। সমস্ত কায়িনাতে তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।”
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো অনেক দূরের কথা, উনার পুত-পবিত্রা আহলিয়াগণ অর্থাৎ হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের শানেই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “হে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আহলিয়াগণ! আপনারা অন্যান্য মহিলাদের মত নন।” (সূরা আহযাব/৩২)
সুতরাং যেই রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলিয়া হওয়ার কারণে উনারা দুনিয়ার সকল মহিলাদের থেকে তুলনাহীন হলেন, সেই মহান ব্যক্তিত্ব যিনি একমাত্র আল্লাহ পাক-এর পরেই সমস্ত প্রকার শ্রেষ্ঠত্ব, ভালাই ও কল্যাণের একচ্ছত্র অধিকারী, তিনি আমাদের মত মানুষ হন কি করে? মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “(হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মত একজন বাশার, তবে আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়।” (সূরা কাহ্‌ফ/১১০)
এ আয়াতে কারিমা-এর প্রেক্ষিতে অনেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের মতই মানুষ বলে থাকে। (নাউজুবিল্লাহ)
প্রকৃতপক্ষে এটা সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ ও ভুল। কারণ আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার প্রতি ওহী নাযিল হয়। বরং আমাদের মধ্যে কেউ যদি নিজের প্রতি ওহী নাযিলের দাবী করে, তবে সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। যেমন কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি সম্প্রদায়।
মূলতঃ উপরোক্ত আয়াত শরীফের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা হলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র আদম সন্তান হিসেবে ‘মেছাল বাশার’ বা মানুষের অনুরূপ। সেজন্যই বনী আদমকে আশরাফুল মাখলুকাত করা হয়েছে, অর্থাৎ আল্লাহ্‌ পাক মানুষকে আশরাফিয়াত দান করেছেন বা সৃষ্টির সেরা করেছেন। হাক্বীক্বত তিনি আমাদের মত মানুষ নন।
লক্ষ-কোটি দিক বা বিষয় রয়েছে, যার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মত মানুষ নন, বরং তিনি “নূরে মুজাস্‌সাম” বা নূরের সৃষ্টি। হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত যে সকল পুতঃপবিত্র মহিলা ও পুরুষ আলাইহিমুস সালামগণের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছেন, তাঁদের সকলের মধ্যেই তিনি সরাসরি নূর আকারে স্থানান্তরিত হয়েছেন এবং সবশেষে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম-এর রেহেম শরীফ হতে নূর হিসেবেই যমীনে তাশরীফ এনেছেন। সে কারণে তাঁর শরীর মুবারকের কোন ছায়া ছিল না। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকে যা কিছু ছিল, তা সবই ছিল পবিত্র থেকে পবিত্রতম। এমনকি তাঁর প্রস্রাব ও ইস্তিঞ্জা মুবারকও ছিল পাক ও পবিত্র। যা পান করার কারণে জাহান্নামী লোকের জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। তিনি যে হাযত পুরা করতেন তাও কোন মানুষ দেখতে পেত না। যমিন তা সাথে সাথেই গ্রাস করে ফেলত বা খেয়ে ফেলত। তাঁর শরীর মুবারকে কশ্মিনকালেও মশা-মাছি বসতো না।
উম্মতের জন্য চারটির বেশী বিবাহ করা হারাম। কিন্তু আল্লাহ পাক এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য তা ছিল না। তিনি স্বয়ং নিজেই শারে’ বা শরীয়ত প্রণেতা, তিনি যা করেছেন, বলেছেন ও সম্মতি দিয়েছেন তাই শরীয়ত। পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে তা নয়। সাধারণ মানুষ পরস্পর পরস্পরকে যেভাবে ডেকে থাকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেভাবে ডাকলে কুফরী হবে।
সাধারণ মানুষের কলেমা শরীফ হচ্ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসুলুল্লাহ’ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পক্ষান্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কলেমা শরীফ হচ্ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইন্নি রসুলুল্লাহ’ যা সাধারণ মানুষ দাবী করলে কাফির হবে। সাধারণ মানুষের আহলিয়াকে তালাক দিলে বা স্বামী মারা গেলে আহলিয়াকে অন্য কেউ বিবাহ করতে পারে। কিন্তু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিদায়ের পরে হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে অন্য কোন মানুষের জন্য বিবাহ করার চিন্তা করাটাও হারাম! সাধারণ মানুষের মৃত্যূর পরে তার মীরাছ (পরিত্যাক্ত সম্পদ বণ্টন করতে হয়। কিন্তু আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্ষেত্রে সেরূপ নয়। কারণ তিনি হায়াতুন্‌নবী।
এমনিভাবে অসংখ্য, অগণিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা একমাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য খাছ। যা অন্য কোন মানুষ তো দূরের কথা অন্য কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌ সালামগণকেও দান করা হয়নি। কাজেই তিনি কোন দিক থেকেই আমাদের মত নন।


মাদীনাতুল ইল্‌ম, মুতারফ্‌ফিউদ দারাজাত, মুক্বীমুস্‌ সুন্নাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সুন্নত ‘আজওয়া খেজুর এবং ইছমিদ সুরমা মুবারক-এর ফযীলত’।


হে আমার হাবীব! আপনি উম্মতদেরকে বলুন, তোমরা যদি আল্লাহ্‌ পাক-এর মুহব্বত প্রত্যাশী হও; তবে আমার ইত্বায়াত বা অনুসরণ-অনুকরণ কর। তাহলে আল্লাহ্‌ পাক তোমাদেরকে ভালবাসবেন। তোমাদের গুনাহ্‌খাতা সমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং আল্লাহ্‌ পাক তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হয়ে যাবেন।” (সূরা আলে ইমরান-৩১)
আর হাদীছ শরীফে সাইয়িদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, “যে ব্যক্তি আখিরী যামানায় আমার একটি সুন্নতকে পালন করবে, সে ব্যক্তি একশত শহীদের সমান ছওয়াব পাবে।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
উপরোক্ত পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াতে কারীমাসমূহ এবং হাদীছ শরীফের মাধ্যমে সুন্নত পালনের ফাযায়িল-ফযীলত সমন্ধে বুঝতে পারলাম।
আর সুন্নত পালন না করার ভয়াবহতা সমন্ধে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, “আমার প্রত্যেক উম্মত বেহেশ্‌তে যাবে একমাত্র সেই ব্যক্তি ব্যতীত যে আমাকে অস্বীকার করেছে। প্রশ্ন করা হলো, কে এই অস্বীকারকারী? তিনি বললেন, যে আমাকে অনুসরণ করলো, সে বেহেশ্‌তে যাবে, আর যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ করলো না, সেই ব্যক্তি হচ্ছে অস্বীকারকারী, সে জাহান্নামে যাবে।” (বুখারী শরীফ)
আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, “যে আমার সুন্নতকে তরক (অস্বীকার) করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”(বুখারী, মুসলিম)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মাধ্যমে আমরা সুন্নত পালন না করার ভয়াবহতা সমন্ধে জানতে পারলাম।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ যে, আজওয়া খেজুর খাওয়া এবং ইছমিদ সুরমা চোখে ব্যবহার করা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

আজওয়া খেজুর
আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অত্যন্ত প্রিয় ও পছন্দনীয় খাবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলো তাজা, পাকা খেজুর। যে প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিনে যখনই দু’বার আহার করেছেন তার মধ্যে একবার খেজুর খেয়েছেন। অন্য হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ঘরে খেজুর নেই, সে ঘরের লোক অভুক্ত।”
আর ‘আজওয়া’ নামক খেজুর ছিল আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অত্যন্ত প্রিয়।
যে প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আজওয়া (নামের) খেজুর অত্যধিক প্রিয় ছিল।” (আখলাকুন্‌ নবী)
মূলতঃ আজওয়া নামক খেজুর মদীনা শরীফের সর্বোত্তম খেজুর। এটা অত্যন্ত মোলায়েম, দেখতে কালো, বীচি অত্যন্ত ছোট এবং খেতে অত্যন্ত মজা তথা সুস্বাদু।
হযরত ইবনে তীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ব হস্তে এ খেজুর গাছ বপন করেছেন।
হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রোজ সকালে উঠে খালি পেটে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, তার উপর (ঐ দিন) বিষ অথবা যাদুটোনা ক্রিয়া করবে না।”
হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, “আজওয়া জান্নাতের খেজুরের অন্তর্ভুক্ত এবং তাতে বিষের নিরাময় বর্তমান। হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম মাথা ঘোরা রোগে এই খেজুর খেতে বলতেন।

ইছমিদ সুরমা
মূলতঃ চোখে সুরমা ব্যবহার করা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। তিনি রাতে ঘুমানোর আগে চোখ মুবারকে সুরমা ব্যবহার করতেন।এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু হতে একটি হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি সুরমাদানি ছিলো। তিনি ঘুমানোর পূর্বে তা থেকে প্রত্যেক চোখে তিনবার সুরমা ব্যবহার করতেন। আর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ছিল ইছমিদ সুরমা। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম হতে বর্ণিত আছে, “রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ‘ইছমিদ’ নামক সুরমা ছিলো। তিনি ঘুমানোর পূর্বে প্রত্যেক চোখে তিনবার লাগাতেন।” (শামায়িলে তিরমিযী)
মূলতঃ ‘ইছমিদ’ নামক সুরমার বহুবিধ উপকারিতার কথা জানা যায়। হাদীছ শরীফে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের সুরমার মধ্যে ‘ইছমিদ সুরমা’ সর্বোত্তম। যা চোখের দৃষ্টিশক্তিকে সতেজ করে এবং চোখের পাতা উজ্জল করে। এতদ্ব্যতীতও সুরমা ব্যবহারে মন, মেধা শক্তিশালী হয় এবং চোখ সকল প্রকার রোগমুক্ত থাকে।

সুরমা ব্যবহারের নিয়ম:
হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায়। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেজোড় সংখ্যায় সুরমা লাগাতেন, প্রত্যেক চোখে তিনবার অথবা এক চোখে তিনবার এবং অপর চোখে দু’বার।
মূলতঃ মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে ‘আজওয়া খেজুর ও ইছমিদ সুরমা’ পাওয়া যায়। আমাদের দেশ হতে প্রতিবছর অনেক লোক হজ্জব্রত পালন উপলক্ষে পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে গমন করে থাকেন। তাদের প্রত্যেকের উচিত সুন্নত পালনের লক্ষ্যে আজওয়া খেজুর এবং ইছমিদ সুরমা নিয়ে আসা। ফলশ্রুতিতে তারাও আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দু’টি সুমহান সুন্নত পালন করে অশেষ নেকীর ভাগীদার হতে পারবেন এবং তাদের ওসীলায় আরও অনেক মুসলমান নর-নারী এই মহান দু’টি সুন্নত পালনের সুযোগ পাবেন। (আমীন)


সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, সনদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন ‘নূরে মুজাস্‌সাম অর্থাৎ তিনি আপাদমস্তক নূর’।


নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ্‌ পাক-এর পক্ষ হতে এক মহান নূর এবং একখানা সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে।” (সূরা মায়িদা-১৫)
উল্লেখ্য, এ আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্‌ পাক “নূর” শব্দ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই বুঝিয়েছেন, যেহেতু তিনি আপাদমস্তক “নূর বা নূরের তৈরি।”
এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আবী সাউদ”-এর ৩য় জিঃ ১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “বর্ণিত আয়াত শরীফের প্রথম শব্দ অর্থাৎ ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম; আর দ্বিতীয় শব্দ অর্থাৎ ‘কিতাবুম মুবীন’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- কুরআন শরীফ।” হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক্‌-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্‌ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হয়ে যাক। আপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ্‌ পাক সর্ব প্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন?
তিনি বললেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ পাক সবকিছুর পূর্বে আপনার নবীর নূর মুবারককে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর প্রথম সৃষ্টিই হচ্ছে “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (মসনদে আব্দুর রায্‌যাক) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নূরের সৃষ্টি বা “নূরে মুজাস্‌সাম” তা নিম্নোক্ত বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয়: যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- হে আমার রব! আমাকে কি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? জবাবে আল্লাহ্‌ পাক বলেন, হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি আমার (সৃষ্টিকৃত) সাদা নূর (যা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্বচ্ছতা ও নির্মলতার প্রতি লক্ষ্য করলাম, যে নূরকে আমি কুদরতের দ্বারা আমার হুকুমে প্রথমেই সৃষ্টি করে রেখেছিলাম। আমি সম্মান প্রকাশার্থে উক্ত নূরকে অর্থাৎ আমার নূর বলে সম্বোধন করি। অতঃপর উক্ত নূর থেকে একটি অংশ বের করে নিলাম অর্থাৎ “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিন ভাগে ভাগ করলাম। প্রথম ভাগ দ্বারা আপনাকে অর্থাৎ আপনার আকৃতি মুবারককে ও আপনার আহলে বাইতকে সৃষ্টি করি, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা আপনার স্ত্রী ও ছাহাবীগণকে সৃষ্টি করি, আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা যারা আপনার প্রতি মুহব্বত রাখেন তাঁদেরকে সৃষ্টি করেছি”.....(নূরে মুহম্মদী- ৪৭)”
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দেহ মুবারক সৃষ্টির উপাদান হচ্ছে- “মূল নূরে হাবীবী।” যে ‘নূরে হাবীবী’ হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম থেকে হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্‌ আলাইহিস্‌ সালাম হয়ে মা হযরত আমিনা আলাইহাস্‌ সালাম-এর রেহেম শরীফে সম্পূর্ণ কুদরতীভাবে স্থান নিয়েছিল। আমাদের অবস্থা কিন্তু তার সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম। যদি তাই হয়, তবে একথা কি করে বলা যেতে পারে যে, রসূল আমাদের মত।”আকৃতিগত ভাবে মেছাল আমাদের মত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোন দিক দিয়েই আমাদের মত নন, বরং তিনি আমাদের থেকে সৃষ্টিগত উপাদান, কর্মকাণ্ডে ও মর্যাদায় ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে আলাদা অর্থাৎ এক কথায় সৃষ্টির মাঝে তাঁর তুলনা তিনি এককভাবে নিজেই। যেমন আল্লাহ্‌ পাক স্রষ্টা হিসেবে তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তদ্রুপ সৃষ্টির মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরও সমকক্ষ কেউ নেই। কোনদিক দিয়েই না।“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরে মুজাস্‌সাম বলেই তাঁর শরীর মুবারকের কোন ছায়া ছিল না।”এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ “নাওয়াদেরুল উছূল” কিতাবে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, হযরত হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি “নাওয়াদেরুল উছূল” কিতাবে হযরত জাকওয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই সূর্য ও চাঁদের আলোতেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “ছায়া মুবারক” দেখা যেত না।”হযরত আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “শিফাউস সুদুর” কিতাবে লিখেছেন,  “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর ছায়া মুবারক যমীনে পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন নূর। অতঃপর যখন তিনি সূর্য অথবা চাঁদের আলোতে হাঁটতেন তখন তাঁর ছায়া মুবারক দৃষ্টিগোচর হতো না।”এ প্রসঙ্গে “শরহে মাওয়াহেবুল লাদুন্নীয়া শরীফে” উল্লেখ আছে, “চাঁদ ও সূর্যের আলোতেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছায়া মুবারক ছিল না। কেননা তিনি নূর ছিলেন।” (আর নূরের কোন ছায়া নেই) জালালু মিল্লাত ওয়াদ্বীন, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “আনমুযাজুল লবীব ফী খাছায়িসিল হাবীব” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দ্বিতীয় বাবের চতুর্থ অধ্যায়ে লিখেন- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছায়া মুবারক মাটিতে পড়েনি। চাঁদ ও সূর্যের আলোতেও তাঁর ছায়া মুবারক দেখা যেতো না। হযরত আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু সম্পূর্ণ নূর ছিলেন সেহেতু তাঁর ছায়া মুবারক ছিল না। হযরত ইমাম রাজীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অবশ্যই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নূর সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে যেতো।” এ প্রসঙ্গে “শেফা শরীফ” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নূরের দেহ মুবারকের ছায়া মুবারক সূর্য ও চাঁদের আলোতেও পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নূর।”
অনুরূপভাবে “আফযালুল কোরায়” উল্লেখ আছে, “নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘নূর’ ছিলেন। নিশ্চয়ই তিনি যখন চাঁদ ও সূর্যের আলোতে হাঁটতেন তখন তাঁর ছায়া মুবারক প্রকাশ পেতো না।”বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফফাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি “নাসীমুর রিয়াজ” নামক কিতাবে লিখেন যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “নবুওওয়াতের” প্রমাণের মধ্যে এটাও একটি প্রমাণ যে, তাঁর শরীর মুবারকের ‘ছায়া মুবারক’ ছিল না। যখন তিনি সূর্য ও চন্দ্রের আলোতে হাঁটতেন তখনও তাঁর “ছায়া মুবারক” পড়তো না। কেননা তিনি (আপাদ মস্তক) “নূর”। ... কিতাবুল ওয়াফা-এর লেখক, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “ছায়া মুবারক” ছিল না। তাঁর নূরের উজ্জলতা সূর্য ও বাতির আলোর উপর প্রাধান্য লাভ করতো ।”
এ প্রসঙ্গে “ফয়জুল ক্বাদীর শরহে জামিউছ্‌ ছগীর” কিতাবের ৩য় জিঃ, ৭৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “হযরত আবুল উজাফা হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার বিলাদতের সময় আমার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস্‌ সালাম দেখেন যে, একখানা “নূর মুবারক” তাঁর থেকে আলাদা হয়ে বছরা শহরের দালান-কোঠা সমূহ আলোকিত করে ফেলেছে।”“বুলুগুল আমানী” কিতাবের ২০ জিঃ, ১৮৩ পৃষ্ঠায় এ হাদীছ শরীফখানা বর্ণিত আছে যে, “হযরত ওসমান ইবনে আবিল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, যে রাত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাদত লাভ করেন, সে রাত্রে আমার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস্‌ সালাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সে রাত্রে আমি ঘরের ভিতর ‘নূর’ ব্যতীত কিছুই দেখিনি।”শুধু তাই নয়, আরশ-কুরসী, লউহ-ক্বলম, জান্নাত-জাহান্নাম, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-তারকা এমনকি সমস্ত কুল-ক্বায়িনাত সৃষ্টি হয়েছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নূর মুবারক থেকে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত কিতাব মাদারিজুন নুবুওওয়াতে উল্লেখ আছে, “আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন, এবং সব কিছুই সৃষ্টি হয়েছে আমার নূর মুবারক থেকে।”তিনি যখন রাস্তায় চলতেন তখন সেই রাস্তায় নূরে ঝলমল করত। তিনি আপাদমস্তক নূর তার জ্বলন্ত প্রমাণ হল হযরত আয়িশা ছিদ্দিক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ। যেমন- হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাত্রে বাতির আলোতে বসে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাপড় মুবারক সিলাই করতেছিলাম। এমন সময় বাতিটি নিভে গেল এবং আমি সুঁচটি হারিয়ে ফেললাম। এর পরপরই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর চেহারা মুবারকের নূরের আলোতে আমার অন্ধকার ঘর আলোকময় হয়ে গেল এবং আমি নূরের আলোতে আমার হারানো সুঁচটি খুজে পেলাম। (সুবহানাল্লাহ)
কাজেই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অসংখ্য দলীল আদিল্লাহ এর ভিত্তিতে প্রতিভাত হলো যে, আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরে মুজাস্‌সাম তথা আপাদমস্তক নূর, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করলে কাফির হওয়া ছাড়া কোন পথই নেই। যার সাক্ষী স্বয়ং আল্লাহ পাক। পরিশেষে মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফে এই আরযী যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নূরে মুজাস্‌সাম তথা আপাদমস্তক নূর এই আক্বীদায় আক্বীদাভুক্ত করে আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি রিযামন্দী হাছীল করার তাওফীক্ব দান করুন। (আমীন)

নূরে আউয়াল, নূরে কায়িনাত, নূরে মুজাস্‌সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকের ফযীলত।

আল্লাহ পাক-এর অনেক সুন্দরতম নাম মুবারক রয়েছে। সে সমস্ত নাম মুবারকের মাধ্যমে আল্লাহ পাককে ডাক।” (সূরা আরাফ-১৮০)
এ আয়াত শরীফের তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরও অনেক সুন্দর সুন্দর নাম মুবারক রয়েছে; সে সমস্ত নাম মুবারকের মাধ্যমে তোমরা উনাকে স্মরণ কর।”
মূলতঃ সমস্ত প্রশংসার মালিক মহান আল্লাহ পাক, যিনি তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সবকিছুই বিশেষভাবে তাৎপর্যমন্ডিত করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারককেও তিনি করেছেন অনুপম বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। যার হাক্বীক্বত উপলদ্ধি করা কেবল তাঁর আখাছছুল খাছ আশিকদের পক্ষেই সম্ভব।
স্মর্তব্য যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় ও রহমতপূর্ণ নামসমূহ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক এবং তা কেবল একটি দু’টি নয় বরং অগণিত ও অসংখ্য।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক ব্যক্ত হয়েছে কুরআন শরীফে, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে এবং উলামায়ে আরিফীনগণের কিতাবে।
কুরআন শরীফে বিবৃত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনেক নাম মুবারকের মাঝে- মুহম্মদ, আহমদ, ইয়াসীন, ত্বাহা, মুয্‌যাম্মিল, মুদ্দাছ্‌ছির, আব্দুল্লাহ, রহমাতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
এখানে স্মর্তব্য যে, হযরত গউছুল আ’যম, বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেক রাসিখুনা ফিল ইল্‌ম্‌ বা সাবিকুন (যাঁরা নিজেদের রূহানীয়তের সম্মৃদ্ধি হেতু স্বয়ং রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও হিকমত জেনে নিতে সক্ষম) তাঁদের মতে, কুরআন শরীফে উল্লেখিত হুরূফে মুকাত্তায়াতগুলোতে যেমন রয়েছে তাওহিদের গুঢ় তত্ত্ব, তদ্রুপ রয়েছে রিসালতের নিগুঢ় ইঙ্গিত এবং অন্যান্য বিষয়ের ইঙ্গিত। তার সাথে রয়েছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা-মর্তবার গুপ্ত রহস্যসহ নাম মুবারক-এর অন্তর্ভুক্তি।
মুলতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকের যাহির এবং বাতিন দু’টি দিক রয়েছে। উলামায়ে আরিফীনগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকের যাহিরী ও বাতিনীগত দিকের অর্থ প্রকাশ করেছেন।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সকল নাম মুবারকের মাঝে ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ নাম মুবারক দু’টি বিশেষরূপে খাছ। এ নাম মুবারক দু’টিরও রয়েছে যাহিরী ও বাতিনী পরিচয়।
উল্লেখ্য, “মুহম্মদ” নামের মাঝে রয়েছে- দু’টি ‘মীম’। এর ব্যাখ্যা অনেক। যেমন একটি ‘মীম’ দ্বারা মুহিব্বিয়াত (মুহব্বতকারী)। অপর ‘মীম’ দ্বারা মাহবূবিয়াতের (যাকে মুহব্বত করা হয়) ইঙ্গিত প্রকাশ পায়।
এর প্রথম ‘মীম’ দ্বারা মালিক তায়ালা বা আল্লাহ পাক এবং দ্বিতীয় ‘মীম’ দ্বারা মাখলূক্বাত বা সৃষ্টি জগতের ইশারার প্রকাশ ঘটে।
আবার প্রথম মীম দ্বারা মুরীদ (ইচ্ছাকারী) এবং দ্বিতীয় মীম দ্বারা মুরাদ (যাকে ইচ্ছা করা হয়)-এর ইশারাও অনেকে ব্যক্ত করেছেন।
মূলকথা- এর দ্বারা বুঝা যায় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম স্বরূপ অথবা আল্লাহ পাক-এর সাথে মানুষ ও মাখলুক্বাতের সম্পর্ক তৈরি করনেওয়ালা এবং সৃষ্টিকর্তার তরফ হতে সৃষ্টির প্রতি প্রেরিত ও সৃষ্টির তরফ হতে সৃষ্টিকর্তার নিকট ওসীলা স্বরূপ।
উলামায়ে আরিফীনগণ উল্লেখ করেছেন, “যাহির হিসেবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং বাতিন হিসেবে তাঁর নাম মুবারক ‘আহমদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আর ‘মুহম্মদ’ নামের মত ‘আহমদ’ নামেরও অনেক গুপ্তভেদ রয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক-এর এক নাম মুবারক ‘আহাদ’ আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক ‘আহমদ’। ‘আহমদ’ নাম মুবারকে মধ্যস্থিত মীম দ্বারা মাখলুকের ইশারা প্রকাশ পায় অর্থাৎ মাখলুকের মধ্যে তিনি আহাদ বা একা, তাঁর কোন তুলনা নেই এবং মীম দ্বারা মাহবুবিয়াতের পূর্ণতার দিকেও ইশারা প্রকাশ পায়। এছাড়া এই মীম অক্ষর দ্বারা আল্লাহ পাক-এর দিকে ইশারা করা হয়। মূল কথা- আল্লাহ তায়ালার সাথে তিনি একা অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালার সাথে তাঁর সম্পর্কই সর্বদা বিদ্যমান।
‘মুহম্মদ’ নাম মুবারকের অর্থ সর্বোত্তম প্রশংসিত আর ‘আহমদ’ নাম মুবারকের অর্থ সর্বোত্তম প্রশংসাকারী।
মূলতঃ এ উভয় মুবারক নামই আল্লাহ পাক-এর কাছে চরম, পরম পছন্দনীয়। যে কারণে এই নামে যাঁদের নামকরণ করা হয়েছে বা হবে তারাও আল্লাহ পাক-এর কাছ থেকে অশেষ রহমত, বরকত ও ফযীলত প্রাপ্ত হবেন। যেমন- এ প্রসঙ্গে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, প্রাণের আঁক্বা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক-এর দরবারে দু’ ব্যক্তিকে দন্ডায়মান করানো হবে, আর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর হুকুম দিবেন। এতে বিস্মিত হয়ে উক্ত দু’ ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার কাছে আরয করবেন, হে বারে ইলাহী! কোন জিনিস আমাদেরকে জান্নাতের অধিকারী ও উপযোগী করলো? আপনার রহমত দ্বারা জান্নাতে যাবো, এ ধরনের আশা করা ছাড়া আমরা তো আর কোন নেক আমল করিনি। তাঁদের কথা শুনে রব্বুল ইজ্জত বলবেন, “যাও তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। কেননা আমি স্বয়ং জাতের কসম দ্বারা আমার উপর অবশ্য কর্তব্য করে দিয়েছিলাম যে, আমি ঐ ব্যক্তিকে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করাবনা, যার নাম হবে ‘আহমদ’ বা ‘মুহম্মদ’।” (হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
হযরত জা’ফর ইবনে মুহম্মদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রেওয়ায়েত করেছেন যে, ক্বিয়ামতের দিন, ইয়া মুহম্মদ বলে ডাকা হবে। তখন যে সমস্ত ব্যক্তির নাম মুহম্মদ ছিল, তারা সকলে মাথা উঠাবে। আল্লাহ পাক বলবেন, “তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-এর নাম মুবারক-এর সাথে যাদের নাম মিল রয়েছে তাদের প্রত্যেককে আমি ক্ষমা করলাম।” (হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
আর শুধু পরকালেই নয়, দুনিয়াতেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক-এর অনুকরণে নাম করণের ফযীলত বহুমুখী। নুজহাতুল মাজালিস ও তাফসীরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ আছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, “যদি কারো সন্তান হবার সম্ভাবনা থাকে এবং সে যদি নিয়ত করে যে, তার ছেলে হলে তার নাম মুহম্মদ রাখা হবে, তবে তার ছেলেই হবে। এমনি করে যার সন্তান বাঁচে না সে যদি নিয়ত করে যে, ছেলে বাঁচলে তার নাম মুহম্মদ রাখা হবে, তবে তার সন্তান বেঁচেই থাকবে।’ উল্লেখ্য এরকম আরো অনেক ফযীলতের কথা উল্লেখ রয়েছে।
মূলতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুকরণে নাম রাখা দুনিয়ায় যেমন রহমত, বরকত ও ফযীলতের কারণ, আখিরাতেও তেমনি শাফায়াত, নাযাত ও বরকতের কারণ।
অতএব, অর্থহীন, খারাপ অর্থযুক্ত এবং বিধর্মী ব্যক্তিদের অনুকরণে সন্তানের নাম রাখা পরিত্যাগ করে আমাদের সকলেরই মুসলমান হিসেবে আমাদের প্রিয় রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকের অনুকরণে নাম রেখে ফযীলত ও বরকত হাছিলে প্রবৃত্ত হওয়া কর্তব্য।


খলীলুল্লাহ, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, খতীবুল আম্বিয়ায়ি ওয়াল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের তা’যীম-তাকরীমের উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ।


“যাঁরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ঈমান আনবে, তাঁকে তা’যীম করবে, তাঁর খিদমত করবে এবং তাঁর উপর অবতীর্ণ কুরআন শরীফকে অনুসরণ করবে তারাই হবে সফলকাম।” (সূরা আ’রাফ- ১৫৭)
হযরত আবূ মাহজুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মস্তক মুবারকের সম্মুখভাগে দীর্ঘ এক গুচ্ছ কেশ ছিল। তিনি যখন কোথাও উপবেশন করতেন তখন তা মাটিতে গিয়ে পড়ত। উনাকে সেই কেশ গুচ্ছ কেটে ফেলতে বলা হলে তিনি বলেন, তা সম্ভব নয়। কেননা নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্নেহ ভরে আমার মাথার এই অংশ স্পর্শ করেছিলেন।
হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর টুপি মুবারকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কয়েকটি কেশ মুবারক রক্ষিত ছিল। জিহাদের সময় উনার মাথা মুবারক থেকে টুপিটি পড়ে গেলে টুপিটি উদ্ধারের জন্য তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলেন। প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, আমার এই প্রাণপণ চেষ্টা অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, শুধু নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র কেশ মুবারক উদ্ধারের জন্য আমাকে এই সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়েছে, কেননা তাঁর পবিত্র কেশ মুবারক মুশরিকদের হাতে পড়ে অবহেলিত হবে তা আমার প্রাণে আদৌ সহ্য হবে না।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আদত মুবারক ছিল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদের মিম্বর শরীফের উপর যে স্থানে বসতেন সে স্থান মুবারকে হাত বুলিয়ে নিজ মুখমন্ডলে মালিশ করতেন।
হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি মদীনা শরীফে কখনও ঘোড়া বা উটের পিঠে বসতেন না। বলতেন, যে শহরের মাটিতে নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শায়িত রয়েছেন তথায় অশ্বারোহন করে চলতে আমার অত্যন্ত লজ্জাবোধ হয়।
বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মজলিসে তা’লীম দিতেন তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এমন তা’যীমের সাথে মজলিসে বসতেন, দেখে মনে হতো উনাদের মাথার উপর কোন পাখি বসে আছে, একটু নড়লেই তা উড়ে যাবে।
হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম মুবারক শুনতেন তখন তাঁর মুখমন্ডলের রং বদলে যেত এবং তিনি মাথা নত করতেন। বর্ণিত আছে, তিনি অজু ব্যতীত কখনো হাদীছ শরীফ বর্ণনা করতেন না। অনেক সময় তিনি হাদীছ শরীফ বর্ণনার পূর্বে গোসল করে নতুন কাপড় পরতেন এবং সুগন্ধি লাগাতেন।
হযরত কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তা’যীম-তাকরীম ও ভক্তি শ্রদ্ধা প্রদর্শন তাঁর বিছাল শরীফের পূর্বে যেরূপ ফরয ছিল, বিছাল শরীফের পরও ঠিক সেইরুপ ফরয। যখনই তাঁকে স্মরন করা হয়, তাঁর হাদীছ শরীফ ও সুন্ন্‌তকে স্মরন করা হয় এবং তাঁর নাম ও আখলাক মুবারক শ্রবন করা হয় তখনই তাঁর প্রতি তা’যীম প্রদর্শন করা কর্তব্য।
আরো বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এর তা’যীম-তাকরীম এত অধিক পরিমাণ ছিল যে, যখন আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অযু করতেন তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ অযুর পানি মুবারক মাটিতে পড়তে দিতেন না। অযুর পানি মুবারক গ্রহণ করার জন্য তাঁদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়ে যেত। নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থুথু মুবারক ও নাক মুবারক পরিষ্কার করবার সময় এইরূপ অবস্থার সৃষ্টি হত। দৌড়া-দৌড়ি আরম্ভ হয়ে যেত। প্রতিযোগিতা হত কে সর্বাগ্রে ও সর্বাধিক থুথু মুবারক ও নাকের পানি মুবারক ধরতে পারেন তা নিয়ে এবং উনারা তা গ্রহন করা মাত্রই তা নিজেদের মুখমন্ডলে ও শরীরে মালিশ করে নিতেন। এক কথায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর তা’যীম-তাকরীম ছিল কল্পনাতীত। নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কোন কথা বললে, কোন আদেশ-নির্দেশ মুবারক দিলে তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম মাথা নত করে কথা মুবারক শুনতেন এবং ব্যস্ত হয়ে পড়তেন আদেশ নির্দেশ মুবারক পালন করার জন্য। (সুবহানাল্লাহ)
উরওয়া ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, কসম আল্লাহ তায়ালার, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যে বেমেছাল তা’যীম-তাকরীম করেছেন, কোন বাদশাহকেও তার অনুচরবর্গ অনুরূপ তা’যীম প্রদর্শন করতে কোথাও কখনো শুনিনি বা দেখিনি। আমি রোম, পারস্য ও আবিসিনিয়ার বাদশাহদের দরবারে গিয়েছি, কিন্তু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণদের মত এমন বেমেছাল তা’যীম-তাকরীম কোথাও দেখিনি।
আল্লাহ পাক সূরা ফাত্‌হ- ৮ ও ৯ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন, আপনাকে (ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাক্ষী, সুসংবাদদাতা, এবং সতর্ককারী স্বরূপ প্রেরণ করেছি যেন তোমরা (হে মানুষ) আল্লাহ পাক-এর উপর এবং তাঁর রাসূল-পাক-এর উপর ঈমান আনয়ন করতে পার এবং তাঁর রাসূলের তা’যীম ও সম্মান করতে পার।
মহান আল্লাহ পাক নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদার বিকাশ ও মহিমা বৃদ্ধির জন্য সমস্ত কায়িনাতকে তাঁহার তা’যীমের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে বলেছেন। সে জন্যই আল্লাহ পাক নামাজ, আযান, একামত, তাশাহ্‌হুদ, সমস্ত খুতবাতে এক কথায় তাঁর ইবাদতের প্রতিটি ক্ষেত্রে নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে উনার তা’যীমের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।
আল্লামা জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মছনবী শরীফে উল্লেখ করেছেন,
“মোস্তফা আয়নায়ে জিল্লে খোদাস্ত,
মুনআকাছ দর ওয়ায় হামা খোয়ে খোদাস্ত”
অর্থাৎ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন খোদার নূরানী তাজাল্লী দর্শনের আয়না স্বরূপ। ঐ আয়নাতেই খোদার পবিত্র জাতের সবকিছু প্রতিবিম্ব ও প্রতিফলিত হয়। সুতরাং তোমরা উনার তা’যীম-তাকরীম ও স্মরণ যথাযথভাবে আদবের সাথে করো।


আল্‌জামিউ, জালীলুল ক্বদ্‌রি, জাওয়ামিউল কালিমি, নূরে মুজাস্‌সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অপরিসীম ইল্‌ম্‌ সর্বপ্রকার সীমার উর্ধ্বে।


“আমি তোমাদেরকে সামান্যতম ইলম দান করেছি। (সূরা বণী ঈসরাইল- ৮৫)
খালিক মালিক মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন হচ্ছেন ‘আলিমুল গইব’ অর্থাৎ সর্ব প্রকার গইব বা অদৃশ্য বস্তু বা বিষয়ের ইল্‌ম আল্লাহ পাক-এর রয়েছে। আল্লাহ পাক বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ছাড়াই সকল ইলমের বা ইলমে গইবের অধিকারী।
আর এরূপ ইল্‌মে গইব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালামে পাকে ইরশাদ করেন, “আসমান-যমীনে আল্লাহ পাক ব্যতীত কারো ইল্‌মে গইব নেই।” (সূরা নমল-৫৫) অর্থাৎ বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ব্যতীত যে ইল্‌মে গইব তা শুধুমাত্র আল্লাহ পাক-এরই রয়েছে।
প্রথমোক্ত আয়াত শরীফে ইলমের স্বল্পতা মহান আল্লাহ পাক-এর সাধারণ বান্দাদের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ পাক-এর বিশেষ বিশেষ বা খাছ বান্দাগণ তথা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্‌ সালামগণ এবং হাক্বীক্বী নায়িবে নবী ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া তথা খাছ খাছ ওলী আল্লাহগণ এ হুকুমের বাইরে। অর্থাৎ দুনিয়াতে মানুষ বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক ইত্যাদি যাই হোক না কেন তার জ্ঞান সামান্য থেকে সামান্যতম।
পক্ষান্তরে যাঁরা মহান আল্লাহ পাক-এর গুণে হাক্বীক্বীভাবে গুণান্বিত তথা নবী রসূল আলাইহিমুস্‌ সালামগণ, বিশেষ করে সকল নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ হাবীব বা বন্ধু হওয়ার কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাকই তাঁকে সমস্ত প্রকার ইলম দান করেছেন। আল্লাহ পাক-এর কায়িনাতে এমন কোন বিষয় ছিল না যা তিনি জানতেন না বা জানেন না।
অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন “মুত্তালা আলাল গইব” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে সর্ব প্রকার ইল্‌মে গইব দান করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “দয়াময় আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আর রহমান ১-৪)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে খাযিনে’ উল্লেখ আছে, “বলা হয়েছে যে, ইনসান দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর বয়ান দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে, পূর্বাপর সমস্ত কিছুর ইল্‌ম আল্লাহ পাক তাঁকে দান করেছেন। কেননা তাঁকে পূর্ববর্তী পরবর্তী এবং পরকাল সম্পর্কে সকল গাইবী বিষয়ের ইল্‌ম দান করেছেন।” অনুরূপ তাফসীরে মায়ালিমুত তানযীল, হুসাইনী, ছাবীতেও উল্লেখ আছে।
হাদীছ শরীফের বিখ্যাত ও মশহুর কিতাব ‘মিশকাত শরীফে’ উল্লেখ আছে, “হযরত আব্দুর রহমান বিন আইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আমার রবকে উত্তম ছূরত মুবারকে দেখেছি। আমার রব বললেন, (হে আমার হাবীব!) মুকার্‌রব ফেরেশ্‌তাগণ কোন বিষয়ে আলোচনা করছে? আমি বললাম, আপনিই অধিক জানেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তাঁর রহমতের হাত আমার দু’কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন। আমি তাঁর ফয়েজের শীতলতা আমার মধ্যে অনুভব করলাম। অতঃপর আসমান-যমীনের সকল বিষয় ও বস্তুর ইলম আমার অর্জিত হয়ে গেল।”
এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মিরকাত শরীফে’ লিখেন, “আল্লামা ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “সামাওয়াত” দ্বারা আসমানসমূহ এমনকি তারও উপরের সমস্ত সৃষ্টির ইলমকে বুঝানো হয়েছে। যেমন মি’রাজ শরীফের ঘটনা দ্বারা বুঝা যায়। আর ‘আল আরদ’ জিন্‌স (জাতি) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, ঐ সমূদয় বস্তু যা সমস্ত যমীনের মধ্যে বরং তারও নিচে রয়েছে তার সব বিষয়েরই ইলম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অর্জিত হয়ে যায়। (শুধু তাই নয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন) আমার জন্যে মহান আল্লাহ পাক গইব-এর সকল দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন।”
মূলতঃ এই প্রকারের হাদীছ শরীফ আয়াত শরীফ-এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা এর বিষয়টা বুঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে তিনি সমস্ত ইল্‌ম ও নিয়ামতসহই সৃষ্টি হয়েছেন। কাজেই নতুন করে দেয়ার মত বিষয় নয়। বরং যা দেয়া হয়েছে সে বিষয়টা সমস্ত কায়িনাতকে বুঝানোর জন্য অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির শুরু থেকে জান্নাতবাসীদের জান্নাতে প্রবেশ এবং দোযখবাসীদের দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সকল বিষয়ের সংবাদ প্রদান করেন। এগুলো যারা স্মরণ রাখতে পেরেছেন তাঁরা স্মরণ রেখেছেন আর যাঁরা স্মরণ রাখতে পারেননি তাঁরা ভুলে গেছেন।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
‘ছহীহ মুসলিম শরীফে” আরো উল্লেখ আছে যে, “হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে তার সব কিছুই বর্ণনা করে দিলেন, কোন কিছুই বাদ দিলেন না।”
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন “আমি সমস্ত ইলমসহ প্রেরীত হয়েছি।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ-৫১২)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “মাদারিজুন নুবুওওয়াতে” উল্লেখ করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল বিষয় বা বস্তু সম্পর্কেই অবহিত ছিলেন। তিনি আল্লাহ পাক-এর শান তার আহকাম বা বিধি-বিধান, তাঁর ছিফাত বা গুণাবলী তার আসমা বা নাম সমূহ তাঁর আফয়াল বা কর্মসমূহের এবং আদি-অন্ত, যাহির-বাতিন ইত্যাদি সর্ব প্রকার ইলমের অধিকারী ছিলেন।”
অনুরূপ আরো ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর কায়িনাতের সর্বপ্রকার ইলমের অধিকারী ছিলেন। কাজেই, ইলমের স্বল্পতা বা ইলমের সীমা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য প্রযোজ্য নয় বরং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন- “মুত্তালা আলাল গইব” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে পরিপূর্ণ ইলমে গইব দান করেছেন। শুধু তাই নয়, বরং পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌ সালামগণ এবং হক্কানী ওলীআল্লাহগণকেও মহান আল্লাহ পাক ইলমে গইব দান করেছেন বা করেন। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা। এ আক্বীদাই সকলকে পোষণ করতে হবে। এর খিলাফ বা বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা গুমরাহী ও কুফরীর নামান্তর।



No comments:

Post a Comment