উম্মাহাতুল মু'মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সংখ্যা ১৩ জন।
উনাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নাক মুবারকের উপর ক্লিক করুন।
النبى اولى بالـمؤمنين من انفسهم وازواجه امهاتهم
অর্থ:নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানদারগণের নিকট তাঁদের প্রাণর চেয়েও অধিক প্রিয়। আর উনার আহলিয়াগণ উনারা মু’মিনগণ উনাদের মাতা।” সুবহানাল্লাহ! (সূরা আহযাব: আয়াত শরীফ ৬)
২) উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম
৪) উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম
৫) উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত যায়নাব বিন খুজাইমা আলাইহাস সালাম
৬) উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম
৭) উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত জুয়াইরিয়া আলাইহাস সালাম
৮) উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম
৯) উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত রাইহানা আলাইহাস সালাম
১০) উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম।
১২) উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারিয়া ক্বিবতিয়া আলাইহাস সালাম।১৩) উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম।
উনাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নাক মুবারকের উপর ক্লিক করুন।
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যত মাখলূকাত তিনি সৃষ্টি করেছেন,
তন্মধ্যে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব আকরামুল খলায়িক্ব, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি শ্রেষ্ঠত্ব ও সর্বাধিক মর্যাদা, মর্তবা, ফযীলত তথা মাক্বামাত দান করেছেন।
এককথায় তিনি শুধুমাত্র আল্লাহ পাক নন।
এছাড়া আর যত প্রকার ফযীলত, মর্যাদা ও মর্তবা রয়েছে, তা সবই খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহপাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন।সুবহানাল্লাহ! খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলায়
বনী আদমকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।আর বনী আদমের মধ্যে যার সাথে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যতবেশি তায়াল্লুক ও মুহব্বত উনাকেই আল্লাহ পাক তিনি ততবেশি ফযীলত, মর্যাদা ও মর্তবা দান করেছেন।খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণেই উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সবচেয়ে বেশি ফযীলত, মর্যাদা ও মর্তবা।কারণ অন্যান্য মানুষের মধ্যে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথেই আখিরী
রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বাধিক তায়াল্লুক বা সম্পর্ক।
স্মরণীয়, প্রতিটি মানুষের হাক্বীক্বী মর্যাদা প্রকাশিত হবে জান্নাতে।আর হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা জান্নাতে থাকবেন স্বয়ং হাবীবুল্লাহ,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে।
সুতরাং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে সমস্ত মানুষের মধ্যে সর্বাধিক ফযীলত, মর্যাদা ও মর্তবার অধিকারী হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সর্বাধিক তায়াল্লুক ও মুহব্বত সম্পন্ন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফযীলত ও লক্বব মুবারক সম্পর্কে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ ফরমান,“
النبى اولى بالـمؤمنين من انفسهم وازواجه امهاتهم
অর্থ:নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানদারগণের নিকট তাঁদের প্রাণর চেয়েও অধিক প্রিয়। আর উনার আহলিয়াগণ উনারা মু’মিনগণ উনাদের মাতা।” সুবহানাল্লাহ! (সূরা আহযাব: আয়াত শরীফ ৬)
আলোচ্য আয়াত শরীফএ খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম উনার সঙ্গিনী আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে ‘উম্মুল মু’মিনীন’ বা ‘মু’মিনদের মাতা’ লক্বব হাদিয়া করেছেন।
অর্থাৎ আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গিনী আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা সমস্ত উম্মতের নিকট
নিজের মায়ের মতো।
প্রকৃতপক্ষে এক কথায় উনার যিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত সমস্ত জিন-ইনসানসহ সমস্ত কায়িনাতের
সম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহ! নিজের মাকে যেমন তা’যীম তাকরীম বা সম্মান করা ফরয, বরং তা
অর্থাৎ আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গিনী আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা সমস্ত উম্মতের নিকট
নিজের মায়ের মতো।
প্রকৃতপক্ষে এক কথায় উনার যিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত সমস্ত জিন-ইনসানসহ সমস্ত কায়িনাতের
সম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহ! নিজের মাকে যেমন তা’যীম তাকরীম বা সম্মান করা ফরয, বরং তা
থেকে লক্ষ কোটিগুণ বেশি ইজ্জত-সম্মান করা প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরয আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে।
নিজের মাকে যেরূপ বিয়ে করা হারাম, তেমনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম
উনাদেরকেও কোনো (পুরুষ) উম্মতের জন্য বিয়ে করা হারাম।
খালিক্, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ ফরমান,“হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায়ের পর উনার সঙ্গিনী আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তোমরা বিয়ে করবে না, তোমাদের জন্য উনাদেরকে বিয়ে করা হারাম।”
(সূরা আহযাব : আয়াত ৫৩)
উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফযীলত সম্পর্কে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,“হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার আহলিয়াগণ! আপনারা অন্যান্য মহিলাদের মতো নন।”(সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩২) অর্থাৎ সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন দুনিয়ার অন্য কোনো মানুষের মতো নন, তেমনি উনার আহলিয়াগণ উনারাও দুনিয়ার অন্য কোনো মহিলার মতো নন।খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বেমেছাল পূত-পবিত্রা এবং সুমহান চরিত্র মুবারক-এর অধিকারিণী করে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খাছ করে সৃষ্টি করেছেন, সেজন্য উনাদের আরেকটি খাছ লক্বব মুবারক হলো ‘আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত’ অর্থাৎ পূত-পবিত্রা আহলিয়াগণ।
এ সম্পর্কে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,“হে (আল্লাহ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে (সর্বপ্রকার) অপবিত্রতা, অশালীনতা দূর করতে।
তিনি আপনাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্রা করতে চান।”
(সূরা আহযাব : আয়াত ৩৩)
উপরোক্ত আয়াত শরীফএর অর্থ এটা নয় যে, আহলে বাইত উম্মুল মু’মিনীনগণ উনাদের মধ্যে কোনো প্রকার অপবিত্রতা রয়েছে যা থেকে উনাদেরকে পবিত্র করতে হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে যে, খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং স্বীয় ভাষায় কুরআন
শরীফ উনার মধ্যে উনাদের পবিত্রতার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। যেমন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী হিসেবে সৃষ্টি হওয়ার পরও উনাকে চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নবী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মূলত, কোনো প্রকার অশ্লীল ও অশালীন কাজ তো দূরের কথা, কোনো প্রকার অশোভনীয় ও মুরুওয়াতের খিলাফ কাজও হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদের স্পর্শ করতে
পারেনি। সুবহানাল্লাহ!
তাই খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ ফরমান, “হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গিনীগণ! আপনাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো প্রকার স্পষ্ট শালীনতার
খিলাফ কাজে জড়িত হন, তবে উনাকে দ্বিগুণ অসন্তুষ্টি দেয়া হবে। এটা খালিক্ব, মালিক, রব মহান
আল্লাহ পাক উনার পক্ষে অত্যন্ত সহজ।”
(সূরা আহযাব : আয়াত ৩০)
উপরোক্ত আয়াত শরীফএ দ্বিগুণ অসন্তুষ্টির কথা বলা হয়েছে। তার অর্থ হলো উনারা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
বরকতময় ছোহবত অর্জন ও সঙ্গিনী হওয়ার কারণে উনাদের মর্যাদা মর্তবা অন্যান্যদের তুলনায়
সীমাহীন ঊর্ধ্বে।
যেমন হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের ক্ষেত্রে কালাম পাক-এ ইরশাদ হয়েছে, “খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নবীরসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের থেকে এই
মর্মে ওয়াদা নিলেন যে, আমি আপনাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করবোঅতঃপর আপনাদেরকে
প্রদত্ত কিতাবসমূহকে সত্য প্রতিপাদনকারী হিসেবে একজন রসূল, অর্থাৎ যিনি আখিরী রসূল, যিনি
আমার হাবীব তিনি আগমন করবেন। আপনারা উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে পেলে খিদমত করবেন। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা কি আমার এ ওয়াদা স্বীকার ও গ্রহণ করলেন? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং
আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। এরপর যারা এ ওয়াদা থেকে ফিরে যাবেন উনারা কিন্তু নবী ও রসূল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবেন না।”
(সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৮১, ৮২)
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত ওয়াদা নিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই ওয়াদা থেকে ফিরে যাননি বা ওয়াদা ভঙ্গ করেননি। আর ওয়াদা ভঙ্গ করার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ নবীরসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা প্রত্যেকেই খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
উনার প্রদত্ত ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং উনারা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি পূর্ণ অনুগত। উপরোক্ত আয়াত শরীফএর মূল উদ্দেশ্য ছিল কেবল এ কথাটি জানিয়ে দেয়া যে, আপনাদেরকে
যেহেতু সবচাইতে শ্রেষ্ঠ ও মহান নিয়ামত, অর্থাৎ নুবুওওয়াত ও রিসালত প্রদান করা হবে, আর তা
প্রদান করার শর্ত হিসেবে যে ওয়াদা করা হলো তা পালন না করলে সে নিয়ামত বহাল থাকবে না।আর এটাই স্বাভাবিক এবং বাস্তবসম্মত কথা যে, যাকে যত বড় নিয়ামত দেয়া হবে তিনি যদি সে
নিয়ামতের ক্বদর ও শুকরিয়া না করেন, তাহলে সে অনুপাতেই তার বিপরীত অবস্থা হওয়া উচিত।প্রকৃতপক্ষে আয়াত শরীফ এর উদ্দেশ্য অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা নয়। বরং উনারা সর্বদাই খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিতেন
এবং তাই তলব করতেন।
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,“হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আহলিয়াগণ উনাদেরকে বলুন; যদি আপনারা পার্থিব জীবন ও
দুনিয়াবী সৌন্দর্য কামনা করেন; তবে আসুন,আপনাদেরকে দ্রব্যসামগ্রী ও বিলাসিতার ব্যবস্থা করে
দেই এবং আমি আপনাদেরকে উত্তম পন্থায় চলে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আর যদি আপনারা
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং পরকালীন
কল্যাণ কামনা করেন, তবে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের সৎকর্ম
পরায়ণতার জন্য মহা পুরস্কারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।”
(সূরা আহযাব : আয়াত ২৮, ২৯)
এ আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে
বর্ণিত আছে। তিনি বলেন,“আমাদের পরিধানের পোশাক এক সেট থাকার কারণে আমাদের ইবাদত বন্দেগী এবং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত যথাযথভাবে সম্পাদন করা কষ্টকর হয়ে পড়ার আশঙ্কায়
আমরা দ্বিতীয় আরেক সেট পোশাক সম্পর্কে জানিয়ে ছিলাম, যাতে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত
যথাযথভাবে সম্পাদন করা সহজ হয়। অর্থাৎ খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রকৃতপক্ষে আমাদের পবিত্রতাই ঘোষণা করেন।” অনেকে মনে করে যে,“হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা অন্যান্য
মহিলাদের মতো আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে দুনিয়াবী সম্পদ তলব করেন।” নাউযুবিল্লাহ!
সেই ভ্রান্ত ধারণার মূলোৎপাটনের জন্য খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এ আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন যে, হাক্বীক্বত উনারা দুনিয়া তলব করেননি। বরং হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা যে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য দুনিয়াবী সমস্ত কিছু ত্যাগ করে খালিছভাবে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের
সন্তুষ্টি হাছিলে মশগুল ছিলেন, তারই স্পষ্ট বর্ণনা ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এ আয়াত শরীফ এ দান করেন।
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে।
নিজের মাকে যেরূপ বিয়ে করা হারাম, তেমনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম
উনাদেরকেও কোনো (পুরুষ) উম্মতের জন্য বিয়ে করা হারাম।
খালিক্, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ ফরমান,“হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায়ের পর উনার সঙ্গিনী আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তোমরা বিয়ে করবে না, তোমাদের জন্য উনাদেরকে বিয়ে করা হারাম।”
(সূরা আহযাব : আয়াত ৫৩)
উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফযীলত সম্পর্কে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,“হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার আহলিয়াগণ! আপনারা অন্যান্য মহিলাদের মতো নন।”(সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩২) অর্থাৎ সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন দুনিয়ার অন্য কোনো মানুষের মতো নন, তেমনি উনার আহলিয়াগণ উনারাও দুনিয়ার অন্য কোনো মহিলার মতো নন।খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বেমেছাল পূত-পবিত্রা এবং সুমহান চরিত্র মুবারক-এর অধিকারিণী করে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খাছ করে সৃষ্টি করেছেন, সেজন্য উনাদের আরেকটি খাছ লক্বব মুবারক হলো ‘আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত’ অর্থাৎ পূত-পবিত্রা আহলিয়াগণ।
এ সম্পর্কে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,“হে (আল্লাহ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে (সর্বপ্রকার) অপবিত্রতা, অশালীনতা দূর করতে।
তিনি আপনাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্রা করতে চান।”
(সূরা আহযাব : আয়াত ৩৩)
উপরোক্ত আয়াত শরীফএর অর্থ এটা নয় যে, আহলে বাইত উম্মুল মু’মিনীনগণ উনাদের মধ্যে কোনো প্রকার অপবিত্রতা রয়েছে যা থেকে উনাদেরকে পবিত্র করতে হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে যে, খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং স্বীয় ভাষায় কুরআন
শরীফ উনার মধ্যে উনাদের পবিত্রতার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। যেমন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী হিসেবে সৃষ্টি হওয়ার পরও উনাকে চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নবী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মূলত, কোনো প্রকার অশ্লীল ও অশালীন কাজ তো দূরের কথা, কোনো প্রকার অশোভনীয় ও মুরুওয়াতের খিলাফ কাজও হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদের স্পর্শ করতে
পারেনি। সুবহানাল্লাহ!
তাই খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ ফরমান, “হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গিনীগণ! আপনাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো প্রকার স্পষ্ট শালীনতার
খিলাফ কাজে জড়িত হন, তবে উনাকে দ্বিগুণ অসন্তুষ্টি দেয়া হবে। এটা খালিক্ব, মালিক, রব মহান
আল্লাহ পাক উনার পক্ষে অত্যন্ত সহজ।”
(সূরা আহযাব : আয়াত ৩০)
উপরোক্ত আয়াত শরীফএ দ্বিগুণ অসন্তুষ্টির কথা বলা হয়েছে। তার অর্থ হলো উনারা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
বরকতময় ছোহবত অর্জন ও সঙ্গিনী হওয়ার কারণে উনাদের মর্যাদা মর্তবা অন্যান্যদের তুলনায়
সীমাহীন ঊর্ধ্বে।
যেমন হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের ক্ষেত্রে কালাম পাক-এ ইরশাদ হয়েছে, “খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নবীরসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের থেকে এই
মর্মে ওয়াদা নিলেন যে, আমি আপনাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করবোঅতঃপর আপনাদেরকে
প্রদত্ত কিতাবসমূহকে সত্য প্রতিপাদনকারী হিসেবে একজন রসূল, অর্থাৎ যিনি আখিরী রসূল, যিনি
আমার হাবীব তিনি আগমন করবেন। আপনারা উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে পেলে খিদমত করবেন। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা কি আমার এ ওয়াদা স্বীকার ও গ্রহণ করলেন? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং
আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। এরপর যারা এ ওয়াদা থেকে ফিরে যাবেন উনারা কিন্তু নবী ও রসূল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবেন না।”
(সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৮১, ৮২)
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত ওয়াদা নিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই ওয়াদা থেকে ফিরে যাননি বা ওয়াদা ভঙ্গ করেননি। আর ওয়াদা ভঙ্গ করার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ নবীরসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা প্রত্যেকেই খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
উনার প্রদত্ত ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং উনারা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি পূর্ণ অনুগত। উপরোক্ত আয়াত শরীফএর মূল উদ্দেশ্য ছিল কেবল এ কথাটি জানিয়ে দেয়া যে, আপনাদেরকে
যেহেতু সবচাইতে শ্রেষ্ঠ ও মহান নিয়ামত, অর্থাৎ নুবুওওয়াত ও রিসালত প্রদান করা হবে, আর তা
প্রদান করার শর্ত হিসেবে যে ওয়াদা করা হলো তা পালন না করলে সে নিয়ামত বহাল থাকবে না।আর এটাই স্বাভাবিক এবং বাস্তবসম্মত কথা যে, যাকে যত বড় নিয়ামত দেয়া হবে তিনি যদি সে
নিয়ামতের ক্বদর ও শুকরিয়া না করেন, তাহলে সে অনুপাতেই তার বিপরীত অবস্থা হওয়া উচিত।প্রকৃতপক্ষে আয়াত শরীফ এর উদ্দেশ্য অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা নয়। বরং উনারা সর্বদাই খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিতেন
এবং তাই তলব করতেন।
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,“হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আহলিয়াগণ উনাদেরকে বলুন; যদি আপনারা পার্থিব জীবন ও
দুনিয়াবী সৌন্দর্য কামনা করেন; তবে আসুন,আপনাদেরকে দ্রব্যসামগ্রী ও বিলাসিতার ব্যবস্থা করে
দেই এবং আমি আপনাদেরকে উত্তম পন্থায় চলে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আর যদি আপনারা
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং পরকালীন
কল্যাণ কামনা করেন, তবে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের সৎকর্ম
পরায়ণতার জন্য মহা পুরস্কারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।”
(সূরা আহযাব : আয়াত ২৮, ২৯)
এ আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে
বর্ণিত আছে। তিনি বলেন,“আমাদের পরিধানের পোশাক এক সেট থাকার কারণে আমাদের ইবাদত বন্দেগী এবং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত যথাযথভাবে সম্পাদন করা কষ্টকর হয়ে পড়ার আশঙ্কায়
আমরা দ্বিতীয় আরেক সেট পোশাক সম্পর্কে জানিয়ে ছিলাম, যাতে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত
যথাযথভাবে সম্পাদন করা সহজ হয়। অর্থাৎ খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রকৃতপক্ষে আমাদের পবিত্রতাই ঘোষণা করেন।” অনেকে মনে করে যে,“হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা অন্যান্য
মহিলাদের মতো আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে দুনিয়াবী সম্পদ তলব করেন।” নাউযুবিল্লাহ!
সেই ভ্রান্ত ধারণার মূলোৎপাটনের জন্য খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এ আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন যে, হাক্বীক্বত উনারা দুনিয়া তলব করেননি। বরং হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা যে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য দুনিয়াবী সমস্ত কিছু ত্যাগ করে খালিছভাবে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের
সন্তুষ্টি হাছিলে মশগুল ছিলেন, তারই স্পষ্ট বর্ণনা ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এ আয়াত শরীফ এ দান করেন।
সর্বাধিক মশহুর, গ্রহণযোগ্য, প্রণিধানপ্রাপ্ত এবং অধিক দলীল সম্মত মতে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সর্বমোট তের জন। নিম্নে উনাদের পরিচিতি মুবারক সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো।
১। উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম
প্রথম উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতু বিনতে খুয়াইলিদ আলাইহাস সালাম। মশহুর মতে, আমুল ফীলের ১৫ বছর পূর্বে তিনি সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। উনার বুযুর্গী, সততা, একনিষ্টতা এবং আমানতদারীর দরুণ জাহিলিয়াতের সময়ও মানুষ উনাকে ত্বহিরা লক্বব মুবারকে অভিহিত করতো। তিনি ছিলেন আরবের সবচেয়ে বড় এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পরপর দু’বার শাদী মুবারক হয়। কিন্তু দু’বারই তিনি বিধবা হন। অতপর, আনুষ্ঠানিক সম্মানিত নবুওওয়াত উনার প্রকাশের ১৫ বছর পূর্বে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২৫ বছর বয়স মুবারকে উনাকে শাদী মুবারক করেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নবুওওয়াত উনার ঘোষণার দশম বছরে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম ১৭ রমাদ্বান শরীফ ৬৫ বছর বয়স মুবারকে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
২। উম্মুল মু’মিনীন হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম
দ্বিতীয় উম্মুল মু’মিনীন হযরত সাওদা বিনতে যাময়া আলাইহাস সালাম। হযরত সাকরান ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার সাথে হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী মুবারক সংঘটিত হয়। উনারা দু’জন এক সাথেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণ করেন। এবং আবিসিনায় হিজরত করেন। কিছুদিন সেখানে অবস্থান করত উনারা সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার মাঝে ফিরে আসেন। এবং সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার মধ্যেই হযরত সাকরান রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
আনুষ্ঠানিক সম্মানিত নবুওওয়াত উনার প্রকাশের দশম বছর হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুজরা শরীফ উনার আভ্যন্তরীন খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেয়ার জন্য একজন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমত উনার প্রয়োজন দেখা দেয়। এমতাবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক করেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম)
তিনি ২৩ হিজরীতে হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত কালে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। (তারীখুল খুলাফা)
৩। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার কন্যা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন তৃতীয় উম্মুল মু’মিনীন। আনুষ্ঠানিক সম্মানিত নবুওওয়াত উনার প্রকাশের পঞ্চম বছর তিনি সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার মাঝে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক অনুরোধে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে হিজরত উনার তিন বছর পূর্বে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে শাদী মুবারক করেন। তখন উনার বয়স মুবারক ছয় বছর। প্রথম হিজরীর ২১ শে শাওয়াল শরীফ নয় বছর বয়স মুবারকে হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি মুবারক হুজরা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। এবং সুদীর্ঘ প্রায় সাড়ে নয় বছর মুবারক খিদমত উনার আঞ্জাম দেন। উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যেই পবিত্র রওজা শরীফ স্থাপিত হয়।
(ছীরাতে ইবনে হিশাম,বুখারী শরীফ)
(ছীরাতে ইবনে হিশাম,বুখারী শরীফ)
হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে ৫৮ হিজরীর ১৭ই রমাদ্বান শরীফে ৬৭ বছর বয়স মুবারকে তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে।
৪। উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম
হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ বা কন্যা উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন চতুর্থ উম্মুল মু’মিনীন। আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত ঘোষণার পাঁচ বছর পূর্বে তিনি মক্কা শরীফে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। প্রাথমিক সময়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণকারী হযরত খুনাইস ইবনে হুযাইফা আস সাহমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী মুবারক সংঘটিত হয়। বদরী ছাহাবী হযরত খুনাইস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বদর উনার জিহাদে আহত হন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। (বুখারী শরীফ, তাহযীবুত তাহযীব)
উহুদ যুদ্ধের পর তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক করেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে মুহাদ্দিছগণ ৬০ খানা পবিত্র হাদীছ শরীফ সংরক্ষণ করার অবকাশ পেয়েছেন। আমিরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে ৪৫ হিজরীর শা’বান মাসে সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ৬৩ বছর হায়াত মুবারকে তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। সম্মানিত জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, উসদুল গবা)
৫। উম্মুল মু’মিনীন হযরত যাইনাব বিনতে খুযাইমা আলাইহাস সালাম
কুরাইশ বংশের মুদ্বার গোত্রের বণী আমের শাখায় পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণকারিণী উম্মুল মু’মিনীন হযরত যাইনাব বিনতে খুযাইমা আলাইহাস সালাম। ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণকারিণী মহিলা উনাদের মধ্যে তিনি অন্যতমা। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মতে, হযরত যাইনাব বিনতে খুযাইমা আলাইহাস সালাম উনার সাথে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাদী মুবারক হয়। তিনি তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে সংঘটিত উহুদ উনার যুদ্ধে মুবারক শাহাদাত বরণ করেন। পরবর্তীতে চতুর্থ হিজরীর শুরুতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম তিনি উনাকে শাদী মুবারক করেন। (মুসতাদরেকে হাকীম)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত যাইনাব বিনতে খুযাইমা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে দুই মাস মতান্তরে তিন মাস অবস্থান করেন। অতপর, তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। হিজরত উনার পরে সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মাঝে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণকারী মহিলা উনাদের মধ্যে তিনি প্রথম। (তিবরানী শরীফ)
৬। উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম
কুরাইশ বংশের বনী মাখযুম গোত্রে উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ ভাই এবং ফুফাতো ভাই হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে প্রথম শাদী মুবারক সংঘটিত হয়। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগেই উনারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উহুদ উনার যুদ্ধে আহত হন। অতঃপর দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকার পর চতুর্থ হিজরীর জুমাদাল উখরা মাসে তিনি শাহাদাত মুবারক বরণ করেন। আর সেই সময় হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন হামিলা। অতপর উনার কন্যা হযরত যাইনাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করার পর চতুর্থ হিজরীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে শাদী মুবারক করেন। উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আয়াতে তাত্বহীর নাযিল হয়। উনার সাথে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনার সাক্ষাত মুবারক হয়। (বুখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ,আসাহহুস সিয়ার)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণের সময়কাল নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। তবে মশহুর মতে, তিনি ৬৩ হিজরীতে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। (আসমাউস সাহাবা ওয়ার রুয়াত, তারীখুত ত্ববারী)
৭। উম্মুল মু’মিনীন হযরত জুয়াইরিয়া আলাইহাস সালাম
পঞ্চম হিজরীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বনু মুস্তালিক যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এ যুদ্ধে বনু মুস্তালিক পরাজিত হয়। প্রচুর পরিমান গণিমত অর্জিত হয়। এছাড়া ছয়শত লোকের অধিক বন্দী হয়। উম্মুল মু’মিনীন হযরত জুয়াইরিয়া আলাইহাস সালাম উনার প্রথম স্বামী মাসাকি বিন সফওয়ান এ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে। আর তিনি বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে নিজকে মুক্ত করার আরযী করেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে আজাদ করে দিয়ে শাদী মুবারক করেন। তিনি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। (মুসলিম শরীফ,আল ইসাবা)
৮। উম্মুল মু’মিনীন হযরত যাইনাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে হযরত যাইনাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম তিনি বিশেষ খুছুছিয়ত মুবারকে বৈশিষ্ট্যম-িত। কুরাইশ বংশের খুযাইমা গোত্রে উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ। উনার পিতা জাহাশ ইবনে রিয়াব। আর উনার মাতা হযরত উমায়মা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফুফু। সেই অনুযায়ী তিনি হলেন ফুফাতো বোন। তিনি প্রাথমিক যুগেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আজাদকৃত পালক সন্তান হযরত যায়িদ বিন হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে শাদী মুবারক করেন। বেশ কিছুদিন উনারা সংসার করলেও হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এক সময় উনাকে তালাক প্রদান করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পঞ্চম হিজরীতে হযরত যাইনাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক করেন।(আল ইস্তিয়াব)
হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার পবিত্র রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। (আল ইসাবা, সিয়ারুস সাহাবিয়ত, আল ইস্তিয়াব)
৯। উম্মুল মু’মিনীন হযরত রাইহানা আলাইহাস সালাম
পঞ্চম হিজরীতে আহযাব বা খন্দকের জিহাদ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে ইহুদী গোত্র বনু কুরাইযা কুরাঈশদেরকে সাহায্য করে। তাই মহান আল্লাহ পাক বনু কুরাইযা জিহাদের মুবারক নিদের্শ প্রদান করেন। জিহাদের সর্বশেষ ফায়সালা অনুযায়ী তাদের সমস্ত পুরুষকে হত্যা করা হয়। বিপুল পরিমান সম্পদ গনীমত হিসেবে আসে। তখন যুদ্ধবন্দি হিসেবে হযরত রাইহানা আলাইহাস সালাম তিনি আসেন। হাকাম নামীয় এক ব্যক্তির সাথে উনার প্রথম বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে বনু কুরাইযা যুদ্ধে নিহত হয়। (সীরাতে ইবনে হিশাম)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম তিনি হযরত রাইহানা আলাইহাস সালাম উনাকে পবিত্র ইসলাম উনার দাওয়াত মুবারক প্রদান করেন। তিনি ইসললাম গ্রহণ করলে উনাকে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কবুল করেন। তিনি ছিলেন অত্যাধিক খুব ছুরত মুবারকের অধিকারিনী। কয়েক বছর মুবারক খিদমতের আনযাম প্রদান করেন। অতপর তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকী শরীফে উনার রওযা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। (আর রহীকিল মাখতুম)
১০। উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম
কাতিবে ওহী, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বৈমাত্রিয় বোন উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম। বনী আসাদ গোত্রের উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশের সঙ্গে উনার প্রথম বিবাহ হয়। সম্মানিত ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হাবশায় হিজরত করেন। সেখানে উনার স্বামী উবাইদুল্লাহ মুরতাদ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। অতপর তিনি হাবশায় অবস্থান করতে থাকেন। মুবারক স্বপ্নে তিনি উম্মুল মু’মিনীন হওয়ার বিষয়টি অবগত হন। পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য শাদী মুবারকের পয়গাম প্রেরণ করেন। যা বাদশাহ নাজ্জাশী বাস্তবায়ন করেন। সেখানে অবস্থানরত মুসলমানগণ উনাদেরকে সাক্ষী রেখে বাদশা নিজেই বিবাহ পড়ান এবং মোহর আদায় করেন। (উসদুল গাবা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, উসদুল গাবা)
সপ্তম হিজরীতে উম্মুল মু’মিনীন, হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম তিনি হাবশা হতে মদীনা শরীফে হিজরত করেন। সেই বছরেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার ওয়ালিমা মুবারক ও উরুস মুবারক সম্পন্ন করেন। (মুসনাদে আহমদ,শরহুল মাওয়াহিব)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম উনার নিকট হতে মুহাদ্দিছগণ ৬৫ খানা পবিত্র হাদীছ শরীফ সংকলন করতে সক্ষম হয়েছেন। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে তিনি মদীনা শরীফে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। (আল ইসাবা)
১১। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছফিয়াহ আলাইহাস সালাম
হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উনার অধঃস্তন সন্তান উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাফিয়্যা বিনতে হুয়াঈ আলাইহাস সালাম। ইহুদী গোত্র বনী নাযীরে তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। সাল্লাম ইবনে মাশকামের সাথে উনার প্রথম শাদী সংঘটিত। সাল্লাম তালাক দিলে খাইবারের কামূস দূর্গের নেতা কিনানা ইবনে আবীলের সাথে উনার শাদী সংঘটিত হয়। সপ্তম হিজরীতে খাইবার জিহাদে কামূস দূর্গের পতন ঘটে। কিনানা ইবনে আবীল নিহত হয়। (আসাহহুস সিয়ার)
খাইবার যুদ্ধে যুদ্ধবন্দী হিসেবে উনাকে আনা হয়। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে গ্রহণ করেন। খাইবার হতে মদীনা শরীফে ফিরার পথে ‘সাহবা’ নামক স্থানে উনার শাদী মুবারকের ওয়ালীমার আয়োজন করা হয়। আর সেখানেই উনার মুবারক উরুস সংঘটিত হয়। (বুখারী শরীফ, আসাহহুস সিয়ার)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাফিয়্যা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে মুহাদ্দিছগণ দশ খানা হাদীছ শরীফ সংকলনের অবকাশ পেয়েছেন। তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। (মাজমাউল ফাওয়ায়েদ)
১২। উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম
ষষ্ঠ হিজরীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দিয়ে মিসরে মুবারক পয়গাম প্রেরণ করেন। মিসরের শাসক মুকাওকিস মুসলমান প্রতিনিধি উনাকে অত্যধিক তা’যীমের সহিত গ্রহণ করেন। মুকাওকিস নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে মূল্যবান অনেক দ্রব্য সামগ্রী, হাদিয়া করেন। পাশাপাশি হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনাকেও হাদিয়া স্বরুপ প্রেরণ করেন। (আসাহহুস সিয়ার)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম তিনি নাসারা ধর্মের অনুসারী ছিলেন। মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি নবম হিজরীতে হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। যিনি সতের বা আঠারো মাস বয়স মুবারকে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিলাফত কালে ১৬ হিজরীতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে।
১৩। উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম
কুরাঈশ বংশে উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমূনা বিনতিল হারিস আলাইহাস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। পরপর দু’বার উনার বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দু’বারই তিনি বিধবা হন।সপ্তম হিজরীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উমরা আদায় করার জন্য মক্কা শরীফে ইহরাম মুবারক বাধা অবস্থায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। তখন তিনি হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম উনাকে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে গ্রহণ করত আক্বদ মুবারক সম্পন্ন করেন। অতপর, মদীনা শরীফে ফিরার পথে ‘সারফ’ নামক স্থানে উনার শাদী মুবারকের ওয়ালিমা এবং উনার উরুস মুবারক সংঘটিত হয়। (আসাহহুস সিয়ার, বুখারী শরীফ)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে মুহাদ্দিছগণ ৭৬ খানা হাদীছ শরীফ সংকলনের অবকাশ পেয়েছেন। আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফত কালে তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। (তাহবীবুত তাহযীব)
মহান আল্লাহ পাক মুসলিম মিল্লাতকে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মুবারক শান উপলব্ধি করে উনাদের ব্যাপারে হুসনে যন পোষণ করত: উনাদের হক্ব হাক্বীক্বীভাবে আদায় করার তাওফীক দান করুন।
No comments:
Post a Comment