আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ্। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুন। এখানে রয়েছে ইসলামী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জানা অত্যাবশ্যক।***
যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা সহ অনলাইনে ফ্রি ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সুযোগ ***
ডাঃ আহমদ ইমতিয়াজ ডি.এইচ.এম.এস, বি.এইচ.এম.সি (ঢাকা) মোবাইল - 01914440430 ই-মেইলঃ drahmadimtiaj@gmail.com ***

শহীদ আহমদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি

হযরত ইমাম সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি

পবিত্র আবু দাঊদ শরীফ ও মিশকাত শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত আছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি আমার উম্মতের জন্য প্রতি হিজরী শতকের শুরুতে একজন করে মুজাদ্দিদ প্রেরণ করবেন। যিনি সম্মানিত দ্বীন উনার তাজদীদ তথা সংস্কার করবেন।” সুবহানাল্লাহ।
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুতাবিক ত্রয়োদশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ হচ্ছেন শাহ ছূফী হযরত সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ বিরলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ১২০১ হিজরী সনের পবিত্র ছফর শরীফ মাস-এ বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। তিনি উনার যামানায় সর্ব প্রকার বাতিল ও বিদয়াতীদের কর্মকা-কে ভেঙে দিয়েছিলেন। এ ভারত উপমহাদেশ থেকে তিনি ব্রিটিশ বেনিয়াদেরকে উৎখাতের জন্য সর্বপ্রথম সর্বশ্রেণীর মানুষদেরকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। শিখদের সাথে উনার কয়েক দফা জিহাদ হয়েছিল এবং এতে তিনিই বিজয় লাভ করেছিলেন। কিন্তু কিছু মুনাফিক ও উলামায়ে ‘সূ’দের মুনাফিকী ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে উনাকে শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করতে হয়। তিনি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করেছিলেন এ জন্য উনাকে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন ও শহীদে বালাকোট বলা হয়। তিনি উনার যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলী ও মুজাদ্দিদ ছিলেন। উনার সিলসিলায় লক্ষ লক্ষ ওলীআল্লাহ পয়দা হয়েছিলেন, হচ্ছেন এবং হবেন। বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ মুজাদ্দিদে আ’যম ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ঊর্ধ্বতন সিলসিলায় তিনি রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারতবর্ষে প্রবেশ করলো তখন এই ভারতবর্ষ ছিলো ওলী আউলিয়াদের আবাদস্থল। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি , শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের হেদায়েত এবং মারেফতের বিকাশস্থল। ইংরেজরা গায়ের জোরে এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নিলেও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে তাদের কোন প্রভাব ছিলো না। পরবর্তীতে ইংরেজদের অমানুষিক নির্যাতন যখন সিমা অতিক্রম করলো বিখ্যাত ওলী হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তখন এই উপমহাদেশকে “দারূল হরব” হিসাবে ফতোয়া দিলেন। কারন তখন এখানে ব্রিটিশদের চরম নির্যাতনের ফলে ইসলাম পালন করাই অসম্ভব হয়ে পরে। এরই মধ্যে আল্লাহ পাক দুনিয়াবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ এবং মুসলমান জাহানের মুক্তির দিশারী রূপে আত্মপ্রকাশ ঘটান এক বিখ্যাত ওলী আল্লাহ উনাকে। যাঁর নাম মুবারক হচ্ছে হযরত সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। ইতিপূর্বে তিনি বাইয়াত গ্রহন করেন হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত মুবারকে। হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার এই মুরীদ সাইয়্যিদুনা শহীদ আহমদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সীমাহীন যোগ্যতা দেখে বিমোহিত হন, এবং চার তরীক্বায় খিলাফত প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, তিনি সাইয়্যিদুনা শহীদ আহমদ বেরেলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কামালত দেখে এক পর্যায়ে বলেন, কোন মানুষ আমার কাছে ১২ বছরে যা হাসিল করতে পারবে তারা সাইয়্যিদুনা শহীদ আহমদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট থেকে ১২ দিনে তা হাসিল করতে পারবে। সুবহানাল্লাহ্ !!
এ কারনে ইতিহাস সাক্ষী হযরত সাইয়্যিদুনা শহীদ আহমদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বেলায়েতের দাপটে চতুর্দিক থেকে মানুষ উনার কাছে বাইয়াত হতে আসতে লাগলো। কিতাবে বর্নিত আছে, উনার ত্রিশ লক্ষ মুরীদ ছিলো। সুবহানাল্লাহ্!
ইংরেজদের এহেন দুঃশাষন দেখে তিনিও উনার শায়েখ আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতোয়া অনুযায়ী ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ইংরেজরা বুঝতে পারলো সাইয়্যিদুনা শহীদ আহমদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এখনি দমাতে না পারলে ভারতবর্ষে ইংরেজদের অস্তিত্ব বলে কিছু থাকবে না। কারন উনার বিপুল পরিমানের জানবাজ মুরীদে স্রোতে মূহূর্তেই ইংরেজরা ভেষে যাবে। তাই তারা উনাকে প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করলো। ইতিপূর্বে তিনি খিলাফতের ডাক দেন। সমগ্র ভরতবর্ষের বড়বড় আলিমগন উনার হাত মুবারকে খিলাফতের বাইয়াত গ্রহন করেন। এসব দেখে ইংরেজদের ভিত কেঁপে ওঠে। পরবর্তীতে তারা এক ফাঁদ পাতে ষড়যন্ত্রের। তাদের ষড়যন্ত্র মোতাবেক সিমান্তের পাঠান দের বেঈমানীর মাধ্যমে বালাকোটের ময়দানে শিখদের মাধ্যমে অতর্কিত আক্রমণে সাইয়্যিদুনা শহীদ আহমদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উনার সঙ্গী সাথী সহ সেই হৃদয় বিদারক কারবালার শহীদদের মত নির্মম ভাবে শহীদ করা হয়।
ভারতবর্ষের সবাই সাইয়্যিদুনা শহীদ আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার শান মান সম্পর্কে অবহিত ছিলো।
হযরত সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ বেরেলভী আলাইহিস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সিলসীলা থেকে ফয়েজপ্রাপ্ত হয়ে শুরু থেকে এ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ গাউস, কুতুব, আবদাল, নুকাবা, নোজাবা ইত্যাদি হয়েছেন এমনকি গত শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদুয্ যামান হযরত আবু বকর সিদ্দীক ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিও ওনার সিলসিলার অন্তর্ভূক্ত।
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ গোলাম মর্তুজা তার কলকাতা থেকে প্রকাশিত “চেপে রাখা ইতিহাস”- কিতাবের ২০৯ পৃষ্ঠায়বর্ণনা করেন, “হযরত সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ বেরেলভী (রহমতুল্লাহি)-এর ওফাত হওয়ার পর যে সব আন্দোলন, বিদ্রোহ বা সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছিলো, সেগুলোকে বিকৃত করে (বৃটিশ রাজশক্তি) তাদের নাম পাল্টে কোনটাকে ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ কোনটাকে ‘ওহাবী আন্দোলন’ বলেছে।”

উক্ত কিতাবের ২০৫ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে, “আলিগড়ের সৈয়দ আহমদ ও বেরেলীর হযরত সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ রহমতুল্লাহি দু’জনই ইতিহাস প্রসিদ্ধ মানুষ। তবে আলিগড়ের আহমদ সাহেবও পেয়েছেন ইংরেজদের পক্ষ থেকে ‘স্যার’ উপাধী, প্রচুর সম্মান, চাকুরীর পদন্নতি প্রভৃতি। আর বেরেলীর সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ রহমতুল্লাহি ইংজেদদের পক্ষ থেকে পেয়েছেন অত্যাচার ও আহত হওয়ার উপহার। আর সব শেষে শত্রুদের চরম আঘাতে তাঁকে শহীদ হতে হয়েছে। 

No comments:

Post a Comment