পবিত্র হজ্ব
পবিত্র
হজ্জ সন্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পাঁচটি বুনিয়াদের একটি।
প্রত্যেক
স্বাধীন, বালেগ, সুস্থ, দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মুসলমানের যদি সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া
ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল বা পাথেয় থাকে,
যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকে এবং জান-মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা
থাকে, তবে তার প্রতি জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। মহিলাদের জন্য স্বামী অথবা কোন সচ্চরিত্রবান মাহরাম সঙ্গে থাকা শর্ত।
স্মরণযোগ্য
যে, হজ্জ পালন করার জন্য যেসব শর্তের কথা উল্লেখ রয়েছে তারমধ্যে ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “যার উপর হজ্জ ফরয সে যেনো হজ্জ
করতে গিয়ে নির্জনবাস ও তার সংশ্লিষ্ট
কোন কাজ না করে এবং
কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমূলক কাজ
না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে।” (সূরা
বাক্বারা : আয়াত শরীফ-১৯৭)
অত্র
আয়াত শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত যে, হজ্জ করতে গিয়ে যদি কাউকে কোন ফাসিকী বা হারাম কাজের
সম্মুখীন হতে হয় যেমন- ছবি
তোলা, বেপর্দা হওয়া ইত্যাদি তাহলে তার উপর হজ্জের ফরয সাকিত বা রহিত হয়ে
যাবে অর্থাৎ তখন আর হজ্জ ফরয
হবে না। যেমনিভাবে কোন মহিলা যদি সারা পৃথিবীর মালিকও হয় আর তার
যদি স্বামী কিংবা কোন সচ্চরিত্রবান মাহরাম না থাকে তাহলে
তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। কারণ স্বামী অথবা সচ্চরিত্রবান মাহরাম ব্যতীত হজ্জে গেলে হারাম কাজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য,
হজ্জের জন্য যখন ছবি তুলতে বাধ্য হতে হয় এবং ছবি
তোলার কারণে মহিলাদের পর্দা তরক হয় এছাড়া সউদী
ওহাবী সরকারের মদদে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এ হজ্জের স্থানসমূহে
শত শত সিসি টিভি
ও ক্যামেরা স্থাপন করে কোটি কোটি ছবি তোলা হয় এবং পর্দার
প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে পুরুষ-মহিলা উভয়ের পর্দা নষ্ট করা হয় তখন এ
অবস্থায় কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর নির্দেশ মুতাবিক
মুসলমানদের জন্য কি করণীয় তা
ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত হাদীছ
শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন
অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেনো তা
হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত
দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে
সে যেনো যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে
যেনো অন্তরে তা ঘৃণা করে
দূরে সরে থাকে। এরপর ঈমানের আর সরিষা পরিমাণ
অংশও অবশিষ্ট থাকেনা।” (মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ
প্রথমতঃ হাতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা হাতে বাধা দিবে না। দ্বিতীয়তঃ মুখে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা মুখে বাধা দিবে না। তৃতীয়তঃ অন্তরে খারাপ জেনে যারা দূরে সরেও থাকবে না। উপরন্তু ছবি ও বেপর্দার মতো
কঠিন হারাম ও কবীরা গুনাহর
মধ্যে ডুবে গিয়ে যারা হজ্জ পালনের ইচ্ছা করবে তাদের সে হজ্জ কবুল
হওয়া তো দূরের কথা
সে হজ্জই তাদের জন্য লা’নতগ্রস্ত ও
জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে। নাঊযুবিল্লাহ।
কেননা
ছহীহ হাদীছ শরীফ-এ সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত
রয়েছে, যে বেপর্দা হয়
সে লা’নতগ্রস্ত, সে
দাইয়ূছ ও জাহান্নামী। একইভাবে
যে ছবি তোলে সেও জাহান্নামী ও গযবপ্রাপ্ত।
তাই
হজ্জ ও উমরাহ করার
পর যেখানে আমল আরো ভাল হওয়ার কথা সেখানে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত। নাঊযুবিল্লাহ। তার মানে হলো হজ্জ ও উমরাহ কবুল
হয়নি।
অতএব,
সুন্নাহ মুতাবিক হজ্জ ও উমরাহ করার
জন্য যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে
আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অনবদ্য তাজদীদ সউদী সরকারসহ প্রত্যেক সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং তা মানতে বাধ্য
করা অত্যাবশ্যক।
পবিত্র হজ্জ উনার সময়
কাল
পবিত্র
কুরআন শরীফে উল্লেখ্য আছে,
“হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে নতুন (বাঁকা) চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, আপনি বলুন এটি মানুষের (আরবী মাস এবং ইবাদতের) সময় এবং হজ্জের সময় নির্ধারণ করার মাধ্যম।” (সূরা বাক্বরা: ১৮৯)
“হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে নতুন (বাঁকা) চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, আপনি বলুন এটি মানুষের (আরবী মাস এবং ইবাদতের) সময় এবং হজ্জের সময় নির্ধারণ করার মাধ্যম।” (সূরা বাক্বরা: ১৮৯)
অর্থাৎ
দিন নির্ধারিত হয় চাঁদের অবস্থানের
মাধ্যমে আর সময় নির্ধারিত
হয় সূর্যের অবস্থানের সহযোগীতায়।
আরবী
জ্বিলহজ্জ মাসের ৮ থেকে ১২
তারিখ হজ্জ্বের জন্য নির্ধারিত সময়। হজ্জ্ব পালনের জন্য নির্দ্দিষ্ট দিন, নির্দ্দিষ্ট স্থানে (বর্তমান সৌদী আরবের মক্কা নগরী এবং সন্নিহিত মিনা, আরাফাত, মুযদালফা প্রভৃতি) গমন
এবং অবস্থান আবশ্যক। আচার ও আদব-কায়দার
বিবেচনায় হজ্জ হলো বৎসরের নির্দ্দিষ্ট দিনে নির্দ্দিষ্ট পোশাকে কয়েকটি নির্দ্দিষ্ট স্থানে অবস্থান বা ওকুফ, ক্বাবা
শরীফের তাওয়াফ, পশু কোরবানী, নির্দ্দিষ্ট স্থানে পরপর ৩দিন কংকর নিক্ষেপ এবং সাফা-মারওয়া টিলাদ্বয়ের মধ্যে সায়ী করা আস্তে
আস্তে দৌড়ানো কিংবা
জোরে জোরে হাঁটা।
মহান
আল্লাহ পাক কৃর্তক নির্ধারিত দিনে হজ্ব না করে, সৌদী
ওহাবী সরকারের নির্ধারিত দিনে হজ্ব করা শুধু নাযায়িজই নয় বরং কুফরী,
ঈমান নষ্ট হওয়ার কারণ। বুঝতে চাইলে বিষয়টি সহজ। সন্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিটি বিষয়ই সময় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
দৈনিক
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাযের সময় নির্দিষ্ট। ফজরের নামায নির্ধারিত সময় (ওয়াক্ত অনুযায়ী) আদায় না করে দিনের
অন্য সময় কেউ আদায় করলে
তা মহান আল্লাহ পাকের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ না করুন কেউ
অসুস্থ হলে কিংবা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকলে পরবর্তীতে ক্বাযা আদায়ের বিধান পবিত্র শরীয়তে
রয়েছে। পবিত্র শরীয়ত উনাকে অগ্রাহ্য করে আগে পরে অন্য সময় নামায আদায় করে মহান আল্লাহ পাক চাইলে কবুল করতে পারেন, এরূপ দোহাই দেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? দুচোখ বন্ধ করে আপনার বিবেককে জিঙ্গাসা করে দেখুন। দেখবেন জবাব এসেছে, তিনি
তা করবেন না। কারণ সেই নামায উনার নির্দেশ মুতাবেক নির্ধারিত সময়ে আদায় করা হয়নি। ঠিক তেমনিভাবে হজ্ব নির্ধারিত দিনে করা না হলে তা
কবুল যোগ্য হবে না। আবার পবিত্র হজ্জ উনার হুকুম আহকাম যথাযথ পালনে ব্যর্থ হলে বা আগে পবে
করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে
না। যেমন পবিত্র কুরবানী করার নির্দেশ পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ উনার ১০ আরিখ। কিন্ত
কেউ পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ উনার ৯ কিংবা ৮
তারিখ ১০০/২০০/৩০০ গরু, খাসি কিংবা দুম্বা কুরবানী করল পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে তা কুরবানী বলে
গ্রহণযোগ্য হবে না বরং সেটা
জবেহ বলে সাব্বস্থ হবে। একথা সকলেরই জানা
রয়েছে সৌদি ওহাবী সরকার হজ্জের তারিখ ২/১ দিন
সুবিধা মত আগে পিছে
করে থাকে। যদি তাই হয় তাহলে সৌদি
ওহাবী সরকারের মনগড়া দিনে পবিত্র হজ্জ পালন করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? একটু সুক্ষভাবে চিন্তা করলেই বুঝা যাবে যে, এভাবে মনগড়া দিনে পবিত্র হজ্জ পালন করলে পবিত্র হজ্জ উনার হুকুম আহকাম ফরজ ওয়াজিব, সুন্নত সবকিছুই তরক হওয়াটাই স্বাভাবিক।
পবিত্র হজ্জ উনার হুকুম
আহকাম
আরো
উল্লেখ্য, হজ্জের ফরযটি বদনী ও মালী উভয়
ইবাদতের সমন্বয়ে আদায় করতে হয়। এজন্য আয়াত শরীফ-এ হজ্জ পালন
করতে যেয়ে বদন অর্থাৎ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যেনো আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ-নিষেধের খিলাফ অর্থাৎ উনাদের কোন নাফরমানী মূলক কাজ সংঘটিত না হয় সে
ব্যাপারে সতর্ক বা সাবধান করে
জানানো হয়েছে।
অনুরূপভাবে
হজ্জ মালী ইবাদত অর্থাৎ হজ্জ পালন করতে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করতে হয়। এখন এই টাকা-পয়সা
হারাম পন্থায় অর্থাৎ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সুদ, ঘুষ, অপরের টাকা আত্মসাৎ ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জন করে হজ্জ করলে হজ্জ আদায় হবে না। সম্পূর্ণ হালাল পন্থায় উপার্জিত অর্থ বা টাকা-পয়সা
ব্যয় করে হজ্জ করতে হবে। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু
ব্যতীত কবুল করেন না।” (বুখারী শরীফ)
কাজেই,
শরীরকে হারাম ও কবীরা গুনাহ
থেকে পবিত্র রেখে এবং পবিত্র মাল অর্থাৎ হালাল অর্থ দিয়ে হজ্জ আদায় করা হলে সে হজ্জই কেবল
আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য হবে এবং সে হজ্জই হবে
হজ্জে মাবরূর তথা আল্লাহ পাক উনার কাছে মকবুল হজ্জ। আর এ হজ্জেরই
প্রতিদান জান্নাত বলে হাদীছ শরীফ-এ ঘোষণা করা
হয়েছে।
No comments:
Post a Comment