আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ্। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুন। এখানে রয়েছে ইসলামী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জানা অত্যাবশ্যক।***
যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা সহ অনলাইনে ফ্রি ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সুযোগ ***
ডাঃ আহমদ ইমতিয়াজ ডি.এইচ.এম.এস, বি.এইচ.এম.সি (ঢাকা) মোবাইল - 01914440430 ই-মেইলঃ drahmadimtiaj@gmail.com ***

সন্মানিত মু’জিযা মুবারক

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  সন্মানিত মু’জিযা মুবারক 

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুজিযাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, উজ্জ্বল, বহুবিদিত সদাবিদ্যমান মুজিযা হচ্ছে কুরআন শরীফ যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে

এছাড়া চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া, পাথরের সালাম করা, বৃক্ষ নিকটে আসা, খুঁটির ক্রন্দন করা, হরিণের অভিযোগ করা, মুষ্টির ভিতরে কঙ্করের সাক্ষ্য দেয়া, মৃতকে জীবিত করা, মৃত ব্যক্তির সাক্ষ্য দেয়া ইত্যাদি আরো অসংখ্য অগণিত বিষয় রয়েছে যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুজিযা শরীফ-এর অন্তর্ভুক্ত

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর কতিপয় মুজিযা মহিমা ১২ রবীউল আউয়াল সোমবার শরীফ ছুবহি ছাদিকের সময় বিনা কষ্টে নাভি মুবারক কাটা খতনা করা অবস্থায় আগমনঃ

لقد من الله على الـمؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم يتلوا عليهم اياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة وان كانوا من قبل لفى ضلل مبين.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি নিঃসন্দেহে মুমিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন; যিনি তাদেরকে আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফসমূহ তিলাওয়াত করে শোনাবেন এবং তাদের অন্তরসমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব হিকমত শিক্ষা দেন যদিও পূর্বে তারা প্রকাশ্য গোমরাহীর মধ্যে ছিলো” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ১৬৪)

আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার ছুবহি ছাদিকের সময় নাভি মুবারক কাটা খতনা করা অবস্থায় এই পৃথিবীতে আগমন করেন উনার নাম মুবারক রাখা হয় সাইয়্যিদুনামুহম্মদছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

আল বারাহিনুল ক্বত্বয়িয়াহ ফী মাউলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ লিল জাওনপূরী, সীরাতে ইবনে হিশাম ১ম - ১৪০-১৬৪ পৃষ্ঠা, সীরাতে হালাবিয়াহ ১ম - ৪৬-৫০-৫৭০ পৃষ্ঠা, আল মাওয়াহিব ১ম - ২১-২৪ পৃষ্ঠা, নশরুত তীব ১৭-২২ পৃষ্ঠা আছাহহুস সিয়ার ৪৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে, হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পৃষ্ঠ মুবারক থেকে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ত্বাহিরাহ আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ- তাশরীফ নেয়ার পর তিনি স্বপ্নে দেখতে পেলেন- কে যেনো উনাকে বলছেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! সাইয়্যিদুল আলামীন খাইরুল বারিয়্যাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার পবিত্র রেহেম শরীফ- তাশরীফ এনেছেন তিনি যমীনে আগমন করলে উনার নাম মুবারক রাখবেন, সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আল্লাহ তায়ালা উনার ছলাত, সালাম, রহমত শান্তি সর্বদাই বর্ষিত হয় উনাকে উনার মা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম বিনা কষ্টে পাক-পবিত্র অবস্থায় নাভি মুবারক কাটা খতনা করার হালতে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার শরীফ ফজরের নামাযের কিছুক্ষণ পূর্বে আগমনে সাহায্য করেছিলেন

উনার আগমনের কয়েকদিন পূর্বে বছরই কুখ্যাত বাদশাহ আবরাহা কাবা শরীফ ধ্বংস করার জঘন্যতম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে হাতি সৈন্যসহ সমূলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো 

সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর খুশিতে মক্কা মুয়াযযামার মাঠ, ময়দান মহা আনন্দে বিভোর হয়ে দুরূদ শরীফ পড়ছিলো

উল্লিখিত আলোচনা থেকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর বিশেষ কিছু মুজিযা আলাদা খুছুছিয়ত ফুটে উঠেছে
() ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ শ্রেষ্ঠ তারিখ
() ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শ্রেষ্ঠ দিন 
() ছুবহি ছাদিক শ্রেষ্ঠ সময়
() উনার আম্মা উনার কষ্ট অনুভব না হওয়া 
() উনার রেহেম শরীফ পাক-পবিত্র 
() নাভি মুবারক কাটা অবস্থায় আগমন 
() খতনা করা অবস্থায় আগমন 
() হাতি হাতিওয়ালার ধ্বংস ইত্যাদি

বিলাদত শরীফ-এর মুবারক সময়ের ঘটনাঃ
আল বারাহিনুল ক্বত্বয়িয়াহ ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়াহ, আল মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ ১ম - ২১ পৃষ্ঠা, সীরাতে হালাবিয়াহ ১ম - ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে

- قالت اٰمنة عليها السلام لما اخذنى ما يأخذ النسوة من الوجع عند الولادة كنت منفردة فى منزلى. وعبد الـمطلب عليه السلام فى الطواف فسمعت صوتا عظيما. فرعبت ثم رايت طائرا ابيضا يـمسح قلبى بجناحه فذهب عنى الوجع والـمخافة التى كنت اجدها ثم رايت عندى شربة بيضاء فشربتها واطماننت بها ورايت نورا اسنى ورايت عندى نسوة طولا كالنخلة كانهن من بنات عبد مناف وعجبت بانهن من اين ظاهرن عجبا. فقالت لى احدهن انى اسية عليها السلام امراة فرعون الذى طغى. وقالت الاخرى انى مريم بنت عمران ام عيسى عليها السلام وهؤلاء حور عين. واشتد على الحال. وكل ساعة اسمع صوتا عظيما. اشد مهابة مما سمعت سابقا. وبينما نحن اذ ارى ديباجا ابيضا قد مد بين السماء والارض ورايت الرجال قائمين بين الارض والسماء فى ايدهم اباريق من فضة ثم رايت قطيعة من الطيـر ان قدمت علـى حتى وارت حجرتـى مناقيرها من زبرجد واجنحتها من ياقوت ورفع الله تعالى عن بصرى حجابا. ورايت مشارق الارض ومغاربها. رايت ثلاثة اعلام قد نصبت احدٰى ها فـى الـمشرق والاخرىٰ فـى الـمغرب وعلـى سقف الكعبة ثلاثة اخرىٰ. واخذنـى الـمخاض وولدت محمدًا صلـى الله عليه وسلم.

অর্থ: “হযরত ত্বাইয়্যিবাহ আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, সন্তান মুবারক আগমনের সময় আমি লক্ষণ বা নিদর্শন অনুভব করছিলাম এবং একাকী ঘরে অবস্থান করছিলাম হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি কাবা শরীফ তাওয়াফে রত ছিলেন এমন সময় একটি বড় আওয়াজ শুনে আমি চিন্তিত হলাম অতঃপর একটি ছোট সাদা পাখি দেখতে পেলাম, সে তার পাখা দ্বারা আমার বক্ষ মুবারক মুছতে লাগল, এতে আমার সমস্ত চিন্তা দূর হয়ে গেলো এরপর আমার নিকট সাদা শরবত দেখতে পেলাম তা পান করলাম যার কারণে ইতমিনান লাভ করলাম এবং খুব অতি উজ্জ্বল নূর দেখলাম ইতিমধ্যে খেজুর বৃক্ষের মতো লম্বাকৃতির কয়েকজন মহিলাগণকে আমার নিকট দেখতে পেলাম, উনারা আমার নিকট উপস্থিত হয়েছেন আব্দু মুন্নাফের কন্যাগণের মতো উনাদেরকে দেখাচ্ছিলো আমি অবাক হলাম যে, উনারা কোথা থেকে আসলেন? এমন সময় উনাদের মধ্যে একজন বলে উঠলেন, আমি ফিরাউনের স্ত্রী হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম অপরজন বললেন, আমি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার মা হযরত মারইয়াম বিনতে ইমরান আলাইহাস সালাম আর এই সমস্ত মহিলা যাঁরা আমাদের সাথে এসেছেন, উনারা হচ্ছেন জান্নাতের হুর সময় আমার খুব খুশি লাগতেছিলো আমি প্রতি মুহূর্তে এক একটি বড় আওয়াজ শুনতেছিলাম পূর্ব শব্দ হতে পরের শব্দগুলি ক্রমান্বয়ে অত্যধিক আশ্চর্যের ছিলো এমন সময় হঠাৎ আসমান যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে রেশমী কাপড়ের ন্যায় একটি সাদা চাদর লম্বালম্বিভাবে দেখতে পেলাম আসমান যমীনের মধ্যে কতগুলি পুরুষ লোক দাঁড়িয়ে আছেন তাঁদের হাতে রূপার তৈরি পানির পাত্র অতঃপর আমি একদল পাখি দেখলাম তারা আমার নিকট আসলো তাদের চোখ জমরূদ পাথরের পাখা ইয়াকুত পাথরের ছিলো সময় আমার বাহ্যিক দৃষ্টি আল্লাহ পাক তুলে নিলেন আমি অন্তর চক্ষু দিয়ে পৃথিবীর পশ্চিম পূর্ব প্রান্ত দেখতে লাগলাম সময় তিনটি পতাকাও দেখতে পেলাম একটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে, দ্বিতীয়টি পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কাবা শরীফ-এর ছাদের উপর স্থাপিত আমার আসল সময় চলে আসলো তখন সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ লাভ করলেনসুবহানাল্লাহ! সিজদা অবস্থায় আগমন এবং সামান্য মুহূর্তে সারা দুনিয়া সাগর মহাসাগরে বরকত দান।

আল বারাহিনুল ক্বতয়িয়াহ ফী খাইরিল বারিয়্যাহ, আল মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ ১ম - ২১-২২ পৃষ্ঠা সীরাতে হালাবিয়াহ ১ম - ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে

- قالت لما ولد المولود المحمود رايته ساجداً رافعا مسبحتيه كالمتضرع والمبتهل الـى السماء تم رايت السحاب الابيض انه غشاه واغابه عن بصرى واسمع مناديا يقول طوفوه فـى مشارق الارض ومغاربها. وادخلوه فـى الابحر حتى يعرفه اهلها باسمه ونعته وشكله الابهٰى. ويعلموا ان اسمه ماحٍ يمحو اٰثار الشرك كلها. وورد فـى حديث اخرى ان قالت اٰمنة عليها السلام لـما وضعته صلـى الله عليه و سلم رايت سحابا عظيما نورانـيا. يسمع فـيه صهيل الـخيل وصوت ارتعار الاجنحة ومقال الناس حتـى غطه فصار عنـى غائبا. فسمعت مناديا ينادى ان طوّفوا محمدًا فـى الا رض كـلها واعرضوه علـى الروحانـيـين من الـجن والانس والملائكة وعلـى الطـيور الوحوش عرضاً.

অর্থ: “হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেছেন: যখন মাওলুদুন মাহমুদ তথা প্রশংসিত সন্তান দুনিয়ায় আগমন করলেন, তখন আমি উনাকে সিজদা অবস্থায় দেখেছিলাম সে সময় উনার উভয় তর্জনী আঙ্গুল মুবারকদ্বয় দোয়া ক্রন্দনকারীর ন্যায় আকাশের দিকে প্রসারিত ছিলো অতঃপর দেখতে পেলাম: একটি সাদা মেঘ এসে উনাকে ঢেকে ফেললো এবং আমার চোখের আড়ালে নিয়ে গেলো সময় আমি শুনতে পেলাম, এক আওয়াজকারী বলছেন, এই পূত-পবিত্র সন্তানকে পৃথিবীর পূর্ব পশ্চিম পর্যন্ত গোটা দুনিয়া ছফর করিয়ে আনো এবং সকল সাগর মহাসাগর দেখিয়ে আনো যাতে সকল স্থল পানিবাসী উনার নাম মুবারক প্রশংসা এবং উজ্জ্বলতম আকৃতিসহকারে চিনে নিতে পারে এবং বরকত হাছিল করতে পারে তারা আরো জেনে রাখতে পারবে যে, এই পূত-পবিত্র সন্তানের নাম মুবারকমাহীবা বাতিল ধ্বংসকারী অন্যায়ের মূলোৎপাটনকারী তিনি সমস্ত শিরক অংশীবাদিতার সকল নাম নিশানা মিটিয়ে দিবেনঅপর একখানা হাদীছ শরীফ- বর্ণিত আছে, “হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন: যখন আমার মুবারক পুত্র বিলাদত শরীফ লাভ করলেন, সে সময় নূরানী একখানা মেঘ দেখতে পেলাম উহার ভিতর হতে ঘোড়ার আওয়াজ, পাখির পাখার আওয়াজ মানুষের কথা শুনা যাচ্ছিলো মেঘমালা খানা মুবারক পুত্রকে ঢেকে নিলো এবং আমার চোখের আড়ালে চলে গেলো সময় এক আওয়াজকারীকে বলতে শুনলাম যে, সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সারা পৃথিবী ছফর করিয়ে আনো মানুষ, জিন ফেরেশতাদের সকল রহস্যসমূহ উনার সামনে পেশ করো আর সকল পশু-পাখিগুলোকে উনার কাছে হাজির করো সকলেই উনাকে দেখুক এবং রহমত-বরকত হাছিল করুক উনাকে দেখার হক্ব সকলেরই রয়েছে সকলেই উনাকে দেখার আকুল ইচ্ছা রাখেসুবহানাল্লাহ!

মাক্বামে ইবরাহীম-এর দিকে কাবা শরীফ-এর সিজদা এবং অন্যান্য মুজিযাঃ

আল বারাহিনুল ক্বতয়িাহ ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ আল মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ ১ম - ২৩ পৃষ্ঠা সীরাতে হালবিয়াহ ১ম - ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে

- ونقل عن عبد المطلب انه قال كنت ليلة الولادة عند الكعبة فلما مضى نصف الليل رايت الكعبة مالت ال مقام ابراهيم وسجدت وخرج منها صوت التكبير هٰكذا. الله اكبر الله اكبر رب محمدن المصطفي الاٰن قدطهرنى ربى من انجاس الاصنام وارجاس المشركين تطهيرًا. ونودى من الغيب الا برب الكعبة الذى اصطفىٰ الكعبة وجعلها قبلة وجعلها له مسكنا مباركا. والاصنام التى كانت حول الكعبة صارت جداذًا. وخر على الوجه الصنم الكبير الذى يسمى هبلا. ونودى ان ولد عن اٰمنة محمد وسحاب الرحمة كان عليه نازلا. والايات والكرامات التى ظهرت عند الولادة اكـثران تحصر وتحصٰى. وما ذكرفهوقطرة من بحورها الكبرٰى. واشهرها وابهرها واعجبها تحرك ايوان الكسرٰى. وتزلزله وسقوط اربع عشرة من شرفاته العليا. ومنها غيض بحيرة ساوة. وفيض وادى سماوة التى كان ماؤها بالف سنة قبل منقطعا. وخمود النيران الفارسية التى كانت مذ الف سنة قبل موقـودة تحمى. ومنها خر الاصنام علـى وجوهها ونكوسها ذلاًّ.

অর্থ: “হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ রাতে কাবা শরীফ- ছিলাম অর্ধেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর দেখতেছি যে, কাবা ঘর মাক্বামে ইবরাহীম-এর দিকে ঝুঁকে সিজদা করছে সে সময় উহা হতে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার তাকবীর বের হচ্ছিলো আল্লাহ পাক মহান, যিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রব উনার উসীলায় উনার রব উনার উম্মতকে মূর্তির অপবিত্রতা শিরকীর নাপাকী হতে পবিত্র করবেন গাইব হতে আওয়াজ আসলো, শুনুন! কাবা শরীফ-এর মাবুদের শপথ! যিনি কাবা শরীফকে মনোনীত করেছেন এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বিবলা মুবারক বসবাসের স্থান হিসেবে পছন্দ করেছেন সে রাত মুবারক- কাবা শরীফ-এর চতুর্দিকের যতো মূর্তি ছিলো সবগুলি টুকরা হয়ে গিয়েছিলোহুবালনামক সর্ববৃহৎ মূর্তিটি উপুড় হয়ে পড়েছিলো উচ্চারিত হচ্ছিলো যে, সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বাম পার্শ্বের পাঁজরের নিচ দিয়ে আগমন করেছেন, সদা-সর্বদা উনার প্রতি রহমতের বৃষ্ট বর্ষিত হচ্ছে 

হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতকালীন মুজিযা

বুযূর্গী অলৌকিক ঘটনা এতো অধিক প্রকাশিত হয়েছিলো যা গণনাতীত এখানে যা কিছু উল্লেখ করা হলো, এগুলি মহাসাগরের একফোটা পানি তুল্য মাত্র তন্মধ্যে সর্বাধিক বিখ্যাত অধিক প্রকাশ্য এবং বেশি আশ্চর্য এগুলো ছিলো যে,  
() বাদশাহ নওশেরওয়ার সিংহাসন নড়ে যাওয়া এবং উহার উন্নত সর্বোচ্চ ১৪টি কঙ্কর ছুটে নিচে পড়া  
() সাওয়া দরিয়া শুকিয়ে যাওয়া এবং তার পানিসমূহ নিচের দিকে চলে যাওয়া  
() সামাওয়া হ্রদ পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া অথচ এর পূর্বে তা এক হাজার বছর যাবৎ শুকনা ছিলো  
() ফারসী (পারস্য)-এর অগ্নিকা-গুলি নিভে যাওয়া, যা হাজার বছর ধরে প্রজ্জ্বলিত গরম অবস্থায় চলে আসছিলো  
() কুরাইশদের মূর্তিগুলি পড়ে যাওয়া এবং অতি নিকৃষ্টভাবে উপুড় হয়ে থাকা

কুরাইশদের একটি প্রতিমার কবিতা পাঠঃ

আল বারাহিনুল ক্বতয়িয়াহ ফী মাওলিদি আইরিল বারিয়্যাহ, আল মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ ১ম - ২৩ পৃষ্ঠা, সীরাতে হালাবিয়াহ ১ম - ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে

- وكان لجماعة من القريش صنم يجتمعون عند ه علىٰ رأس كل سنة ويعيدون ويعتكفون بين يديه فراوه ليلة من الليالى ان خر علىٰ وجهه وصر عن محله ساقطا. فاخذوه ووضعوه علىٰ محله ثم خر ثم سوّوه ثم خر ثالثا. فاما شاهدوا هٰذا صاروا مغمومين ملولين ونصبوه عـلى محله نصبا شديدا. فسمعوا من جوفه صوت قائل يقول هٰكذا. شعر: تردّٰى بمولود اضائت بنوره + جميع فجاج الارض بالشرق والغرب وخرت له الاوثان طرا وارعدت + قلوب ملوك الارض من الرهب والرعب. وكـانت هذه الواقعة لـيلة ولادته صلـى الله عليه وسلم تسليما.

অর্থ: “কুরাইশদের মধ্যে একদল লোকের একটি মূর্তি ছিলো প্রত্যেক বছরের প্রথমভাগে তারা উহার নিকট উপস্থিত হয়ে উহার সম্মুখে খুশি খেল-তামাশা করতো তারা এখানে বেশ কিছু সময় অবস্থান করতো কোনো একরাতে (১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার) তারা মূর্তিটিকে নিজ স্থান হতে সরে অসহায় অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখলো মূর্তিটির দুরবস্থা দেখে তারা অবাক হয়ে গেলো এবং উহাকে উঠিয়ে তার নিজ স্থানে রেখে দিলো কিন্তু হায়! রাখলে কি হবে? সে আবার পড়ে গেলো, তারা আবার তাকে যথাস্থানে রাখলে সে পুনরায় পড়ে গেলো এভাবে তিনবার রাখা হলো, তিনবারই পড়ে গেলো কুরাইশদল ইহা স্বচোখে অবলোকন করে একেবারে অস্থির হতবাক হয়ে গেলো এবার তারা আবার মূর্তিটিকে তার স্থানে খুব মজবুত করে দাঁড় করে রাখলো এমন সময় তারা উহার ভিতর থেকে কবিতা পাঠের ধ্বনি শুনতে পেলো: একজন পূত-পবিত্র নূরানী সন্তানের বিলাদত শরীফ হওয়ার সময় হয়েছে উনার নূরে পৃথিবীর পূর্ব পশ্চিমের সমস্ত খালি স্থান আলোকিত হয়ে গেছে উনারই সম্মানার্থে সকল মূর্তি উপুড় হয়ে পড়ে গেছে আর উনার ভয়ে বিকম্পিত হয়ে বিশ্বের সকল রাজা-বাদশাহর প্রাণ কম্পিত হয়ে উঠেছে” 

এই সমস্ত ঘটনাগুলি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ রজনীর বিস্ময়কর ঘটনা সুবহানাল্লাহ

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ পানঃ 

আল বারাহিনুল ক্বতয়িয়াহ ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ, হাশিয়ায়ে সীরাতে ইবনে হিশাম ১ম - ১৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার আম্মা হযরত আমিনা ত্বাহিরাহ আলাইহাস সালাম দিন এবং হযরত সুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম কয়েকদিন দুধ পান করেছিলেন এর পূর্বে হযরত সুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পুত্র হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও দুধপান করিয়েছিলেন এজন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা পরস্পর দুধভাই ছিলেন হযরত সুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কিনা বিষয়ে মতভেদ করলেও অনেক মুহাদ্দিছে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাকে মহিলা ছাহাবী উনাদের মধ্যে গণ্য করেছেন ইহাই ছহীহ মত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত দুধ মাতা উনাকে খুবই সম্মান করতেন মদ্বীনা শরীফ থেকে মাঝে মাঝে কিছু হাদিয়া পোশাক-পরিচ্ছদ পাঠিয়ে দিতেন বিশ্বের যে মহিলাটি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দুধ পান করানোর ইতিহাসে সুনামের সাথে বিখ্যাত সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারিণী তিনি হযরত হালীমা সাদিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বড় নেককার পুণ্যময়ী, সম্মানিতা ধৈর্যশীলা মহিলা ছিলেন নামের সাথে উনার কর্মেরও মিল ছিলো হালীমা অর্থ: ধৈর্যশীলা, আর সাদিয়া অর্থ: নেকবখতী, পুণ্যময়ী হযরত হালীমা সাদিয়া আলাইহাস সালামবনু সা বিন বকরগোত্রের অধিবাসী ছিলেন, যাঁরা ভাষার বিশুদ্ধতায় অলঙ্কার শাস্ত্রে সেকালে আরববিখ্যাত ছিলেন সেখানকার পানি সুমিষ্ট বায়ু নির্মল ছিলো স্বাস্থ্যের পক্ষে সেখানকার আবহাওয়া অত্যধিক উপযোগী ছিলো সুবহানাল্লাহ!

যেমন হাদীছ শরীফ- বর্ণিত আছে

وورد انه صلى الله عليه وسلم قال: انا افصح العرب لانى من قريش وارضعت فـى بنى سعد بن بكر.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি আরবের সকল ব্যক্তি হতে বেমেছাল ফছীহ তথা বিশুদ্ধ অলঙ্কৃত ভাষা বর্ণনাকারী এর কারণ হলো- আমি কুরাইশ বংশের লোক এবং বনু সা বিন বকর গোত্রে রেখে আমাকে দুধ পান করনো হয়েছেসুবহানাল্লাহ

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়নান হলো যে, সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ-এর পর প্রথম দিন নিজ মাতা ত্বাহিরাহ, ত্বাইয়্যিবাহ হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার দুধ পান করেন এরপর কয়েকদিন হযরত সুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনার দুধ পান করেন এরপর হযরত হালীমা সাদিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার দুধ পান করেন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক মুজিযাসমূহ

ورفعنا لك ذكرك

অর্থ: “হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার যিকিরকে বুলন্দ করেছি” (সূরা আলাম নাশরাহ : আয়াত শরীফ )

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অস্তিত্ব মুবারক-এর প্রতিটি মুহূর্ত অসংখ্য মুজিযা দ্বারা সমৃদ্ধ শুধু তাই নয়, উনার মুবারক বিলাদতের রাত্রেই লক্ষ-কোটি মুজিযা সংঘটিত হয়েছে নিম্নে তার যৎকিঞ্চিত আলোকপাত করা হলো-

() হযরত ইবনু আবুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন- আমার মা আমাকে বলেন যে, যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার গৃহে রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম ঘরের চারদিক নূরের আলোকে উদ্ভাসিত হয় তারকারাজি এমনভাবে ঝুঁকে পড়ছিলো, মনে হচ্ছিল যেনো আমার উপর আছড়ে পড়বে বিলাদত শরীফ-এর সময় হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার শরীর মুবারক থেকে একটি নূর বিচ্ছুরিত হয়ে সমগ্র গৃহকে আলোকোজ্জ্বল করে তোলে সুবহানাল্লাহ! (বায়হাকী, তিবরানী, আবু নয়ীম)

() সাইয়্যিদুল কাওনাইন, খাইরুল বাশার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর সময় বছরা পর্যন্ত সমস্ত কিছু আলোকিত হয়ে যায় সুবহানাল্লাহ! (হাকিম, বায়হাকী, ফয়জুল কাদীর, শরহে জামিউস সগীর ৩য় জিলদ ৭৬৮ পৃষ্ঠা)

() হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন: সাইয়্যিদুল খালায়িক, রহমতে আলম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রেহেম শরীফ- ধারণ করার পর বিলাদত শরীফ পর্যন্ত আমার ব্যথা-বেদনা হয়নি বিলাদত শরীফ-এর সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাত মুবারক দিয়ে মাটিতে ভর দেন এবং সিজদা অবস্থায় যমীনে তাশরীফ আনেন সুবহানাল্লাহ! (উমদাতুন নুকুল, নূরে হাবীবী)

() আফদ্বালুল কায়িনাত, হাবীবে যম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতের সময় উপস্থিত হলে আল্লাহ পাক উনার আদেশে সকল ফেরেশতা আল্লাহ পাক উনার সামনে হাজির হন শয়তানকে সত্তরটি শিকল পরানো হয় তাকে কাস্পিয়ান সাগরে উপুড় করে ঝুলিয়ে দেয়া হয় সকল দুষ্ট অবাধ্য মাখলুককেও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় সূর্যকে সেদিন অসাধারণ আলো প্রদান করা হয় এবং তার প্রান্তে শূন্য পরিম-লে সত্তর হাজার হুরকে দাঁড় করানো হয়, যারা উনার বিলাদত শরীফ-এর অপেক্ষায় ছিলেন আল্লাহ পাক সে বছর উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতের সম্মানার্থে সকল নারীর পুত্র সন্তান নির্ধারণ করে দেন এটাও ঠিক করেন, কোনো বৃক্ষ ফলহীন থাকবে না অশান্তির স্থানে শান্তি স্থাপিত হবে সুবহানাল্লাহ! (আবু নয়ীম, খাছায়িছুল কুবরা ১ম - পৃষ্ঠা ৯০)

() ছাহিবে বাহর ওয়া বার, মুত্তালা আলাল গাইব যে রাত্রে বিলাদত শরীফ লাভ করেন সেদিন আল্লাহ তায়ালা হাউজে কাউছারের কিনারে সত্তর হাজার মেশক আম্বরের বৃক্ষ স্থাপন করেন সুবহানাল্লাহ!

() সকল প্রতিমা উপুড় হয়ে ভেঙে পড়ে

() বায়তুল্লাহ শরীফ থেকে আওয়াজ কয়েকদিন পর্যন্ত ভেসে আসতে থাকে, এখন পূর্ণ চন্দ্র এসেছে, এখন আমার জিয়ারতকারীরা আসবে বায়তুল্লাহ শরীফ-এর ভূ-কম্পন তিনদিন তিনরাতে শেষ হয়

() বিলাদত শরীফ-এর সেই মুবারক রাতে দুনিয়ার সকল বাদশাহদের সিংহাসন ভেঙে যায় এবং সকলেই বোবা হয়ে যায়

() হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম বিলাদত শরীফ-এর সময়ের ঘটনাবলী বর্ণনায় বলেন, সূর্যের মতো উজ্জ্বল মুখম-লবিশিষ্ট তিন ব্যক্তি আগমন করলেন, একজন উনার হাতে রুপার পাত্র যা হতে মেশকের খোশবু আসছিলো, দ্বিতীয় জন উনার হাতে পান্নার চতুষ্কোণ প্লেট, যার প্রতি কোণে একটি সাদা মোতি জড়ানো ছিলো কেউ বললো, এটা সারা বিশ্ব; পূর্ব-পশ্চিম, জল-স্থল হে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি এটি ধারণ করুন! যেদিক দিয়ে ইচ্ছা তিনি মাঝখানে ধরলেন, আওয়াজ এলো? কাবার কছম! মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাবা ধারণ করেছেন আল্লাহ পাক উনার জন্য কাবাকে ক্বিবলা এবং বাসস্থান করেছেন তৃতীয় জনের হাতে উত্তমরূপে ভাঁজ করা সাদা রেশমী বস্ত্র থেকে সুন্দর একটি আংটি বের করলেন অতঃপর আংটিটি লোটার পানিতে সাতবার ধৌত করে সুলত্বানুন নাছীর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুই কাঁধ মুবারক-এর মাঝখানে মোহর এঁকে দিলেন

(১০) বিলাদত শরীফ-এর বর্ণনায় হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সেই রাত্রে আমি প্রতিমার ভিতর থেকে আওয়াজ শুনেছি, নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পয়দা হয়েছেন বাদশাহরা লাঞ্ছিত হয়েছে গোমরাহী শিরক মিটে গেছে

(১১) বিলাদত শরীফ রাত্রের বর্ণনায় সম্রাট নাজ্জাশী বলেছে: সে রাত্রে স্বপ্নে দেখে, হঠাৎ মাটি ভেদ করে একটি গ্রীবা মাথা বের হয়ে বললো; হস্তী বাহিনী ধ্বংস হয়েছে ..... নবী মক্কী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি) বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন, এখন যে উনাকে মেনে চলবে, সে কামিয়াব আর যে অবাধ্য হবে.... এতটুকু বলে সে অদৃশ্য হয়ে যায়

(১২) যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বিলাদত শরীফ লাভ করেন তখন শয়তানের তিন আকাশে প্রবেশাধিকার রহিত হয় আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করলে শয়তানের জন্যে সাত আকাশের দরজাই বন্ধ করে দেয়া হয় 
(নিমাতুল কুবরা, তিবরানী শরীফ, আবু নাঈম, ফয়জুল ক্বাদীর, উমদাতুল নুকুল, নূরে হাবীবী, খাছায়িছুল কুবরা, হাকিম)
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র লালা মুবারক-এর  বরকত!

হাদীস শরীফ- বর্ণিত হয়েছে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, খন্দকের জিহাদের সময় আমরা পরিখা খননের কাজে লিপ্ত ছিলাম হঠাৎ একটি বড় পাথর দেখা দিলো আমরা কেহই উহাকে স্থানান্তর করিতে পারিতেছিলাম না ফলে খনন কাজ ব্যাহত হতে ছিলো সংবাদ পেয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীব্ল্লুাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় তাশরীফ নিলেন এবং কুড়ালের এক আঘাতেই ওই বিরাট পাথরটিকে গুঁড়িয়ে দিলেন অথচ যাহিরীভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তিন দিনের অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন উনার পেট মুবারক- তখন পাথর বাঁধা ছিলো হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তখন নিজ বাড়িতে গিয়ে উনার আহলিয়াকে বললেন, “আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালল্লাম উনাকে অভুক্ত দেখে এসেছি আমাদের ঘরে কোনো খাবার আছে কি?” তখন হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘরে অর্ধ সের যবের আটা ছোট একটি ছাগলের বাচ্চা ছিলো হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ছাগলের ছোট বাচ্চাটিকে যবেহ করার পর আমার আহলিয়া পাত্রে গোশত চড়িয়ে রুটি তৈরি করার উদ্যোগ নিলেন এই সুযোগে আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গমন করে চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কয়েকজন ছাহাবী উনাদেরকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলুন ছোট একটি ছাগলের বাচ্চা যবেহ করা হয়েছে আর সামান্য কিছু যবের আটা আছে কিন্তু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার স্বল্প আয়োজনের দাওয়াত পেয়ে উচ্চস্বরে ঘোষণা করলেন, হে পরিখা খননকারী দল! হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনাদেরকে দাওয়াত করেছেন দ্রুত আপনারা হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়িতে চলুন হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এই ঘোষণা দিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বললেন: আমি না আসা পর্যন্ত গোশতের পাত্রের ঢাকনা খুলবেন না এবং রুটি তৈরিও শুরু করবেন না অবশেষে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার বাড়িতে তাশরীফ নিলেন এবং স্বীয় মুখ মুবারক-এর লালা আটা পাত্রের গোশতের সাথে মিশিয়ে দোয়া করিলেন অতঃপর তিনি রাঁধুনীকে ডেকে এনে বললেন, চুলা হতে পাত্র নামাবেন না এবং পেয়ালা বা থালা ভরে সকলকে পরিবেশন করতে থাকুন তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশ পালন করলেন হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, পরিখা খনন কাজে আমরা ১৪ শত ছাহাবী নিযুক্ত ছিলাম মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! সকলে তৃপ্তি সহকারে খাবার গ্রহণ করার পরও পাত্র ভর্তি খাবারে বলক আসতেছিলো এবং রুটি তৈরির আটাতেও কোনো কমতি দেখা দেয়নি সুবহানাল্লাহ(বুখারী শরীফ মুসলিম শরীফ)

সম্মানিত বদর জিহাদের ময়দানে প্রকাশিত বেমেছাল মুজিযা শরীফ

* হযরত উক্কাস ইবনে মিহসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ‘বদর জিহাদে আমার নিজের তরবারিটি ভেঙে যায় তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে একখানা কাঠ দিলেন আমার হাতে এলে তা একটি ঝকঝকে লম্বা তরবারিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় সুবহানাল্লাহ!

* হযরত কাতাদা ইবনে নুমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, ‘বদর জিহাদে উনার চোখে দারুণভাবে আঘাত লাগে এতে চোখের পুত্তলি বের হয়ে -দেশে ঝুলতে থাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঝুলে থাকা চোখ কেটে ফেলার জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অনুমতি চান হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি না দিয়ে উনাকে ডেকে কাছে এনে পুত্তলিটি ধরে যথাস্থানে বসিয়ে দেন এতে উনার চোখ এমন ভালো হয়ে যায় যে, তিনি বুঝতেই পারতেন না যে, কোন চোখে আঘাত লেগেছিলো অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, উনার চোখটি অপর চোখের চেয়েও উত্তম দেখাতো সুবহানাল্লাহ!

খণ্ড খণ্ড জিহাদ শেষে একযোগে তুমুল জিহাদ শুরু হওয়ার সময় স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক মুঠো বালু হাতে নিয়ে ‘শাহাতুল ওজুহ’ (চেহারা আচ্ছন্ন হয়ে যাকবলে কাফিরদের দিকে ছুঁড়ে দেন সাথে সাথে কাফির-মুশরিকগুলির কোনোটা অন্ধকোনোটা বোবা-বধির হয়ে উজবুকের মতো চিৎকার করতে লাগলো শুরুতেই মুবারক এই মুজিযা শরীফ দেখে একদিকে মুসলিমদের জযবা আরো বহুগুণে বাড়তে থাকল বিপরীতে কাফিরদের মনোবল গেলো ভেঙে

 
 সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক কালামুল্রাহ শরীফে ইরশাদ করেন, “আপনি যে বালু নিক্ষেপ করেছেন,  তা তো আপনি নিক্ষেপ করেননিবরং তা মহান আল্লাহ পাক তিনি নিক্ষেপ করেছেন। (সূরা আনফাল, আয়াত১৮)
অর্থাৎ আপনার নিক্ষেপ মহান আল্লাহ পাক উনার নিক্ষেপের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশেই আপনি নিক্ষেপ করেছেন” সুবহানাল্লাহ!



No comments:

Post a Comment