আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ্। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুন। এখানে রয়েছে ইসলামী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জানা অত্যাবশ্যক।***
যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা সহ অনলাইনে ফ্রি ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সুযোগ ***
ডাঃ আহমদ ইমতিয়াজ ডি.এইচ.এম.এস, বি.এইচ.এম.সি (ঢাকা) মোবাইল - 01914440430 ই-মেইলঃ drahmadimtiaj@gmail.com ***

ছলাতিল জানাযা

ছলাতিল জানাযা ও  মাইয়্যাতের হুকুম আহকাম   

মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে তাহার ওয়াশিদের উপর চারটি কাজ ফরয হইয়া থাকে।(ফরযে ক্বিফায়া) যথাঃ
১) মাইয়াতকে গোসল দেওয়া।
২) কাফন পড়ানো।
৩) জানাযা নামায আদায় করা।
৪) দাফন করা।
মাইয়্যেতের গোসল সম্পর্কীয় নিম্নোক্ত মাছআলাসমূহ অবশ্যই মনে রাখা উচিত।
১) যে ব্যক্তি মাইয়্যেতকে গোসল করাইবে তাহার নিজের ও গোসলের পূর্বে অযু করিয়া লওয়া এবং গোসল করানোর পরে গোসল করা উচিত।
২) মৃত ব্যক্তি পুরুষ হইলে তাহাকে পুরুষ এবং স্ত্রী হইলে তাহাকে স্ত্রী লোকে গোসল করাইবে ।
৩) গোসল করতে পুরুষের জন্য পুরুষ লোক এবং স্ত্রীলোকের জন্য স্ত্রীলোক না পাওয়া গেলে মাহরুম লোক (জীতিতাবস্তায় যাহার সাথে বিবাহ জায়েয ছিল না) মাইয়্যেতকে তৈয়ম্মুম করাইয়া দিবে, গোসলের প্রয়োজন হইবে না।
৪) মাহরুম লোকের অভাব হইলে অন্য কোন ব্যক্তির হাতে কাপড় পেঁচাইয়া তৈয়ম্মুম করাইয়া দিবে।
৫) লোকাভাবে স্ত্রী স্বামীকে গোসল করাইতে পারিবে, কিন্তু স্বামী স্ত্রীলোকে গোসল করাতে পারবে না।
৬) অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক বালিকাদিগকে স্ত্রী-পুরুষ যে কেহ গোসল করাইতে পারে।
৭) সন্তান ভুমিষ্ট হইয়া মূহুর্তমাত্র জীবিত থাকিয়া মরিয়া গেলে তাহাকেও গোসল করাইতে হইবে, অবশ্য অজু করাইতে হইবে না। আর মাতৃগর্ভ হইতে মৃত ভুমিষ্ট হইলে তাহাকে গোসল করাইতে হইবে না।
৮) কেহ পানিতে ডুবিয়া মরিলে তাহাকেও গোসল করাইতে হইবে। অবশ্য পানি হইতে উঠাইবার সময় গোসলের নিয়তে তিন বার নাড়িয়া চাড়িয়া উঠাইলে গোসল আদায় হইয়া যায়।
৯) ধর্ম যুদ্ধে শহীদ ব্যক্তিকে গোসল করাইতে হয় না।
১০) সমস্ত শরীর একবারে পানি বহাইয়া গোসল করান ওয়াজিব, কিন্তু তিন তিনবার করিয়া সমস্ত শরীরে পানি ঢালিয়া ধৌত করা মুস্তাহাব।
কাফন
মৃত লাশকে যে কাপড় পরিধান করাইয়া সমাধিস্থ করা হয় তাহাকে কাফন বলে। লাশকে কাফন দেওয়া ফরযে ক্বিফায়া। পুরুষ এবং স্ত্রী লাশের কাফন দেওয়ার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রহিয়াছে। যথাঃ পুরুষের জন্য মোট তিনখানা কাপড় ব্যবহার করিতে হয়।
১) লেফাফা বা চাদর
২) পিরহান
৩) ইযার বা তহবন্দ। ইহা পুরুষের জন্য সুন্নত কাফন।
পুরুষের জন্য ক্বিফায়া কাফন দুইখানা; যথাঃ ১) চাদর। ২) ইযার। অর্থাৎ এই দুইখানা কাফন পরাইলেই ফরযে ক্বিফায়া আদায় হইয়া যায়। ওজর বশতঃ কাপড় না মিলিলে পুরুষকে শুধু একখানা কাপড় অর্থাৎ ইযার পড়াইয়াও দাফন করা যায়। ইহাকে পুরুষের জরুরত কাফন বলে।
স্ত্রীলোকের জন্য সুন্নত কাফন পাঁচখানা। তাহার প্রথম তিনখানা পুরুষের মত আর অতিরিক্ত দুইখানা ১) ছিনাবন্দ এবং ২) ওড়না। স্ত্রীলোকের জন্য ক্বিফায়া কাফন তিনখানা যথাঃ ১) চাদর ২) পিরহান এবং ৩) ইযার।
স্ত্রীলোকের জরুরত কাপড় দুইখানা। ১) চাদর (লেফাফা) এবং ২) ইযার। লেফাফা মাথা হইতে পায়ের সৃদ্ধাঙ্গুলীর চেয়ে কিছু বেশী লম্বা করিবে। পিরহান ঘাড় হইতে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত লম্বা করিবে। স্ত্রীলোকের ছিনাবন্দ হাঁটু পর্যন্ত চওড়া করিবে এবং ওড়না দুই হাত দৈর্ঘ্য ও এক হাত প্রস্থ্য রাখিবে।
পুরুষের লাশ হইলে একখানা খাট বা তক্তার উপরে প্রথমে চাদর তারপর ক্রমান্বয়ে ইযার ও পিরহান বিছাইবে। তারপর কাফনের উপরে লাশ শোয়াইয়া উহার নাক, ললাট ও ছিনা ইত্যাদি স্থানে কিছু খুশবু লাগইয়া প্রথমে পিরহান লেপটাইবে। এই ভাবে চাঁদরও লেপটাইয়া দিবে।
স্ত্রীলোকের লাশ হইলে প্রথমে ছিনাবন্দ বিছাইবে তারপর ক্রমান্বয়ে লেফাফা, ইযার ও পিরহান বিছাইবে। তারপর লাশ শয়ন করাইয়া পুরুষের ন্যায় খুশবু লাগাইয়া প্রথমে পিরহান পরাইবে। তারপর মাথার চুল দুই ভাগ করিয়া কাঁধের দুই দিক দিয়া আনিয়া বুকের উপর রাখিবে এবং ওড়না মাথায় জড়াইয়া উহা দ্বারা ছিনার উপরের চুলও ঢাকিয়া দিবে। তারপর প্রথমে বামদিক হইতে এবং পরে ডান দিক হইতে ক্রমান্বয়ে ইযার, লেফাফা ও ছিনাবন্দ পরাইয়া দিবে। কাফন পরান হইয়া গেলে একটু পেঁচাইয়া মাথার উপরে ও পায়ের নীচে নেকড়া কিংবা সূতা দ্বারা হালকাভাবে বাঁধিয়া দিবে।
কাফন পরাইয়া তাহার উপরে কিছু আতর বা অন্য কোন সুঘ্রাণ জাতীয় জিনিস মাখিয়া দিবে। ধর্মযুদ্ধে শহীদ ব্যক্তিকে যেমন গোসল কারাইবার দরকার হয় না, তেমন তাহাদের কাফন পরানোর প্রয়োজন হয় না, বরং তাহাদের পরিহিত রক্তমাখা কাপড়েই তাহাদিগকে দাফন করিবে। লাশ দাফন করিবার পর যদি কবর হইতে কোন জন্তু উহা বাহির করিয়া ফেলে বা অন্য কোন ভাবে বাহির হইয়া পড়ে এবং দেখা যায় যে, লাশের কাপড় বিনষ্ট বা অপহৃত হইয়াছে, তখন লাশ পঁচিয়া গলিয়া গিয়া না থাকলে আবার নতুন ভাবে কাফন পরাইয়া দিবে। আর যদি ইহা পঁচিয়া গলিয়া যাইয়া থাকে তবে একখানা কাপড় দ্বারা পেঁচাইয়া দিবে।

জানাযার নামায

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাইয়া, কাফন পরাইয়া তাহার মাগফিরাত ও পরকালে মুক্তির জন্য কতক লোক একত্র হইয়া যে নামায পড়িতে হয়, তাহাকে জানাযার নামায বলে। এই নামায মুসলমানদের উপর ফরযে ক্বিফায়া অথাৎ জানাযার সংবাদ শ্রবণকারী সকল লোকের পক্ষ হইতেই ফরয আদায় হইয়া যায়, আর কেহই আদায় না করিলে প্রত্যেককেই গুণাহগার হইতে হইবে।
লাশকে গোসল করাইয়া কাফন পরাইয়া একটি প্রশস্ত পবিত্র স্থানে খাটের উপরে উত্তর শিয়রী করিয়া শয়ন করাইবে; তারপর মৃতের যাবতীয় ঋণ ও দেনা ইত্যাদি শোধ বা মাফ করাইয়া তাহার সন্তান বা অন্য কোন ওলী ব্যক্তি নামাযের ইমামতী করিতে মৃতকে সম্মুখে রাখিয়া তাহার বক্ষ বরাবর দন্ডায়মান হইবেন। লাশের ওলী নিজে ইমামতী না করিলে তাহার অনুমতিক্রমে অন্য কোন পরহেজগার আলেম ব্যক্তি ইমাম নিযুক্ত হইবেন। ইমামের পিছনে মোক্তাদিরা তিন, পাঁচ বা সাত এইরূপ বে-জোড় কাতারে দাঁড়াইবে। এই নামায দাঁড়াইয়া আদায় করিতে হয়, ইহাতে কোন রুকু সিজদা বা বৈঠক ইত্যাদি নাই। এই নামায বসিয়া পড়িলে শুদ্ধ হইবে না।
ইমাম ও মোক্তাগিণ একই সঙ্গে নিয়া কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাইয়া তাকবীরে তাহরীমা বলিয়া হাত বাঁধিবে। ইহার পর ক্রমান্বয়ে আর ও অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলিতে হইবে, তবে তাহাতে হাত উঠাইতে হইবে না, বরং তাহরিমা বাঁধা অবস্থায় থাকিবে। তাকবীর ইমাম এক শব্দ করিয়া উচ্চারণ করিবেন আর মোক্তাদিরা চুপে চুপে বলিবে।
অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি বলিবার নিয়ম এইরূপ প্রথম অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমার পরে প্রত্যেকে (চুপে চুপে) ছানা পাঠ করিবে। তারপর ২য় তাকবীর বলিয়া (চুপে চুপে) দুরুদ পাঠ করিবে তৃতীয় তাকবীর বলিয়া দরূদ পটিত হয়। তারপর তাকবীর বলিয়া সালাম ফিরাইয়া নামাজ শেষ করিবে।
জানাযা নামাযের নিয়ত

نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবাআ তাকরীরাতে ছালাতিল জানাযাতে ফারযুল ক্বিফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার।

অনুবাদঃ আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে জানাযা নামাজের চারি তাকবীর ফরযে ক্বিফায়া কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম। ইহা আল্লাহু তায়ালার প্রশংসা রাসূলের প্রতি দরূদ এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া (আর্শীবাদ) আল্লাহ মহান।
নিয়তের মধ্যে অন্যান্য জামাতের নামাযের নিয়তের ন্যায় ইমাম তাহার অতিরিক্ত খাছ কালাম (আনা ইমামুলেলমান হাজারা ওয়া মাইয়্যাহজুরু) এবং মোক্তাদিগণ তাহাদের অতিরিক্ত খাছ কালামটি পাঠ করিলে। (একতেদাইতু বেহাযাল ইমাম) আর নিয়তের ‘লিহাযাল মাইয়্যেতে’ শব্দটি কেবল পুরুষ লাশের বেলায় বলিতে হইবে, কিন্তু স্ত্রী লাশ হইলে ঐ শব্দটির স্থলে ‘লিহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলিতে হইবে।
ছানা

سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ

সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ আমরা তোমার পবিত্রতার গুণগান করিতেছি। তোমার নাম মংগলময় এবং তোমার স্তুতি অতি শ্রেষ্ঠ, তুমি ব্যতীত আর কেহই উপাস্য নাই।
ছানার পরে তাকবীর বলিয়া তাশাহুদের পরের দরূদ পড়িতে হয়।

দুরুদ শরীফ

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ

আল্লাহুম্মা ছল্লিআলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অনুবাদঃ যে আল্লাহ পাক! মুহাম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং উনার বংশধরগণের উপর ঐরূপ রহমত অবতীর্ণ করুন যেইরূপ রহমত হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এবং উনার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম। হে আল্লাহ পাক! মুহাম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং উনার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ করুন যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এবং উনার বংশরগণের উপর করিয়াছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম।

জানাযার দোয়া

اَلَّهُمَّ اغْفِرْلحَِيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِْسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَىالاِْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَاَارْ حَمَالرَّحِمِيْنَ

আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ্ আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অুপস্থিত বালকও বৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে যাহাদিগকে তুমি জীবিত রাখ তাহাদিগকে মৃত্যুর মুখে পতিত কর। তাহাদিগকে ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করাইও।
জানাযার নামাযের ইমাম যদি ভুলবশতঃ দুই তাকবীর বলিয়া সালাম ফিরাইয়া থাকেন তবে আবার দুই তাকবীর বলিয়া সালাম ফিরাইবেন। এইরূপ তিন তাকবীর বলিয়া সালাম ফিরাইলে পুনরায় এক তাকবীর বলিয়া ছালাম ফিরাইবেন।
ইমাম ভুলে পাঁচ তাকবীর বলিলে মোক্তাদিগণ চারি তাকবীর পর্যন্ত বলিয়া চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিবেন এবং ইমামের সংঙ্গে একত্রেই সালাম ফিরাইবে। কোন লোক জানাযার নামাযে ইমামের কয়েকটা তাকবীর না বলার পর আসিয়া শরীক হইলে সে তাহরীমার তাকবীর না বলিয়া কিছু সময় ইমাম যখন তাকবীর বলিবেন অমনি তাহার সহিত তাকবীর বলিয়া নামাযে শরীক হইয়া যাইবে। ইহাই তাহার জন্য তাকবীরে তাহরিমা হইবে। তারপর যে তাকবীরগুলি ইমামের সংগে না পাইয়াছে তাহাই বলিবে। তাহাকে আর কিছুই পড়িতে হইবে না।
কোন লোক ইমামের চার তাকবীর হইয়া যাওয়ার পর নামাজে শরীক হইলে সে ইমামের সালাম ফিরাইবার পরে শুধু তাকবীর গুলো বলিয়াই সালাম ফিরাইবে।
কাহারও মৃতু্য সংবাদ শুনিয়া দূরবর্তী এলাকায় তাহার জন্য গায়েবানা নামায পড়িলে জায়েয হইবে।
কোন লোককে জানাযার নামায ব্যতীত দাফন করিলে তাহার উপরে তিনদিন পর্যন্ত জানাযার নামায পড়া জায়েয আছে।
কোন সন্তান মৃত ভূমিষ্ট হলে তাহার জন্য জানাযার নামায পড়িতে হয় না।
মসজিদের অভ্যন্তরে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ।
কেহ জানাযা নামাযের দোয়া না জানিলে সে শুধু “আললাহুম্মাগ ফিরলিল মুমিনীনা ওয়াল মুমিনাতে” এইটুকু বলিবে।

লাশ যদি নাবালক ছেলে হয় তবে নিচের দোয়া পড়তে হবে

اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوْ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَا فِعًة وَمُشَفَّعًا-

আল্লাহুম্মাজ আলহুলানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
অনুবাদঃ হে আল্লাহ! উহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও উহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর এবং উহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।

লাশ যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে নিচের দোয়া পড়তে হবে।

اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهَ لَنَا شَا فِعً وَمُشَفَّعًا

আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
অনুবাদঃ হে আল্লাহ! ইহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও ইহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর। এবং ইহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও। দুইহাত দুইপাশে ঝুলাইয়া ইমাম সাহেব ডানে এবং বামে ছালাম ফিরাইবে।

কবর
কবর দৈর্ঘ্য লাশ অপেক্ষা কিছু বড় এবং প্রস্থ দৈর্ঘ্যর অন্ততঃ অর্ধেক পরিমাণ খনন করিবে। গভীরতায় বুজ অথবা নাভী সমান করিবে। কবর সাধারণতঃ দুই রকম করা হয়।
১) শক কবর (খাড়া কবর)
শক কবর হইলে উপর হইতে একেবারে খাড়া ভাবে সোজা নীচের দিকে বরক অথবা নাভী পর্যন্ত খনন করা। এই প্রকার কবর হইতে অনেক সময় বন্য জন্তুরা লাশ টানিয়া উপরে উঠাইয়া ফেলে। কাজেই ইহা মোটেই নিরাপদ নয়।

২) লহদ কবর
লহদ কবর হইল উপর হইতে কিছুদূর পর্যন্ত খাড়া ভাবে খনন করিয়া তারপর এক পার্শ্বে বাকা করিয়া মাটির নীচে এই পরিমাণ স্থান খনন করতে হবে যাহাতে সচ্ছন্দে একটি লাশ তার মধ্যে শোয়াইয়া রাখা যায়। এই প্রকার কবর হইতে কোন জানোয়ার কর্তৃক লাশ আক্রান্ত হইবার ভয় থাকেনা। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই এই জাতীয় কবরই বেশী খনন করা হয়ে থাকে।

মাইয়্যাতকে খাঁটিয়ায করে কবরস্থানে নেওয়া
মৃতব্যাক্তিকে খাঁটিয়ায় করে কবরস্থানে লইয়া যাওয়া ফরযে ক্বিফায়া। কোন এক প্রশস্ত অথচ পবিত্র স্থানে বসিয়া জানাযার নামায আদায় করিয়া লাশ বহন করিয়া কবরস্থানে লইয়া যাইবে।
মৃত ব্যক্তির চার জন পরহেজগার নিকট আত্মীয় লাশের খাটের চারটি পায়া ধারণ করিয়া কাঁধে উঠাইয়া লইবে।
লাশের মাথা সম্মুখে রাখিয়া চলিতে থাকিবে। কবরস্থান বেশী দূরে হইলে মাঝে মাঝে খাট বহনকারীগণ স্থান পরিবর্ত করিয়া স্ব-স্ব কোণা হইতে বিপরীত কোণায় গিয়া খাঁট ধারণ করিবে।
লাশ কোন ক্ষুদ্র শিশুর হইলেও একজন লোকে ও ছোট খাঁটে বহন করিবে না।
কবরস্থানে পৌঁছাইয়া কবরের পশ্চিম পার্শে জানাযার খাট উত্তর মুখী করিয়া নামাইয়া রাখিবে।

লাশ কবরে শোয়াইবার দোয়া

بِسْمِ اللهِ وَ عَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ-

বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিললাতি রাসূলিল্লাহ।
অনুবাদঃ আল্লাহ পাক ও উনার রাসূলের দ্বীনের উপর সোপর্দ করিলাম।

লাশ কবরে শোয়াইবার নিয়মঃ-
মুর্দা কবরে শোয়াইয়া দিবার পর উহার উপরিভাগে বাঁশ অথবা অন্য কোন গাছ একখানার সাথে আর একখানা গায় গায় মিলাইয়া স্থাপন করিবে। বাঁশ বিছান হইলে উহার উপরে চাটাই, কলাপাতা, হুগলা অথবা অন্য কোন বস্তু বিছাইয়া দিবে। তারপর মাটি দ্বারা উহা ভাল করিয়া আটকাইয়া দিবে।
প্রথমে পাঠ করিবে এবং এক এক মুষ্টি মাটি কবরে দিবেঃ
১।مِنْهَاخَلَقْنَاكُمْ মিনহা খালাক্কনাকুম। অর্থাৎ ইহাতেই তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছি।
২।وَفِيْهَا نُعِيْدُ كُمْ ওয়া ফিহা নুয়ীদুকুম। অর্থাৎ(আবার) ইহাতেই তোমাদিগকে প্রত্যাবর্তন করাইব।
৩।وَمِنْهَا نُخْرِجِكُمْ تَارَةً اُخْرَى ওয়ামিনহা নুকরিজুকুম তারাতান উখরা। অর্থাৎ (পুনর্বার) ইহা হইতে তোমাদিগকে বহির্গত করিব।

এইভাবে তিন মুষ্টি করিয়া মাটি দিবার পর প্রথমে কবরের মাথার দিক হইতে (উত্তর দিক) কোদাল দ্বারা বেশী করিয়া মাটি টানিয়া দিতে থাকিবে। কবরের চারিদিকে নীচু রাখিয়া মধ্যস্থান এক বিঘতের একটু বেশী পরিমান উঁচু করিবে। ইহার চতুর্দিকে চারিটি কোণের সৃষ্টি না করিয়া সমস্ত কবরটিকে একটি মাছের পিঠের ন্যায় আকৃতি বানাইয়া দিবে। কবরের দুই দিকে লাশের মাথা ও পা বরাবর জোড়া করিয়া দুইখানি ডাল পুঁতিয়া রাখিবে।

No comments:

Post a Comment