আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ্। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুন। এখানে রয়েছে ইসলামী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জানা অত্যাবশ্যক।***
যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা সহ অনলাইনে ফ্রি ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সুযোগ ***
ডাঃ আহমদ ইমতিয়াজ ডি.এইচ.এম.এস, বি.এইচ.এম.সি (ঢাকা) মোবাইল - 01914440430 ই-মেইলঃ drahmadimtiaj@gmail.com ***

পবিত্র কুরবানীর হুকুম আহকাম

পবিত্র কুরবানীর হুকুম আহকাম ও ফাযায়িল ফজিলত প্রসংঙ্গে

কুরবানী মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক। যিলহজ্ব শরীফের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুর আদ্বহার দিন সূর্যোদয়ের পর ইশরাকের ওয়াক্ত হতেই দু’রাকায়াত পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার ওয়াজিব নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে জামায়াতে আদায় করতঃ সামর্থ্যবান তথা ছাহিবে নিছাব প্রত্যেক মুখলিছ বান্দা বা বান্দীর পক্ষ খেকে খালিছ নিয়তে মহান আল্লাহ পাক উনার নামে কুরবানী করা ওয়াজিব।

আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মালিকে নিছাব প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে কুরবানী করা ওয়াজিব। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই কুরবানী করতে হবে। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে তার নামে (পক্ষ থেকে) কুরবানী না করে মৃত বা জীবিত অপরের নামে (পক্ষ থেকে) কুরবানী করলে ওয়াজিব তরকের কারণে সে কঠিন গুনাহে গুনাহগার হবে। যদিও বাবা মা এর নামে (পক্ষ থেকে) কুরবানী করা হয়ে থাকে, যাদের প্রতি কুরবানী ওয়াজিব ছিল না। (দলীলসমূহ: সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)
পবিত্র কুরবানী উনার গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ মুবারক বর্ণিত রয়েছে। যেমন- মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা পবিত্র কুরবানী করবেনা তারা যেন ঈদগাহের নিকটে না আসে।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন, “আদম সন্তান পবিত্র কুরবানী উনার দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকে তন্মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো পবিত্র কুরবানী করা। ক্বিয়ামত দিবসে পবিত্র কুরবানী উনার পশু তার শিঙ, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং পবিত্র কুরবানীদাতার নাজাতের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবে।” সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র ঈদুল আযহা উনার দিনে বান্দা ও বান্দীর পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে সমস্ত পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী করা হবে ক্বিয়ামতের দিন সেই পশুগুলি পবিত্র কুরবানীদাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলছিরাত পার করে বেহেশেত পৌঁছিয়ে দিবে।” সুবহানাল্লাহ!

যিলহজ্জ্ব শরীফ মাস উনার ১০ কুরবানী করা ওয়াজিব।তবে, ১১  ১২ ও ১৩ তারিখ আছর পযর্ন্ত মোট  (তিনদিন কুরবানী করার বিধান রয়েছে। আর এ কারণেই পবিত্র ঈদুল আদ্বহার দিন ব্যতীত উক্ত তিন দিন রোযা রাখা হারাম।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 
তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন
سنة أبيكم إبراهيم عليه السلام 
অর্থঃ  “সম্মানিত কুরবানী হচ্ছেনআপনাদের পিতা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত সুন্নত
মুবারক।” সুবহানাল্লাহ্।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম কর্তৃক উনার প্রিয়তম আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী করার ঘটনা
(সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম = মহান আল্লাহ পাক উনার নবী সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম
সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম = মহান আল্লাহ পাক নবী সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম যিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ বা সন্তান)
একবার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার জিজ্ঞাসা করলেন,
ما هذه الأضاحي
অর্থ: “ইয়া রসূলাল্লাহ্! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সম্মানিত কুরবানী কি?”
তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
سنة أبيكم إبراهيم عليه السلام
অর্থ: “এটা (সম্মানিত কুরবানী) হচ্ছেন আপনাদের পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত সুন্নত মুবারক।সুবহানাল্লাহ্
সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত সুন্নত মুবারকটা কি সেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কিতাব কালামুল্লাহ শরীফ উনারসম্মানিত সূরা ছফফাত শরীফউনার১০০-১১০ নং সম্মানিত আয়াত শরীফউনার মধ্যে বর্ণনা করেছেন
সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বয়স মুবারক যখন ৮৬ বছর, তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া মুবারক করলেন,
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
অর্থ: “হে আমার রব! আপনি আমাকে একজন নেককার আল্লাহওয়ালা আওলাদ বা সন্তান হাদিয়া মুবারক করুন।” (সম্মানিত সূরা ছফফাত শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১০০)
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ
অর্থ: “(হে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম) আপনাকে একজন সহনশীল আওলাদ উনার সুসংবাদ দিচ্ছি।” (সম্মানিত সূরা ছফফাত শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১০১) অর্থাৎ আপনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করা হলো। সুবহানাল্লাহ্
যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন হাঁটা চলা শুরু করলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত যিলহজ্জ্ব শরীফ মাস উনার , , তারিখ (তিন) দিন সম্মানিত স্বপ্ন মুবারাক দেখলেন, তিনি উনার প্রিয় বস্তু কুরবানী মুবারক করছেন। এক বর্ণনামতে, তিনি প্রতিদিন ১০০ টি করে উট কুরবানী মুবারক করেছিলেন, অন্য বর্ণনা মতে, তিনি প্রথম দিন ১০০ টি দুম্বা বা বকরী, দ্বিতীয় দিন ১০০ টি গরু এবং তৃতীয় দিন ১০০ টি উট কুরবানী মুবারক করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ্
এরপর তিনি স্পষ্টভাবেই স্বপ্ন মুবারক দেখলেন যে তিনি উনার প্রিয়তম আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী মুবারক করছেন
সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ
অর্থ: “অতঃপর যখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে হাঁটাচলা শুরু করলেন। তখন উনার সম্মানিত পিতা তিনি উনাকে বললেন, নিশ্চয় আমি স্বপ্ন মুবারকে দেখলাম যে, আমি আপানাকে কুরবানী মুবারক করতেছি, এখন আপনার কি অভিমত? তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনি সেটাই করুন, যেটা আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আদেশ মুবারক প্রাপ্ত হয়েছেন। অবশ্যই শীঘ্রই আপনি আমাকে পাবেন, যাঁরা ধৈর্যশীল উনাদের অন্তর্ভুক্ত।সুবহানাল্লাহ্ (সম্মানিত সূরা ছফফাত শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১০২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ
অর্থ: “(সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম) উনারা দুজনেই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আদেশ মুবারক উনার প্রতি আত্নসমর্পন করলেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার প্রিয়তম আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে যবেহ করার জন্য শায়িত করলেন।” (সম্মানিত সূরা ছফফাত শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১০৩)
সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক আরও সুক্ষভাবে পালনার্থে নিজ চক্ষু মুবারকে কাপড় মুবারক বা পট্টি বাঁধলেন এবং উনার প্রিয়তম আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত গলা মুবারকে ছুরি চালালেন
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূর মুবারক তাশরীফ মুবারক রেখেছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে, কাজেই কোন ছুরি বা অন্যকিছুর পক্ষে কস্মিনকালেও উনাকে যবেহ বা কর্তন করা সম্ভব নয়।সুবহানাল্লাহ্
যখন সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছুরি চালাচ্ছিলেন, ছুরি সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটতে পারছিলো না
তখন সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছুরির ধার পরীক্ষা করার জন্য শক্ত পাথরের উপর নিক্ষেপ করলেন, পাথর কেটে দুই টুকরা হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ্
তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “হে ছুরি! তুমি শক্ত পাথর কেটে দুই টুকরা করে ফেললে কিন্তু তুমি আমার প্রিয়তম আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটতে পারছোনা কেন?”
তখন কুদরতীভাবে ছুরির যবান খুলে গেলো এবং ছুরি জওয়াব দিলো, “হে সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি (এক) বার আমাকে আদেশ মুবারক করেন কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ৭০ (সত্তর) বার নিষেধ করেন। তাই আমি গলা মুবারক কাটা থেকে বিরত আছি।সুবহানাল্লাহ্
মহান আল্লাহ পাক তিনি এই বিষয়টি এত পছন্দ করলেন, তিনি সাথে সাথে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ. قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ.
অর্থ: “আমি হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি নেদা (আহ্বান) মুবারক করলাম যে, হে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি আপনার স্বপ্ন মুবারককে বাস্তবে পরিণত করেছেন। আর এভাবেই আমি মুহসিন বা সৎকর্মশীল উনাদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।সুবহানাল্লাহ্ (সম্মানিত সূরা ছফফাত শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১০৪-১০৫)
সাধারণতঃ স্বপ্ন কিন্ত অস্পষ্ট। আর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্বপ্ন মুবারক হচ্ছেনসম্মানিত ওহী মুবারকউনার অন্তর্ভুক্ত। তারপরও স্বপ্ন কিন্তু স্বপ্নই আর বাস্তব কিন্ত বাস্তবই হয়ে থাকে
এই ঘটনাটি দেখে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এবং অন্যান্য ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা বেহেস্তের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করলেন, হে বারে ইলাহী! সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সত্যিই আপনার খলীল। কারণ সাধারণ মানুষের পক্ষে কোনদিন সম্ভব নয় নিজের প্রিয়তম আওলাদ উনার গলা মুবারকে ছুরি চালানো, উনাকে কুরবানী করে ফেলা। সেহেতু সত্যিই তিনি আপনার খলীল। সুবহানাল্লাহ্
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاء الْمُبِينُ
অর্থ: “নিশ্চয় এটি ছিলো সুস্পষ্ট পরীক্ষা।” (সম্মানিত সূরা ছফফাত শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১০৬)
আর সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সেই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সম্মান মর্যাদা মুবারকের সাথে উত্তীর্ন হয়েছেন এবং কায়িনাত মাঝে এক অনন্য মেছাল ক্বায়িম করেছেন। সুবহানাল্লাহ্
এখন যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে হিফাযত করবেন, সেহেতু তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, আপনি জান্নাত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে যান, যে দুম্বাটি জান্নাতে ৪০ (চল্লিশ) টি বসন্তকাল অতিবাহিত করেছেন। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সেই বেহেস্তী দুম্বা মুবারক নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন। তিনি দেখলেন তখনও সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার প্রিয়তম আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারকে ছুরি চালাচ্ছেন। এটা দেখে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সাথে সাথে বলে উঠলেন,
الله اكبر ، الله أكبر
الله أكبر من كل شيء
আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার!! আল্লাহু আকবার মিং কুল্লি শাইয়্যিন।
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্তকিছুর উপরে, তিনি সমস্তকিছুর চেয়ে বড়।সুবহানাল্লাহ,
এজন্যেই একজন পিতা উনার পক্ষে সম্ভব হয়েছে উনার প্রিয়তম সন্তান উনার গলা মুবারকে ছুরি চালানো। সুবহানাল্লাহ্
তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে অত্যন্ত তাযীম-তাকরীম মুবারক উনার সহিত উনাকে সড়িয়ে সেখানে সেই জান্নাতী দুম্বা মুবারক রাখলেন, ফলে সেই জান্নাতী দুম্বা মুবারক কুরবানী হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ্,
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ
অর্থ: “আর আমি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পরিবর্তে এক মহান পশু (বেহেস্তী দুম্বা মুবারক) যবেহ করার জন্য হাদিয়া মুবারক করলাম।” (সম্মানিত সূরা ছফফাত শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১০৭)
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার চক্ষু মুবারকে বাঁধা কাপড় বা পট্টি মুবারক খুলে দেখলেন উনার প্রিয়তম আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, আর উনার পরিবর্তে সেই বেহেস্তী দুম্বা মুবারক কুরবানী হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ
এটা দেখে সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
الله اكبر ، الله أكبر
لا اله إلا الله ، الله أكبر
الله أكبر من كل شيء
لا اله إلا الله ، الله أكبر
আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার!!
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার!!
আল্লাহু আকাব মিং কুল্লি শাইয়্যিন
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্তকিছুর উপরে। মহান আল্লাহ তিনি ছাড়া কোনন ইলাহ বা মাবুদ নেই।সুবহানাল্লাহ! উনার সমস্ত আদেশ মুবারক পালন করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্তকিছুর উপরে। তাই আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে আমার প্রিয়তম আওলাদ উনাকে কুরবানী করা
এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও সমস্ত ঘটনা দেখে বললেন,
الله اكبر ، الله أكبر
ولله الحمد
الله اكبر من كل شيء
ولله الحمد
আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার! ওয়া লিল্লাহিল হামদ
আল্লাহু আকবার মিং কুল্লি শাইয়্যিন
ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্তকিছুর উপরে, উনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা।সুবহানাল্লাহ্
সেজন্যে আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে কুরবানী হয়ে যাওয়া। সুবহানাল্লাহ্
এটিই আমরা তাকবীরে তাশরীক উনার মাধ্যমে সম্মানিত যিলহজ্জ্ব শরীফ মাস উনার তারিখ বা ফজর থেকে ১৩ তারিখ বা আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত পাঠ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি এই বিষয়টি স্বরণ করিয়ে দিচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ্
এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ
অর্থ: “আর আমি এই বিষয়টি পরবর্তী উম্মতদের জন্যও নির্ধারিত করেছি।” (সম্মানিত সূরা ছফফাত শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১০৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি চরম-পরম সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করেন,
سَلَامٌ عَلَى إِبْرَاهِيمَ. كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ.
অর্থ: “হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সালাম (রহমত, বরকত, সাকীনা) এভাবেই আমি মুহসিন বা সৎকর্মশীল উনাদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।সুবহানাল্লাহ্ (সম্মানিত সূরা ছফফাত শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১০৯-১১০)

পবিত্র কুরবানী একটি প্রতীকী ঘটনা এর মাধ্যমে মূলত মুসলমান শিরক এবং গাইরুল্লাহকেই যবেহ করে  পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জজবা লাভ করে থাকেন তাই তো কুরবানীর পশু জবেহ করার সময় অন্তুরে খেয়াল করতে হবে, যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করতেন যে আমার সন্তানকে কুরবানী করতে হবে, তাহলে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক পালন করার জন্য আমি আমার সন্তানকেও কুরবানী করতে প্রস্তুত আছি। সুবহানাল্লাহ্। 

পবিত্র কুরবানী মুসলমানদের কাছে যেমন প্রিয় গুরুত্বপূর্ণ বিধর্মীদের কাছে তেমনি অপ্রিয় না পছন্দির কাজ

গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা:
মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে যারা মজুসী বা অগ্নি উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মুতাবিক হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে থাকে 
যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবাহ বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা কুফরী হবে 
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থ: “যে, যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
তবে যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ্ তানযিহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি কুরবানীর দিন হাঁস, মুরগি ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন ছুবহি ছাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলে তাতে কোন বাধা নেই

No comments:

Post a Comment