ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার জীবনী মুবারক
নাম মুবারক:
জা’ফর; অর্থ: নদী, খাল, সাগর ইত্যাদি। মূল অর্থ হলো- জামিউন নিয়ামত তথা সমস্ত নিয়ামত উনার অধিকারী এবং জামিউন নিসবত অর্থাৎ সমস্ত নিসবতের অধিকারী। যেহেতু ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব
আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমু সালাম হিসেবে বিশেষ নিয়ামত ও নিসবত উনার অধিকারী, উম্মত হিসেবে মূল নিয়ামত ও নিসবত উনার অধিকারী এবং যাহিরী, বাতিনী সমস্ত নিয়ামত ও নিসবত উনার অধিকারী ছিলেন, তাই তিনি হচ্ছেন জামিউন নিয়ামত বা সমস্ত নিয়ামত রাজির অধিকারী এবং জামিউন নিসবত অর্থাৎ সমস্ত নিসবত উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
লক্বব মুবারক:
ছাদিক্ব হচ্ছে উনার একটি বিশেষ লক্বব মুবারক। তিনি হচ্ছেন সমস্ত ছাদিক্বীন উনাদের ইমাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা ছাদিক্বীন উনাদের সঙ্গী হয়ে যাও।” তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক।এছাড়া ও ফাদ্বিল, ত্বাহির উনার বিশেষ লক্বব মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। মূলত, তিনি সমস্ত উত্তম ছিফত মুবারক উনারই অধিকারী ছিলেন। তাই সেই দিক থেকে তিনি জামিউল আলক্বাব বা সমস্ত লক্বব মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
৯৬ হিজরীতে পবিত্র মদীনা শরীফ এ তিনি সন্মানিত বিলাদতী শান মুবারক গ্রহণ করেন।
আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ হচ্ছেন সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম আর উনার আওলাদ হচ্ছেন ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম আর উনার আওলাদ হচ্ছেন ইমামুল খামীস সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম; আর উনারই আওলাদ হচ্ছেন ইমামুস সাদিস সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম।
ইমামুস সাদিস তথা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বারো ইমাম আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে সাদিস বা ষষ্ঠ ইমাম। সুবহানাল্লাহ!
তিনি মাতার দিক আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার বংশধর উনাদের অন্তর্ভুক্ত।
উনার সম্মানিতা মাতা উনার নসবনামা মুবারক
হযরত উম্মে ফারওয়া বিনতে হযরত ক্বাসিম ইবনে হযরত মুহম্মদ ইবনে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিমুস সালাম।মায়ের দিক থেকে হযরত উম্মে ফারওয়া বিনতে হযরত আসমা বিনতে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিমুস সালাম।
জামিউন নিয়ামত:
ক্বাদেরীয়া ত্বরীক্বার সিলসিলা অনুযায়ী ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম জা’ফর ছদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক সাত নম্বরে। আর নকশবন্দিয়া মুজাদ্দিদীয়া তরীক্বার সিলসিলা অনুযায়ী তিনি পঞ্চম। তিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হিসেবে মূল নিয়ামতপ্রাপ্ত হয়েছিলেনই, তথাপি তিনি উম্মত হিসেবে মূল নিয়ামত হাছিল করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, একজন উম্মত হিসেবে যতটুকু নিয়ামত ধারণ করা সম্ভব আমি আমার সমস্ত নিয়ামতটুকুই ছিদ্দীক্বে আকবর আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া
হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার বক্ষ মুবারক-এ ঢেলে দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! আর সেই নিয়ামত টুকুই ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব
আলাইহিস সালাম তিনি উনার নানা হযরত ক্বাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাধ্যম দিয়ে হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হয়ে ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার থেকে হাছিল করেন। সুবহানাল্লাহ! সেই দিক থেকে তিনি হচ্ছেন জামিউন নিয়ামত ও নিসবত তথা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হিসেবে মূল নিয়ামত ও নিসবত এবং উম্মত হিসেবে যে বিশেষ নিয়ামত ও নিসবত রয়েছে, সেই দুই নিয়ামত ও নিসবতকে একত্রকারী। সুবহানাল্লাহ! এছাড়াও তিনি যাহিরী-বাতিনী সমস্ত নিয়ামত ও নিসবত উনার অধিকারী ছিলেন।তিনি ছিলেন সমস্ত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পবিত্র ইলম উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! উনার যামানায় এক ব্যক্তি দাবি করলো যে, সে সমস্ত কিছু জানে, সে সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী। তখন ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। তাকে উনার কাছে নিয়ে আসা হলো। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি নাকি সমস্ত কিছু জানো, বলে দাবি করো? সে বললো, হ্যাঁ। নাঊযুবিল্লাহ! তখন তিনি যমীন থেকে একটা দুর্বাঘাস তুলে তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যদি তা ই হয়ে থাকে, তাহলে তুমি বলো তো দেখি, পৃথিবীতে এই দুর্বাঘাসের সংখ্যা জোড় না বেজোড়? সে বললো, আমি জানি না।তখন ইমামুস সাদিস ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমার তো জানা রয়েছে, পৃথিবীতে যতো দুর্বাঘাস রয়েছে, তার সংখ্যা জোড়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।” তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, “আমি সমস্ত কিছুই জোড় সংখ্যক সৃষ্টি করেছি।” তখন উক্ত ব্যক্তি লা-জাওয়াব হয়ে গেলো। ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব
আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, যে ব্যক্তি দুটি ভালো কাজের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে তার মধ্যে সর্বোত্তম ভালো কাজটি করে এবং দুইটি মন্দ কাজের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে তার মধ্যে যেটি অধিক মন্দ কাজ সেটি আগে ছেড়ে দেয়। সেই ব্যক্তিই হলো প্রকৃত বুদ্ধিমান।সেই যামানার প্রায় সমস্ত লোকই উনার মুরীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং
সুলত্বানুল আরেফীন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার খলীফা ছিলেন। এছাড়া হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম দাঊদ তাই রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা উনারমুরীদ ছিলেন। অন্যদিকে রসায়ন বিজ্ঞানের জনক হযরত জা’বির ইবনে হাইয়্যান উনার মুরীদের অন্তর্ভূক্ত |
তিনি বেমেছাল ইলম ও মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী ছিলেন। যেটা সমস্ত মাখলুকাতের চিন্তা, কল্পনা ও ইলমের বাইরে।
১৪৮ হিজরীর পবিত্র ১৪ই রজবুল হারাম শরীফ ইছনাইনিল আযীম তথা সোমবার শরীফ বাদ ইশা মদীনা শরীফ-এ তিনি সন্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
উনাকে মুহব্বত করা এবং উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান সম্পর্কে জানা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
No comments:
Post a Comment