লাইলাতিন নিছফি মিন শা’বান তথা পবিত্র শবে বরাত
১৪ই শা’বান দিবাগত রাতটি হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত বা বরাতের রাত্র। খোদা ,ফিরিশতা, পীর ছাহেব, নামায, রোযা, শবে বরাত ইত্যাদি ফার্সী শব্দ যা হুবুহু বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে বা বহুল প্রচলিত। ফার্সীতে শব অর্থ রাত্রি এবং বরাত অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি। সুতরাং শবে বরাত মানে হল ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত।
পবিত্র কুরআন শরীফে লাইলাতুম মুবারকাহ, পবিত্র হাদীস শরীফে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান
ফার্সীতে শবে বরাত এবং যা বাংলায় শা’বানের মধ্য রাত্রি, কেউ কেউ আবার ভাগ্য রজনীও বলে থাকেন।
ফার্সীতে শবে বরাত এবং যা বাংলায় শা’বানের মধ্য রাত্রি, কেউ কেউ আবার ভাগ্য রজনীও বলে থাকেন।
মূলতঃ শবে বরাত এবং এর ফযীলত কুরআন শরীফ এ আয়াত শরীফ এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন শরীফ এ শবে বরাতকে লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর হাদীছ শরীফ এ শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শা’বান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ এ ইরশাদ করেন,
٢﴾
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ﴿٣﴾ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ﴿٤﴾ أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا ۚ إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ ﴿٥﴾ رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ)
অর্থঃ শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সূরা দু’খান, আয়াত শরীফ ২-৫)
কেউ কেউ বলে থাকে যে, “সূরা দু’খানের উল্লেখিত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদর-কে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফ এ সুস্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি……..। আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাতে নাযিল করা হয়েছে তা সূরা ক্বদরেও উল্লেখ আছে ।”
এ প্রসঙ্গে মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন,” মহান আল্লাহ পাক তিনি লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে শা’বান মাসের মধ্য রাত বা শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি এ রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলোর ফায়সালা করে থাকেন।” (ছফওয়াতুত তাফাসীর, তাফসীরে খাযীন ৪র্থ খন্ডঃ ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে আব্বাস,তাফসীরে মাযহারী ৮ম খন্ডঃ ৩৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী ১০ম খন্ড, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, রুহুল বয়ান, আবী সাউদ, বাইযাবী, দূররে মানছূর, জালালাইন, কামলালাইন, তাবারী, লুবাব, নাযমুদ দুরার, মাদারিক)
লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ সূরা দু’খানের ৪ নম্বর আয়াত শরীফ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ। এই আয়াত শরীফ এর يُفْرَقُ শব্দের অর্থ ফায়সালা করা। প্রায় সমস্ত তাফসীরে সকল মুফাসসিরীনে কিরামগণ يُفْرَقُ (ইয়ুফরাকু) শব্দের তাফসীর করেছেন ইয়ুকতাবু অর্থাৎ লেখা হয়, ইয়ুফাছছিলু অর্থাৎ ফায়সালা করা হয়, ইয়ুতাজাও ওয়াযূ অর্থাৎ বন্টন বা নির্ধারণ করা হয়, ইয়ুবাররেমু অর্থাৎ বাজেট করা হয়, ইয়ুকদ্বিয়ু অর্থাৎ নির্দেশনা দেওয়া হয় । কাজেই ইয়ুফরাকু -র অর্থ ও তার ব্যাখার মাধ্যমে আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাত্রিতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য শবে বরাতকে লাইলাতুত্ তাজবীজ অর্থাৎ ফায়সালার রাত্র এবং শবে ক্বদরকে লাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ নির্ধারিত ফায়সালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়। (তাফসীরে মাযহারী,তাফসীরে খাযীন,তাফসীরে ইবনে কাছীর,বাগবী, কুরতুবী,রুহুল বয়ান,লুবাব)
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সুরা দু’খান-এ বলেছেন, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি” এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি”। আর সুরা ক্বদর-এ “আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি ” এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল “আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি”।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি শবে বরাতে কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন এবং শবে ক্বদরে তা নাযিল করেন।
হাদীছ শরীফ এ ও শবে বরাতে সমর্থন পাওয়া যায়। হাদীছ শরীফ এ ইরশাদ হয়েছে, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে। একদা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম ! আপনি কি জানেন, লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাতে কি সংঘটিত হয়? তিনি বললেন, হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! এ রাত্রিতে কি কি সংঘটিত হয়? মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এ রাতে আগামী এক বছরে কতজন সন্তান জম্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক মৃত্যূবরণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে বান্দার (এক বছরের) আমলসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা হয় এবং এ রাতে বান্দার (এক বছরের) রিযিকের ফায়সালা হয়”। [বাইহাক্বী, ইবনে মাজাহ্, মিশকাত শরীফ]
হাদীছ শরীফ আরও ইরশাদ হয়েছে, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, একদা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাতযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফ এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফ এ ফিরে এলে তিনিও ফিরে এলেন এবং বললেনঃ আপনি কি মনে করেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন? আমি বললামঃ ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারনা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফ এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন”। [বুখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ, রযীন, মিশকাত শরীফ]
হাদীছ শরীফ এ আরও ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ননা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষনা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলুকাতকে ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত।” (ইবনে মাযাহ্, আহমদ, মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফ এ আরও ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বর্ননা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষাণা করতে থাকেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে সুবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষাণা করতে থাকেন।” [ইবনে মাযাহ্,মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ]
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখ উপস্থিত হয় তখন ওই রাত্রিতে তোমরা নামাজ পড় এবং দিনে রোজা রাখো। কেননা আল্লাহ তায়ালা ঐ দিন সুর্যাস্তের পর পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করে ঘোষনা করতে থাকেন,"তোমাদের মদ্ধে কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? তাকে আমি ক্ষমা করে দিব। কেউ রিজিক প্রার্থী আছ কি? তাকে আমি রিজিক দান করবো। কেউ বিপদগ্রস্থ আছ কি? তার বিপদ দূর করে দিবো। আল্লাহ পাক ফজর পর্যন্ত এভাবে ঘোষনা দিতেই থাকেন। সুবহানআল্লাহ!! (ইবনে মাযাহ শরীফ)
হাদীছ শরীফ এ আরও ইরশাদ হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে এবং অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, সে ব্যক্তির অন্তর ঐদিন মরবে না বা পেরেশান হবে না যে দিন সকলের অন্তর পেরেশান থাকবে।” [মুকাশাফাতুল কুলুব]
দোয়া কবুল প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ এ ইরশাদ হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, পাঁচটি রাত এমন রয়েছে যেগুলোতে দোয়া করলে তা রদ বা বাতিল হয়না । (১) পহেলা রজবের রাত (২) শা’বানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত (৩) জুমুয়ার রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত।” [দায়লামী শরীফ]
অন্য হাদীছ শরীফ এ ইরশাদ হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, নিশ্চয়ই দোয়া বা মুনাজাত পাঁচটি রাতে কবুল হয়ে থাকে । (১) পহেলা রজবের রাত (২) শা’বানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত (৩) ক্বদরের রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত [মা ছাবাত বিস্ সুন্নাহ, গুনইয়াতুত্ ত্বালিবীন, মুকাশাফাতুল কুলুব]
সুতরাং উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
বাতিল ফিরকার লোকজন উল্লেখিত শবে বরাত সম্পর্কিত কিছু হাদীছ শরীফকে দ্বয়ীফ আখ্যা দিয়ে থাকেন। তাই দ্বয়ীফ হাদীছের ব্যাপারে নিম্নে আলোকপাত করা হল:
দ্বয়ীফ হাদীছঃ
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন কথাই দ্বয়ীফ নয় বরং রাবীর দুর্বলতার কারণে হাদীছ শরীফ কে দ্বয়ীফ বলা হয়। রাবী বা হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী, হাদীছ শরীফ এর রাবী গুণ সম্পন্ন নন তাকে দ্বয়ীফ হাদীস বলা হয়। দ্বয়ীফ হাদীসের দুর্বলতার কম বা বেশী হতে পারে। কম দুর্বলতা হাসানের নিকটবর্ত্তী আর বেশি হতে হতে মওজুতে পরিণত হতে পারে। এ ধরনের হাদীছ শরীফ আমলে উৎসাহিত করার জন্য বর্ণনা করা যেতে পররে বা করা উচিৎ। তবে আইন প্রণয়নে গ্রহনযোগ্য নয়।
এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “দ্বয়ীফ হাদীছ যা মওজু নয় তা ফজিলতের আমল সমূহে গ্রহণযোগ্য” [ফতহুল ক্বাদীর]
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বিহ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “সকলেই একমত যে দ্বয়ীফ হাদীছ ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে।” (আল মওজুআতুল কবীর, ১০৮ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমাণিত হল যে, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ ফযীলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে। তবে দ্বয়ীফ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত সকল আমল মুস্তাহাব।
পবিত্র বরাত উনার পবিত্রতম রাতে ইবাদত-বন্দেগী করার সর্বোত্তম তারতীব বা পদ্ধতি প্রসঙ্গে
পবিত্র শবে বরাত শরীফ উনার রাতে জাগ্রত থেকে বিভিন্ন প্রকারের পবিত্রতম ইবাদত-বন্দেগী করার ব্যাপারে অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে উৎসাহ ও নির্দেশনা মুবারক দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “এই পবিত্রতম বরাত উনার রাতের দু’রাকায়াত নামায বনী ইসরাঈলের জনৈক বুযূর্গ ব্যক্তির চারশ বৎসরের ইবাদতের চেয়েও অধিক ফযীলতপূর্ণ এবং এ রাতের ইবাদত-বন্দেগী বিশটি মক্ববুল হজ্জ উনার ছওয়াব, বিশ বছর পবিত্র রোযা উনার ছওয়াব সমতুল্য।”
তবে এ রাতে কত রাকায়াত পবিত্র নামায পড়তে হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও মূল মূল ও খাছ খাছ পবিত্র ইবাদত উনার মাধ্যমে এ রাত জাগরণ করলে সমস্ত ইবাদতেরই ছওয়াব পাওয়া যায়। তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
তবে এ রাতে কত রাকায়াত পবিত্র নামায পড়তে হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও মূল মূল ও খাছ খাছ পবিত্র ইবাদত উনার মাধ্যমে এ রাত জাগরণ করলে সমস্ত ইবাদতেরই ছওয়াব পাওয়া যায়। তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
প্রথমতঃ ছলাতুল ইশা উনার নামায:
প্রথমে জামায়াতের সাথে পবিত্র ইশা নামায পড়ে নিতে হবে। অতঃপর পবিত্র সুন্নত নামায পড়ার পর পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পাঠ। যেহেতু পবিত্র মীলাদ শরীফ স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পাঠ করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! যা নাজাত ও শাফায়াত লাভের সর্বোত্তম উত্তম মাধ্যম। কাজেই পবিত্র মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উনার গুরুত্ব সর্বাধিক। অতঃপর দোয়া করতে হবে।
অতঃপর পবিত্র শবে বরাত উনার নামায:
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে কত রাকায়াত নামায পড়তে হবে এ ব্যাপারে যদিও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তবে পবিত্র শবে বরাত উনার নামাজ দুই দুই রাকায়াত করে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতু আন উসাল্রিয়া লিল্রা-হি তায়ালা রাকতাই ছলাতিল লাইলাতুম মুবারকাহ সুন্নতি রাসুলিল্রাহি তায়ালামুতওযাজ্জাহান ইলা জাহতিল ক্বাবাতিশ শারীফাতি আল্রহু আকবার।
অতঃপর ছলাতুত্ তাসবীহ নামায পড়বেন:
এ মহান রাতে পবিত্র ছলাতুছ তাসবীহ নামায পড়বেন, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা হয়।
ছলাতুত্ তাসবীহ নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতু আন উসাল্রিয়া লিল্রা-হি তায়ালা আরবায়া রাকতাই ছলাতিল ছলাতুত তাসবীহ সুন্নতি রাসুলিল্রাহি তায়ালামুতওযাজ্জাহান ইলা জাহতিল ক্বাবাতিশ শারীফাতি আল্রহু আকবার।
তিল লাইলাতুম “আমি ছলাতুত তাসবীহ-এর চার রাকায়াত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখী হয়ে আদায় করছি।”
سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر
উচ্চারণ: “সুব্হানাল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি ওয়ালা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।”
প্রতি রাকায়াতে ৭৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে। অর্থাৎ চার রাকায়াত নামাযে মোট ৩০০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে।
পবিত্র ছলাতুত্ তাসবীহ নামায উনার নিয়মবিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন “ছলাতুত্ তাসবীহ”
অতঃপর পবিত্র যিকির-আযকার করবেন:
তরিকার যিকির, দুরুদ শরীফ অথবা মনে মনে একাগ্রচিত্তে আল্লাহ
আল্লাহ যিকির করুন। এর দ্বারা দিল ইছলাহ ও ইতমিনান হয়।
অতঃপর পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবেন:
এ পবিত্র রাতে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবেন, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদত করার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে আফযল।
অতঃপর সম্ভব হলে কবর যিয়ারত করবেন:
এর দ্বারা পবিত্র সুন্নত আদায় হয়। কেননা পবিত্র বরাত উনার রাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই জান্নাতুল বাক্বীতে গিয়ে যিয়ারত মুবারক করেছেন ও পবিত্র দোয়া করেছেন। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারা রাত্র ব্যয় করে দেয়া ঠিক হবে না। সম্ভব হলে পবিত্র সুন্নত উনাকে আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোনো কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবেন।
অতঃপর পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায:
পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায পড়বেন, যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহান নৈকট্য হাছিল হয়। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর পবিত্র মীলাদ শরীফ
পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত উনাদের জন্য সবচেয়ে বড় ইবাদত ও নাজাতের মূল কারণ। সুবহানাল্লাহ! যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়।
অতঃপর দোয়া-ইস্তিগফার করবেন:
মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু’হাত তুলে মনের চাহিদানুযায়ী দোয়া করবেন, যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হবেন ও উনার মহান নিয়ামত লাভে ধন্য হবেন। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবেন, যার মাধ্যমে বান্দার সমস্ত গুনাহখতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত উনার বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়।
দান-ছদকা ও গরিব-মিসকীনদের খাদ্য খাওয়ানো:
গরিব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবেন ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবেন, যার দ্বারা মহান ‘হাবীবুল্লাহ’ লক্বব মুবারকে ধন্য হওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে যদি কেউ গরিব-মিসকীন বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে খাওয়াতে চায়, তবে এ ক্ষেত্রে হালুয়া-রুটি কিংবা গোশত-রুটি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলে তা হবে পবিত্র খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এ পবিত্র সুন্নত পালনের খেয়ালে যদি কেউ তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে গরিব-মিসকীন ও ওইসব লোকদের জন্য যারা সারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে পবিত্র রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও পবিত্র রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি, গোশত-রুটি, গোশত-পোলাও, কোর্মা-পোলাও, মোরগ-পোলাও, তেহারী, গোশত-খিচুরী ইত্যাদি আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোনো প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই খাছ সুন্নত আদায়ের সাথে সাথেই অশেষ বারাকাত, ফুয়ুযাত, নিয়ামত, ফযীলত ও নাজাতের কারণ হবে।
উল্লেখ্য যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, তারা ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলত, মুনাজাত যে কোনো সময়েই করা যায়। তবে পবিত্র বরাত উনার রাত্রে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহে ছাদিকের পূর্ব পর্যন্তই। এরপর পবিত্র বরাত উনার রাত্র অবশিষ্ট থাকে না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, “ফজর বা ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদের বিভিন্ন দোয়া কবুল করেন।”
অতএব, সকলের উচিত মূল মুনাজাত বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা। অতঃপর ছুবহে ছাদিকের পূর্বে পর দিন রোযার রাখার নিয়তে সাহরী খাওয়া। কারণ এই পবিত্র রোযার গুরুত্ব ও তাৎপর্য এত অধিক যে, জিন-ইনসান তো বটেই এমনকি পশু-পাখি, গর্তের পিপীলিকা, সমুদ্রের অন্যান্য প্রাণীসহ মাছেরাও এ পবিত্র শবে বরাত উনার রোযা রেখে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই আমাদের সকলেরই উচিত এ পবিত্র বরাত উনার রাত্রি মুবারক যথাযথভাবে পালন করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা। (আমীন)
কাজেই আমাদের সকলেরই উচিত এ পবিত্র বরাত উনার রাত্রি মুবারক যথাযথভাবে পালন করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা। (আমীন)
No comments:
Post a Comment