আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ্। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুন। এখানে রয়েছে ইসলামী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জানা অত্যাবশ্যক।***
যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা সহ অনলাইনে ফ্রি ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সুযোগ ***
ডাঃ আহমদ ইমতিয়াজ ডি.এইচ.এম.এস, বি.এইচ.এম.সি (ঢাকা) মোবাইল - 01914440430 ই-মেইলঃ drahmadimtiaj@gmail.com ***

হযরত উসমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম

আমীরুল মুমিনীন, হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহে উমরী মুবারক
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আখাচ্ছুল খাছ নৈকট্য-নিসবত প্রাপ্ত ব্যক্তিত্বগণ উনাদের মধ্যে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। নি¤œ উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো:
পবিত্রতম বিলাদত শরীফ
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বিলাদত শরীফ উনার সময়কাল নিয়ে ঐতিহাসিকগণের মাঝে বেশ ইখতিলাফ রয়েছে। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ গ্রহণযোগ্য মতে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক গ্রহণের ছয় বৎসর পর বা আমুল ফিলের বৎসর পর অর্থাৎ ৫৭৬ ঈসায়ী সনে তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন।
 নসব মুবারক
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পিতা-মাতা উনাদের দুজনের দিক হতেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত। উনার পিতা আফফান ইবনে আবুল আস ইবনে উমাইয়া ইবনে আবদু শামস ইবনে আবদে মান্নাফ আলাইহিমুস সালাম তিনি। অনুযায়ী উনার নসব মুবারক পঞ্চম স্তরে এসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছে। উনার মাতা উরওরা বিনতে কুরাইয ইবনে রবীয়া ইবনে হাবীব ইবনে আবদে শামস ইবনে আবদে মান্নাফ। অনুযায়ী উনার মাতা উনার নসব মুবারকও পঞ্চম স্তরে মুবারক নসবে মিলিত হয়েছে। তাছাড়া উনার নানী হযরত উম্মে হাকীম আল বাইদা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার যমজ বোন। সে অনুযায়ী তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা ফুফু।
 নাম মুবারক
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মূল নাম মুবারক হলো হযরত উসমান আলাইহিস সালাম। বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ উনার মাঝে বিলাদত শরীফ গ্রহণকারী উনার আওলাদ হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক অনুযায়ী আবু আব্দিল্লাহ কুনিয়াতে তিনি সম্বোদিত হতেন। তাছাড়া আবু আমর, আবু লাইলা কুনিয়াত মুবারকও ব্যবহৃত হয়। সর্বোপরি তিনিযুন নূরাইনগণীলক্বব মুবারকে সর্বাধিক মশহুর।
 শিশু কিশোর বয়স মুবারক
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মাদারজাতগতভাবেই অত্যধিক শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। বাল্য বয়সের অন্যান্য ছেলেদের ন্যায় তিনি হৈ হুল্লোড়ে লিপ্ত না হয়ে স্বকীয় ভাবগাম্ভীর্য মুবারক জাহির করতেন। কৈশোর বয়স মুবারকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আক্ষরিক জ্ঞান রপ্ত করেন। সঙ্গতকারণেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অত্যধিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। আর এটাই তো স্বাভাবিক। কারণ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ইলমের শহরের দেওয়াল বা বেষ্টনী হিসেবে মুবারক ঘোষণা দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, আইয়্যামে জাহিলিয়াতের সেই কঠিন সময়ে যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব পূত-পবিত্র চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন, উনাদের মধ্যে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। তিনি কোন দিন শরাব পান করেননি। আর কৈশোর থেকেই তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত হন।
 যুবক বয়স মুবারক
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্ভ্রান্ত আরবীগণ উনাদের রীতি অনুযায়ী যৌবনে পদার্পণ করে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। উনার সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, ন্যায়পরায়ণতা প্রভৃতির দরুন উনার ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। জাহিলিয়াতের সেই সময়ে তিনি বড় ব্যবসায়ীদের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সঙ্গতকারণেই উনার ব্যাপক দানশীলতার দরুন উনাকে সকলেইগণীলক্বব মুবারকে আখ্যায়িত করেন।
 আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক মধ্যস্থতায় যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছেন, উনাদের মধ্যে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। দারুল আরকামে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচারের পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারী পুরুষগণ উনাদের মধ্যে তিনি চতুর্থতম।
মুবারক ত্যাগ তিতিক্ষা
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জন্য যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন, উনাদের মধ্যে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণ করলে উনার চাচা আল হাকাম ইবনে আবুল আস উনাকে অসহনীয় নির্যাতন করে। হাত-পা মুবারক বেঁধে রাখে। নির্মমভাবে প্রহার করে। অনাহারে থাকতে বাধ্য করেন। এমনিভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার হতে বিমুখ করতে শত অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু শত নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি তাদের যাবতীয় অপচেষ্টা ধূলিসাৎ করে দিয়ে পবিত্র অহদানিয়াত বারবার ঘোষণা করেন।
 প্রথম নূর মুবারক গ্রহণ
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বিতীয়া আওলাদ হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনাকে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি শাদী মুবারক করেন, উনার খিদমত মুবারক করেন। তবে শাদী মুবারক পবিত্র দ্বীন ইসলাম জাহির হওয়ার পরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের পঞ্চম বছরের পূর্বেই শাদী মুবারক হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত।
 মুবারক প্রথম হিজরত
মুসলমান উনাদের প্রতি কুরাঈশদের নির্যাতন যখন সমস্ত হদ অতিক্রম করেছে, তখন আনুষ্ঠানিকভাবে নবুওওয়াত ঘোষণার পঞ্চম বর্ষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইযাজতক্রমে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনাকে সাথে নিয়ে ১৬ জনের কাফেলাসহ আবিসিনিয়ায় মুবারক হিজরত করেন ঘটে।
আবিসিনিয়ায় হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক হিজরতের ফলাফল সুদূরপ্রসারী। উনাদের হিজরতের দরুন আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী উনাদের মুবারক ছোহবত লাভে ধন্য হয়। তার সুবাদেই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। উনাদের মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটে।
আবিসিনিয়ার ভূমিতেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দৌহিত্র হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম পবিত্রতম বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। যিনি চতুর্থ হিজরীতে পবিত্রতম বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার পরে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আহলিয়াসহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সর্বপ্রথম হিজরত মুবারককারী।
মুবারক দ্বিতীয় হিজরত
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হিজরতের কিছুদিন পূর্বে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আবিসিনিয়া হতে সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার মাঝে ফিরে আসেন। অতঃপর মুবারক নির্দেশক্রমে তিনি সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মাঝে মুবারক হিজরত করেন। কারণে উনাকে দুবার হিজরতকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মাঝে তিনি হযরত আউস ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে মুবারক অবস্থান গ্রহণ করেন।
বদর জিহাদ
দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ই রমাদান শরীফ- বদর জিহাদ সংঘটিত হয়। ওই জিহাদে রওনা দেওয়ার পূর্বে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে মুবারক খিদমতে সম্মানিত মদীনা শরীফ রেখে যান। ১৮ই রমাদ্বান শরীফ- হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। সঙ্গতকারণেই হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে আসহাবে বদর উনাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি গণীমত প্রাপ্ত হন।
 বলাবাহুল্য যে, হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম এবং হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের পারস্পরিক সম্পর্ক মুবারক ছিল বেমেছাল। যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টরূপে ইরশাদ মুবারক হয়েছে।
হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গোশত ভর্তি একখানা পাত্র দিয়ে আমাকে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হুজরা শরীফ- পাঠালেন। (পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পূর্বে হওয়ায়) আমি উনার হুজরা শরীফ- প্রবেশ করলাম। সেখানে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনাকে বসা দেখলাম। উনাদের উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক দেখে আমি অভিভূত হয়ে একবার হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার দিকে, একবার হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার দিকে তাকাতে লাগলাম। অতঃপর, আমি ফিরে আসলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনি কি উনাদের নিকট গিয়েছিলেন? আমি বললাম, জ্বি। তিনি পুনরায় বললেন, আপনি কি উনাদের চেয়েও সুন্দর পরিবার আর দেখেছেন? আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনাদের চেয়ে সুন্দর পরিবার আমি দ্বিতীয়টি আর দেখিনি। (ইবনে আসাকির)
দ্বিতীয় নূর মুবারক গ্রহণ
হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম বিছাল শরীফ গ্রহণের পর তৃতীয় হিজরীর শুরুতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার তৃতীয়া কন্যা হযরত উম্মু কুলছুম আলাইহাস সালাম উনাকে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট শাদী মুবারক দেন।
উম্মুল মুমিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত উম্মু কুলছুম আলাইহাস সালাম উনাকে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট শাদী মুবারক প্রদানকালে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মু কুলছুম আলাইহাস সালাম উনাকে সম্বোধন করে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই আপনার স্বামী হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং আপনার পিতা উনার সাথে অধিক তাশবীহ মুবারক রাখেন।” (সুবহানাল্লাহ) (ইবনে আদী)
নবম হিজরীতে হযরত উম্মু কুলছুম আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। তিনি পবিত্রতম বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যদি আমার চল্লিশ জন সম্মানিতা কন্যা আলাইহিন্নাস সালাম থাকতেন, তাহলে আমি পর্যায়ক্রমে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট নিকাহ মুবারক দিতাম।যা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন। (তিবরানী শরীফ)
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে দুবার জান্নাত ক্রয় করেন। প্রথমত, রুমী কূপ ক্রয় করে। দ্বিতীয়ত, উসরার যুদ্ধের সময় সাহায্য করে। (মুসনাদে হাকীম)
বলাবাহুল্য যে, সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মাঝে পানির উৎস ছিল তৎকালে রুমী কূপ। এক ইহুদী ছিল তার মালিক। সে বিনামূল্যে কাউকে পানি দিত না। ফলশ্রুতিতে সম্মানিত মদীনা শরীফবাসী পানি সঙ্কটে পড়েন। আর এই জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি রুমী কূপ ক্রয় করবেন, উনার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। তখন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ১৮ হাজার দিরহাম দিয়ে সেই কূপ ক্রয় করে মুবারক খিদমতে ওয়াকফ করেন। আর এভাবেই তিনি দুনিয়া থাকতেই জান্নাত উনার মালিক হয়ে যান। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
 নায়িবে রসূল
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাতুর রিকা গাযওয়ায়ে গাতফানের সময় হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে আপন স্থলাভিষিক্ত করে তথা নায়িবে রসূল ঘোষণা করে সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার দায়িত্ব প্রদান করেন। (তারীখুল খুলাফা)
 হাবীবী দূত
ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে প্রতিনিধি হিসেবে কুরাঈশদের নিকট প্রেরণ করেন। আর উনাকে আবদ্ধ করা হলে উনার রক্ত মুবারক উনার প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে বাইয়াতে রিদওয়ান সংঘটিত হয়। যা পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
 জিহাদে অংশ গ্রহণ
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বদর, যাতুর রিকা, গাযওয়ায়ে গাতফান ব্যতীত সকল জিহাদেরই তিনি শরীক ছিলেন। আর প্রতিটি জিহাদেই তিনি সর্বাধিক অর্থ ব্যয় করেন। সর্বাপেক্ষা অধিক ব্যয়ের দরুন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, “আজকের পর হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে কোন কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না। কোন কিছুই উনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
আখেরী চাহার শোম্বার খুশি
মুসলিম উম্মাহর নিকটআখেরী চাহার শোম্বাঅত্যধিক পরিচিত উপলক্ষ। বিদায় হজ্জ হতে সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মাঝে এসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পার ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক জাহির করেন। এভাবে কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ছফর মাসের শেষ বুধবার তিনি ছিহাহি শান মুবারক জাহির করেন। এতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুম উনারা সীমাহীন খুশি প্রকাশ করেন। উনারা বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে হাদিয়াও দান করেন। আর সেই সময়ে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি দশ হাজার দিরহাম মুবারক হাদিয়া করে খুশি প্রকাশের বেমেছাল নজির মুবারক স্থাপন করেন।
প্রথম খলীফাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনাদের সময়কালে
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি এমনি একজন সুমহান ব্যক্তিত্ব, যাঁর মাঝে যাবতীয় সুমহান গুণাবলীর সম্মিলন ঘটেছে। সঙ্গতকারণেই হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং হযরত ফারুকে যম আলাইহিস সালাম উনাদের মুবারক খিলাফতকালে তিনি মজলিসে শূরার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। উনার প্রখর মেধা, হিকমতপূর্ণ পরামর্শ, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা সকলকে অভিভূত করেছে। যার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ হযরত ফারূক্বে যম আলাইহিস সালাম উনার মনোনীত ছয়জনের মধ্যে অন্যতম।
এছাড়া পুরো হায়াত মুবারকে ইসলাম উনার প্রচার প্রসারের জন্য প্রতিটি জিহাদে অভিযানে তিনি সীমাহীন অর্থ ব্যয় করতেন। এমনকি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দুর্ভিক্ষ দূরীভূত করতে হাজার উটের বিশাল কাফেলা হাদিয়া করতে দ্বিধাবোধ করেননি। ইতিহাসে যা সোনালী অক্ষরে প্রসিদ্ধ রয়েছে।
বাইয়াতে আম গ্রহণ
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খলীফা হিসেবে সমাসীন হওয়ার বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। তবে সংক্ষেপে মূলকথা হলো- হযরত ফারূক্বে যম আলাইহিস সালাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজমায়ে আজিমত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে চব্বিশ হিজরীর পহেলা মুহররম হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে খলীফা হিসেবে খিলাফতের মহান দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
 ইসলামী পতাকা প্রসারণ
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে পবিত্র ইসলাম উনার নিশানা আরব সাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। অপর দিকে আফ্রিকার সীমানা সাইপ্রাসে ইসলাম উনার আলো ছড়ায়। এছাড়া হযরত ফারূক্বে যম আলাইহিস সালাম উনার অসমাপ্ত অভিযানগুলো তিনি সম্পূর্ণ করেন। উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় আমুরিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, ফিবরাস, জুরজান, খোরাসান, হিরাত, কাবুল, সিজিস্তান, নিশাপুর, হিসনুর রুয়াত, ত্রিপলী এবং অধিকাংশ আফ্রিকাসহ এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল ইসলামী খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
 নৌবাহিনীর সংঘটক
ঐতিহাসিক সত্য অনুযায়ী হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ২৭ হিজরীতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কাইস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে ইসলাম উনার ইতিহাসে সর্বপ্রথম নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। যার সুসংবাদ পূর্বেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রদান করেছিলেন।
 ফিতানের দ্বার উন্মুক্ত হওয়া
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালকে দুভাগে বিভক্ত করেন। উনাদের মতে প্রথম ছয় বছর বিজয়ের বছর। দ্বিতীয় বছর বিদ্রোহের বছর।
উল্লেখ্য যে, মুবারক খিলাফতের সপ্তম বছরে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক হতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যবহৃত একখানা সীল মোহর মুবারক যুক্ত আংটি আরীস নামক কূপে পড়ে যায়। অনেক তল্লাশী করেও তখন তা পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার পর হতে বিদ্রোহ শুরু হয়। যা মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ১৬তম সংখ্যার আলোকচিত্রে সচিত্র বর্ণনা করা হয়েছে।
 জামিউল কুরআন
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে পবিত্র ইসলাম উনার ভূখ- ব্যাপকতা লাভ করে। তাই নও মুসলিম উনাদের সংখ্যাও বেড়ে যায়। এমতাবস্থায় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একক নুসখার তীব্র প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কেননা ওই সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একক নুসখা ছিলো না। বরং তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলো। এহেন পরিস্থিতিতে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাধ্যমে পবিত্র কুরআন শরীফ সংকলন করে সর্বত্র ছড়িয়ে দেন। আর জন্যই উনাকেজামিউল কুরআনলক্বব মুবারকে ভূষিত করা হয়; যা উনার বেনজির অবদান মুবারক।
 মুবারক শাহাদাত
৩৫ হিজরীর পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস। অধিকাংশ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র হজ্জ আদায়ের জন্য পবিত্র মক্কা শরীফ গমন করেছেন। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে জনসমাগম কিছুটা কম। মুনাফিক গোষ্ঠী ইবনে সাবার নেতৃত্বে সেই সময়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মোক্ষম সুযোগ ভেবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পুরো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আর এক্ষেত্রে মুনাফিক মারওয়ান কলকাঠি নাড়তে থাকে। এমনকি তারা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে উনাকে আবদ্ধ করে রাখে।
বলাবাহুল্য যে, মুনাফিক বিদ্রোহীরা হযরত মুহম্মদ ইবনে আবী বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ বিশিষ্ট ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টা চালায়। উনারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে সরে পড়েন। অনেক ঐতিহাসিক উনাদের সরে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ না করায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালামসহ বিশিষ্ট ছাহাবীগণ উনারা বিদ্রোহ থামানোর চেষ্টা করেন। মুনাফিকরা উনাদের আদেশ মুবারক অমান্য করে। অতঃপর উনারা মুনাফিকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযানের অনুমতি প্রার্থনা করলে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে রক্ত প্রবাহিত করাকে অপছন্দ করেন। এমতাবস্থায় মুনাফিকরা আরো শক্তি সঞ্চয় করে।
অবশেষে পবিত্র ১৮ যিলহজ্জ শরীফ ইয়াওমুল জুময়াহ মুনাফিকরা উনার পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করে উনাকে শহীদ করে। সেই সময়ে তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ তিলাওয়াত করছিলেন। আর সেই কুরআন শরীফ খানা অদ্যাবধি মিসরের জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের পর মুনাফিকরা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে সীমাহীন গোলযোগ সৃষ্টি করে। তার কারণে তিন দিন পর্যন্ত মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেননি। এমনকি মুনাফিকরা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার জিসম মুবারক দাফন করতেও বাধা সৃষ্টি করে। এতদ্বসত্ত্বেও হযরত যুবাইর ইবনে মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার জানাযা নামায পড়ান। অল্প সংখ্যক লোকের খোশ নছীব হয়েছে উনার জানাযা নামায উনার মধ্যে শরীক হওয়ার। উনাকে জান্নাতুল বাকীর হাসসে কাওকাবে দাফন মুবারক করা হয়েছে।
যুন নূরাইন লক্বব মুবারক
বিভিন্ন কারণে তিনি যুন নূরাইন তথা দুই নূরের অধিকারী। প্রথমত, তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুইজন কন্যাকে পর্যায়ক্রমে গ্রহণ করেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি কুরআন শরীফ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের উভয়ই সংকলন করেছেন। তৃতীয়ত, কামালতে রিসালাত এবং কামালতে বিলায়েত উভয়ই উনার মাঝে একত্রিত হয়েছে। চতুর্থত, তিনি দুইবার হিজরত মুবারক করেছেন।
 বিশেষ বিষয়
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে মুহাদ্দিসগণ ১৪৬ খানা পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি জুমুয়ার ছানী আযানের প্রচলন করেন। ২৬ হিজরীতে মসজিদে হারাম শরীফ উনার জন্য নতুন জায়গা ক্রয় করে উনার বিস্তৃতি ঘটান। এছাড়া উনার সময়ে মসজিদে নববী শরীফ উনার ব্যাপক সংস্কার করা হয়। তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে রুকু হিসেবে বিন্যস্ত করেন। উনার মুবারক তত্ত্বাবধানেই খতমে তারাবীহ উনার প্রচলন ঘটে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মুজাদ্দিদে যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলায় মুসলিম উম্মাহকে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে হুসনে যন রাখার তাওফিক দান করুন। উনার শাহাদাতের বদলা গ্রহণের শক্তি সুযোগ দান করুন। (আমীন)


No comments:

Post a Comment