আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ্। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুন। এখানে রয়েছে ইসলামী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জানা অত্যাবশ্যক।***
যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা সহ অনলাইনে ফ্রি ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সুযোগ ***
ডাঃ আহমদ ইমতিয়াজ ডি.এইচ.এম.এস, বি.এইচ.এম.সি (ঢাকা) মোবাইল - 01914440430 ই-মেইলঃ drahmadimtiaj@gmail.com ***

সুন্নতি পোষাক মুবারক ও সুন্নতি সামগ্রী

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সুন্নতি সামগ্রীর অনুকরণে কিছু সুন্নতি সামগ্রীর ছবি (সংক্ষিপ্ত বর্ণনাসহ)

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আমার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব)

আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলেদিন, যদি তারা আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত লাভ করতে চায় তাহলে তারা যেনো আপনার অনুসরণ করে, তাহলে আমি আল্লাহ পাক স্বয়ং তাদেরকে মুহব্বত করবো, তাদেরকে ক্ষমা করবো, তাদের প্রতি দয়ালু হবো; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সুরা আল ইমরান ৩১)

সুন্নতের ফযীলত সম্পর্কে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহব্বত করলো, সে মূলতঃ আমাকেই মুহব্বত করলো। আর যে আমাকে মুহব্বত করবে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।” (তিরমিযী শরীফ)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আখিরী যামানায় যে ব্যক্তি একটি সুন্নত আঁকড়ে ধরে থাকবে তথা আমল করবে তাকে এর বিনিময়ে একশত শহীদ এর ছওয়াব প্রদান করা হবে।



সুন্নতী পোশাক-মুবারক
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলাইহি যেসকল পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করেছেন এবং পরিধান করতে বলেছেন তাই সুন্নতী পোশাক সুন্নতী পোশাক-পরিচ্ছদ সমূহ নিম্নরূপ:
 দায়িমী ভাবে (চার টুকরা বিশিষ্ট সাদা সূতি কাপড়ের টুপি যা মাথার সাথে লেগে থাকে) টুপি পরিধান করা কেবলমাত্র গোসল কিংবা ঘুমানোর সময় ব্যাতীত
 দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে মাথায় ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধান করা, পাগড়ীর রং কালো, সাদা কিংবা সবুজ
 পাগড়ীর উপর সাদা রুমাল পরিধান করা
 লম্বায় নিছফুস সাক (হাঁটু  পায়ে টাখনুর মাঝামাঝি) পরিমান, কোনাবন্ধ, গুটলীওয়ালা ক্বমীছ বা কোর্তা      পরিধান করা
 ইযার বা সেলাই বিহীন ফাঁড়া লুঙ্গি পরিধান করা
 টুপির নিচে তেল থেকে টুপিকে রক্ষার জন্য ক্বিনায়া বা তৈলপট্টি ব্যবহার করা
 খয়েরী রং এর ক্রস ফিতাবিশিষ্ট চামড়ার নালাঈন বা স্যাণ্ডেল ব্যবহার করা
পক্ষান্তরে, পুরুষের জন্য লাল, হলুদ, গোলাপী, জাফরানী রঙের পোশাক, রেশমি পোশাক এবং স্বর্ণের অলঙ্কার ব্যবহার করা হারাম কিন্তু মহিলাদের জন্য জায়িয মহিলাদের পোশাক পুরুষরা এবং পুরুষদের পোশাক মহিলারা পরিধান করাও হারাম। এছাড়াও কাফির মুশরিক   ইহুদীনাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ  যাবতীয় বিধর্মীদের সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক যেমন শার্ট, প্যান্ট, টাই, কোর্ট ধুতী, পৈতা   ইত্যাদি পরিধান করা কাট্টা হারাম

(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ, তাফসীরুত ত্বাবারী, তাফসীরুল মাযহারী, ফতওয়ায়ে কাযীখান, আলমগীরী, শামী, বাহরুর রায়িক ইত্যাদি)


সুন্নতি পাগড়ি মুবারক:

পাগড়ীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা পাগড়ী মোবারক পরিধান করতেন। তিনি ঘরেও পাগড়ী মোবারক পরিধান করতেন। মক্কা শরীফ বিজয়ের সময়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মোবারক-এ কাল পাগড়ী মোবারক ছিল। উনার পাগড়ী মুবারক-এর নিচে এবং পাগড়ী মুবারক ব্যতীত শুধু টুপিও ব্যবহার করেছেন।

ফজিলত: পাগড়ী সম্বন্ধে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “মানুষ যখন পাগড়ী পরা ছেড়ে দিবে, তখন তাদের থেকে দ্বীন চলে যাবে।”
অন্যত্র ইরশাদ ফরমান, “পাগড়ী বাঁধ, যা ইসলামের নিদর্শন, মুসলমান ও কাফেরদের মধ্যে পার্থক্যকারী।”
পাগড়ী পরে নামাজ পড়লে ৭০ গুণ বেশী সওয়াব লাভ করা যায়। (শামায়েলে তিরমিযী, সিহাহ্ সিত্তাহ্, মিরকাত, মাদারেজুন নুবুওওয়ত, সিরাতুন নবী, জামউল ওসায়েল ইত্যাদি।

পরিমাপ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় যে পাগড়ী মোবারক ব্যবহার করতেন তা ছিল সাত হাত লম্বা। ঘরের মধ্যে ব্যবহার করতেন তিন হাত এবং ঈদ, জুমুয়া ও দূতদের জন্যে ব্যবহার করতেন ১২ হাত লম্বা পাগড়ী মোবারক। (আদাবুন নবী)
রং: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কালো, সবুজ, সাদা, ধূসর ইত্যাদি বিভিন্ন রংয়ের পাগড়ী মোবারক পরিধান করতেন। তবে কালো পাগড়ী মোবারকই বেশী ব্যবহার করতেন। (শামায়েলে তিরমিযী, জামউল ওসায়েল ও সীরত গ্রন্থসমূহ)
সিমলা: সিমলা ১ বিঘত থেকে ১ হাতের মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং তা দু’কাঁধের মধ্যখানে ঝুলিয়ে রাখা উত্তম। তবে কখনো বা সম্মুখ ভাগের ডান দিকে ঝুলিয়ে রাখাও দুরস্ত আছে।
(শামায়েলে তিরমিযী, জামউল ওসায়েল)




সুন্নতি টুপি মুবারক :




টুপির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:মহান আল্লাহ্ পাক, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে জান্নাত হতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে টুপি মুবারক পরিধান করার জন্য হাদীয়া করেছিলেন, তা ছিল চার টুকরা বিশিষ্ট এবং গোল। এর উপরিভাগে এক টুকরা এবং চারদিকে তিন টুকরা দ্বারা বেষ্টিত, যা সাদা, সূতী এবং মাথার সাথে লেগে থাকে। তা পরিধান করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। (দলীল: তিরমিযী, মেশকাত, মেরকাত, ইসরারুল আওলিয়া, আনিসুল আরওয়াহ্, দলিলুল আরেফীন)


টিকা: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো কিস্তি, পাঁচ কুল্লি, চোক্কা বা উঁচু টুপি পরিধান করেননি।
এমনকি এর পক্ষে কেউ কোন প্রমাণও পেশ করার যোগ্যতা রাখে না এবং এসব টুপি পরিধান করা মাকরূহ্।
(আলমগীরী, এতাবীয়া)

গুটলি বিশিষ্ট, কোনা বন্ধ সুন্নতি কোর্তা মুবারক:
পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অনুসারেসুন্নতী কোর্তার বর্ননা

‘ক্বমীছ’ শব্দের তাহক্বীক্বী অর্থ ও ‘ক্বমীছ’-এ সঠিক পরিচয়
قميص ক্বমীছ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হলো- কোর্তা, জামা, ক্বমীছ ইত্যাদি। আর ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় ক্বমীছ বা কোর্তা হলো, যার গেরেবান আছে যা বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী লাগানো হয় যা নিছফুস্ সাক্ব। অর্থাৎ হাটু ও পায়ের গিরার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত বিলম্বিত। গোল যা কোনা ফাঁড়া নয়, যার আস্তিন আছে, যা অতি সহজেই মানুষের সতর ও ইজ্জত আবরু ঢাকে।

মুহাদ্দিছুশ্ শাহীর, ফক্বীহুন্ নাবীল, আল্লামা আলী বিন সুলতান মুহম্মদ ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ” কিতাবে, হযরত আল উস্তাযুল আল্লাম, ফাযীলাতুশ্ শাইখ, মাওলানা মুহম্মদ ইদ্রীস কান্দুলুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ আলা মিশকাতিল মাছাবীহ’-এর ‘লিবাস’ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,

القميص اسم لما يلبس من المخيط الذى له كمان وجيب، وقيل وجه احبية القميص اليه صلى الله عليه وسلم انه استر للاعضاء من الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن او لابسه اكثر تواضعا.
অর্থ: “ক্বমীছ বা কোর্তা হলোঃ যা সিলাই করে পরিধান করা হয়, যার দু’টি আস্তিন ও একটি গেরেবান আছে। বলা হয়, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ক্বমীছ সর্বাধিক পছন্দনীয় কারণ হলো, তা লুঙ্গি ও চাদর অপেক্ষা শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আবৃতকারী। তাছাড়া তা অল্প খরচে তৈরি হয়। শরীরের পক্ষে হালকা ও আরামদায়ক এবং এর পরিধানকারীর মধ্যে অনেক বিনয় নম্রতার প্রকাশ ঘটে।”

হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নেছ্ফুসাক্ব বা কোর্তা মোবারক পরিধান করতেন, যা হাঁটু ও গিরার মাঝামাঝি পর্যন্ত লম্বা ছিল এবং আস্তিন কব্জি পর্যন্ত বিলম্বিত। তা গুটলি যুক্ত, কোনা বন্ধ (গোল)। তিনি সাদা এবং (মিশরীয়) সূতী বেশী পছন্দ করতেন। তবে অন্যান্য রংয়ের কোর্তাও পরিধান করতেন।(বোখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ ও নাসাঈ শরীফ)

টিকা – হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে কখনো কোনা ফাঁড়া কোর্তা বা পাঞ্জাবী পরিধান করেননি।
যা বর্তমান কালের অনেক আলেম নামধারী লোকেরা পরে থাকে। মূলতঃ এটা দলীল-প্রমাণবিহীন, স্রেফ মনগড়া আমল মাত্র। এমনকি তিনি কখনো গেঞ্জিও পরিধান করেননি।



কালো রং-এর সুন্নতি জুব্বা মুবারক:





হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদ, জুমুয়া এবং বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে জুব্বা মোবারক পরিধান করতেন। যার জেব এবং আস্তিনের উপর এমন কি নিম্নাংশেও সুক্ষ্ম রেশমের কারুকার্য ছিল।
(তিরমিযী, আবূদাউদ শরীফ ও সীরত গ্রন্থসমূহ)


টিকা: আল্লাহ্র হাবীব, হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় মুজিব কোর্ট, ওয়েষ্ট কোর্ট, শেরওয়ানী ইত্যাদির প্রচলন ছিলনা, এগুলো স্পষ্টতই বিদ্য়াতের অন্তর্ভূক্ত।




সুন্নতি চিরুনী মুবারক:

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া উনার ব্যবহৃত চিরুনী মুবারক ছিল হাতির দাঁত বা হাড় দ্বারা তৈরী।







মেশক মিশ্রিত খাছ সুন্নতি ছমিদ সুরমা:







সুন্নতি বালিশ মুবারক:

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বালিশ মোবারক ছিল চামড়ার। ভিতরে তুলার পরিবর্তে খেজুরের পাতা ও ছোবড়া ভর্তি ছিল। (সীরত গ্রন্থসমূহ)







কাঠের তৈরী সুন্নতি প্লেট, বাটি, পেয়ালা, নিমকদানী ও 
চামড়ার তৈরী দস্তরখানা:

পান পাত্র মোবারক: হযরত সাবেত রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন- হযরত আনাস ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি লোহার পাত লাগানো কাঠের মোটা একটি পাত্র দেখিয়ে বললেন, ওহে সাবেত, এটা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পান পাত্র মোবারক। (তিরমিযী, শামায়েলে তিরমিযী, জামউল ওসায়েল)


দস্তরখান মোবারক: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দস্তরখান মুবারক ছিল চামড়ার এবং তা হাল্কা লাল (খয়েরী) রংয়ের ছিল। (শামায়েলে তিরমিযী, আনিসুল আরওয়াহ্, জামউল ওসায়েল)
পেয়ালা মোবারক: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি এ (উপরে বর্ণিত) পেয়ালা (পান পাত্র) দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পান করার যাবতীয় বস্তু যেমন- পানি, নাবীয, মধু এবং দুধ পান করিয়েছি। খাওয়ার বাসন (পেয়ালা) বলতে ছিল- লোহার পাত যুক্ত কাঠের একটি পেয়ালা। (শামায়েলে তিরমিযী,জামউল ওসায়েল)


জয়তুন ও পিলু গাছের ডালের তৈরি খাছ সুন্নতি মিছওয়াক:




























শাল, সেগুন, শীল কড়ই কাঠে তৈরী সুন্নতি চকি মুবারক:
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার চকি মুবারক ছিল চার পায়া বিশিষ্ট এবং কাঠের তৈরী। এছাড়াও চারপায়া ছিল দড়ির তৈরী, যার ফলে কখনো কখনো দেহ মোবারকে দাগ পড়ে যেত।
পরিমাপ: একাকী ব্যবহারের জন্যে সাড়ে চার হাত লম্বা ও আড়াই হাত চওড়া এবং আরেকটি সাড়ে চার হাত লম্বা এবং প্রায় সাড়ে তিন হাত চওড়া ছিল। (সীরাতুন নবী, এবং আরো অন্যান্য সীরত গ্রন্থসমূহ)


ঝাউ কাঠের তৈরি সুন্নতি মিম্বর শরীফ ও খেজুর গাছের তৈরি লাঠি মুবারক





হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাঠের তৈরি মিম্বর শরীফ-এ বসে নছিহত শরীফ পেশ করতেন এবং জুমুয়া বারে খুতবা দেয়ার সময় খেজুর গাছের কাঠ দ্বারা নির্মিত লাঠি মুবারক ব্যবহার করতেন। যা স্বীয় কাঁধ মুবারক পর্যন্ত বিলম্বিত ছিল। (আবূ দাউদ, গায়াতুল আওতার, মুহীতে সারাখ্সী এবং সীরত গ্রন্থসমূহ)


চামড়ার খয়েরি রঙের সুন্নিত মোজা










চামড়ার খয়েরি রঙের ক্রস ফিতা বিশিষ্ট নালাইন শরীফ (সেন্ডেল):
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’ফিতা বিশিষ্ট চামড়ার জুতা (স্যান্ডেল বা নালাইন শরীফ) পরিধান করতেন। (শামায়েলে তিরমিযী, জামউল ওসায়েল, আদাবুন নবী) অর্থাৎ উনার জুতা (স্যান্ডেল) মোবারক ছিল দু’ফিতা যুক্ত (ক্রস বেল্ট), যা সম্পূর্ণ (তলা’ও) চামড়ার দ্বারা নির্মিত এবং তা লাল-খয়েরী রংয়ের ছিল।

পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অনুসারেহীরাহ বা চাদরের বর্ননা


নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইয়েমেনের বুটিদার চাদর মুবারক খুবই পছন্দ করতেন। আরবী ভাষায় যাকে “হীরাহ” বলা হয়। [পবিত্র বুখারী শরীফ ও সীরত গ্রন্থসমূহ]
পরিমাপ

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চার হাত দৈর্ঘ্য, আড়াই হাত প্রস্থ, কখনো বা ছয় হাত দৈর্ঘ্য এবং সাড়ে তিন হাত প্রস্থ চাদর মুবারক পরিধান করতেন। (শামায়েলে তিরমিযী, জামউল ওসায়েল)

পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অনুসারেইজার বা লুঙ্গির বর্ননা

ইজার বা লুঙ্গির:


নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা সিলাইবিহীন (ফাঁড়া) লুঙ্গি মুবারক পরিধান করতেন। এমনকি তা পরিধান করে তিনি বাহনে সওয়ার হতেন এবং যুদ্ধের ময়দানেও যেতেন। (শামায়েলে তিরমিযী, মাদারেজুন নুবুওওয়ত, যাদুল মা’য়াদ, জামউল ওসায়েল ও খাসায়েলে নববী)

পরিমাপ:
লুঙ্গি দৈর্ঘ্যে সাড়ে চার হাত এবং প্রস্থে আড়াই হাত ছিল।

টিকা : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জীবনে কখনো সালোয়ার বা পাজামা পরিধান করেননি। তবে কোন কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সালোয়ার পরিধান করতেন বলে বর্ণনা রয়েছে।

পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অনুসারে পাগড়ীর উপর রুমাল ব্যবহার
পাগড়ীর উপর রুমাল পরিধান করা ও পাগড়ী ছাড়া রুমাল পরিধান করা উভয়টাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই মাথা মুবারকে পাগড়ীর উপরে রুমাল পরিধান করতেন এবং পাগড়ী ছাড়াও রুমাল পরিধান করতেন।


যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
قالت عائشة رضى الله تعالى عنها فبينا نحن يوما جلوس فى بيتنا فى نحر الظهيرة قال قائل لابى بكر رضى الله تعالى عنه هذا رسول الله صلى الله عليه وسلم مقبلا متقنعا.

অর্থ: ‘উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, একদা দ্বিপ্রহরের সময় আমরা আমাদের গৃহে বসা ছিলাম। তখন একজন আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়অ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে, “ওই যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (পাগড়ীর উপর) রুমাল পরিধান করে মাথা মুবারক আবৃত করে আগমন করছেন।” [বুখারী শরীফ ২/৮৬৪, আহমদ, আবূ দাউদ শরীফ ৫৬৪, ফতহুল বারী ১০/২২৪, উমদাতুল কারী ২১/৩০৯, বযলুল মাযহুদ ৬/৫৩]


উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে متقنعا শব্দটি تقنع শব্দ থেকে এসেছে। আর تقنع শব্দের অর্থ হলো,
وضع شيى الزائد على الرأس فوق العمامة.
অর্থ: تقنع হলো মাথায় পাগড়ীর উপরে অতিরিক্ত একটি কাপড় (রুমাল) পরিধান করা।” [বুখারী শরীফ ২/৮৬৪, ফতহুল বারী ১০/২২৪, উমদাতুল কারী ২১/৩০৯]


تقنع শব্দের ব্যাখ্যায় অনত্রে বলা হয়েছে,
تغطية الرأس واكثر الوجه برداء اوغيره.
অর্থ: “মাথা এবং চেহারার অধিকাংশ কোন চাদর অথবা অন্য কোন কাপড় (রুমাল) দিয়ে ঢেকে রাখা।” [বুখারী শরীফ ২/৮৬৪, ফতহুল বারী ১০/২২৪, উমদাতুল কারী ২১/৩০৮]


অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
عائشة رضى الله تعالى عنها قالت مااتى رسول الله صلى الله عليه وسلم احدا من نسائه الا متقنعا يرخى الثوب على راسه حياء.
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখনই উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা কারো নিকট আসতেন তখন (রুমাল দিয়ে) মাথা মুবারক ঢেকে আসতেন। তিনি হায়ার কারণে স্বীয় মাথা মুবারকের উপর কাপড় (রুমাল) পরিধান করতেন।” [মসনদে আয়েশা, হাশীয়াদে আবূ দাউদ/২০৯]


এছাড়া অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের রুমাল ব্যবহারের কথাও বর্ণনা করা হয়েছে।


উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনায় এটাই প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ীর উপরে রুমাল পরিধান করা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভূক্ত।


নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের গুরুত্ব ও ফাযায়িল-ফযীলত উপলব্ধি করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের পায়রবী করার তাওফিক দান করুন। আমীন।




No comments:

Post a Comment