আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ্। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুন। এখানে রয়েছে ইসলামী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জানা অত্যাবশ্যক।***
যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা সহ অনলাইনে ফ্রি ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সুযোগ ***
ডাঃ আহমদ ইমতিয়াজ ডি.এইচ.এম.এস, বি.এইচ.এম.সি (ঢাকা) মোবাইল - 01914440430 ই-মেইলঃ drahmadimtiaj@gmail.com ***

হযরত আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি

ইমামে  আযম  সাইয়্যিদুনা  হযরত  ইমাম  আবু  হানীফা  রহমাতুল্লাহি আলাইহি  উনার  জীবনী  মুবারক


সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য;আর অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার প্রতি।
ইমামুল মুহাদ্দিসীন, ওয়াল ফুকাহা, হানাফী মাযহাবের প্রবর্তক, মহান ব্যক্তিত্ব ইমাম আজম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন বেমেছাল আল্লাহ পাক উনার ওলী এবং ফকীহ ও দ্বিতীয় হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ।,উনার আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা ও কুরআন-সুন্নার গবেষণায় সুনিপূন কৃতিত্ব আদর্শ হয়ে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত।

পরিচিতি মুবারক 
তিনি একজন তাবেয়ী। উনার নাম মুবারক নোমান ইবনে সাবিত ইবনে যুতা ইবনে মারযুবান ( نعمان بن ثابت بن زوطا بن مرزبان)
৮০ হিজরীতে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের রাজত্বকালে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইরাকের কুফা নগরীতে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। পিতা সাবিত বিন যুতা ছিলেন আফগানিস্তানের কাবুলে একজন সৎ আমানতদার ব্যবসায়ী।বাল্যকালেই তিনি পিতার থেকে ব্যবসা শিক্ষা করেছিলেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি যুগের বড় বড় মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ এর দরসে উপস্থিত হতে থাকেন।

একদা ইমাম শা’বী রহমাতুল্লাহি আলাইহির দরসে উপস্থিত হলে তিনি তাঁকে লক্ষ করে বলেছিলেন, “আপনার মধ্যে আমি অপূর্ব মেধা ও বেনযীর প্রতিভার নিদর্শন দেখতে পাচ্ছি।” ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তাঁর এ কথা আমার উপর প্রভাব বিস্তার করলো। তখন থেকে আমি হাঁটে-বাজারে গমন ছেড়ে দিয়ে ইলমের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করলাম। এরপর থেকে তিনি ইলম অন্বষণে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেন। বিশেষ করে ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিক্হে গভীর মনোনিবেশ করেন। তিনি যখন হাদীস চর্চায় ব্রতী হন তখন সারা দুনিয়ায় ইলমে হাদীসের ব্যাপক চর্চা চলছিল, যে কারণে তিনি তখনকার সকল বড় বড় হাদীস বিশারদ ও ফকীহদের থেকে উপকৃত হতে পেরেছিলেন।তিনি ‘কূফা’ শহরেই ‘ইলমে ক্বালাম’ শিক্ষা করেন। অতঃপর কূফার শীর্ষস্থানীয় ফিকাহ শাস্ত্রবিদ ‘হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট জ্ঞান আহরণ করতে থাকেন। অতঃপর ১২০ হিজরীতে ‘হযরত হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির স্থলাভিষিক্ত হন এবং কুফার ‘মাদ্রাসাতুর রায়’ এর কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন।সেই সাথে ইরাকের অনন্য ইমাম বলে বিবেচিত হন এবং অসাধারণ খ্যাতি লাভ করেন। ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির শাইখ ও উস্তাদের সংখ্যা চার হাজারের মতো। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইমাম শা’বী, আ’মাশ, সিমাক ইবনে হারব, হাসান বসরী, শু’বা, কাতাদা, আতা ইবনে আবী রাবাহ, ইকরামা ও হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ।

উপনাম 
ইমাম আবু হানিফা নামেই তিনি অত্যাধিক পরিচিত।
লকব
হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার ৪৮ টিরও বেশী লক্বব মুবারক (উপাধী) ছিল, তান্মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্বব -- ইমামে আ’যম, ইমামুল মুকাস্সিরীন ফিল হাদীস, হাকীমুল হাদীস, ইমামুল কবীর ফিল ফিক্বাহ, ইমামুল উমাম, ইমামুল আইম্মা, ইত্যাদি।

বাইয়াত গ্রহন
তিনি প্রথমে হযরত ইমাম সাইয়্যিদ বাকির আলাইহিস সালাম-উনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং উনার বিছাল শরীফের পর উনার পুত্র হযরত ইমাম সাইয়্যিদ জাফর সাদিক্ব আলাইহিস সালাম-উনার নিকট বাইয়াত হন। শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার হাতে বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেনঃ “(আমার জীবনে) যদি দু’টি বছর না আসতো, তবে নু’মান ধ্বংস হয়ে যেত।“ (সাইফুল মুক্বাল্লিদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া) অর্থাৎ যদি তিনি উনার শায়খদ্বয় উনাদের নিকট বাইয়াত না হতেন, তবে তিনি ধ্বংস বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতেন।

মুয়াফফাক আলমক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি(৫৬৪ হি.) ‘মানাকিবু আবী হানীফা’’ গ্রন্থে (খন্ড ২, পৃষ্ঠা : ১৫১-১৫২) আবু ইসমা সা’দ ইবনে মুয়ায রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। তিনি আবু সুলায়মান জুযাজানী থেকে, তিনি ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে,আর তিনি ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন।
►ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
كنا نكلم أبا حنيفة في باب من أبواب العلم، فإذا قال بقول واتفق عليه أصحابه درت على مشايخ الكوفة هل أجد في تقوية قوله حديثا أو أثرا؟ فربما وجدت الحديثين أو الثلاثة فآتيه بها، فمنها ما يقبله ومنها ما يرده، فيقول : هذا ليس بصحيح أوليس بمعروف، وهو موافق لقوله! فأقول له : وما علمك بذلك؟ فيقول : أنا عالم بعلم الكوفة.
‘আমরা আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির সাথে একটি অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করতাম। এরপর যখন তিনি সিদ্ধান্ত দিতেন এবং তার সঙ্গীরাও একমত হতেন তখন আমি কুফার শায়েখগণের কাছে যেতাম তার সিদ্ধান্তের সমর্থনে আরো কোনো হাদীস বা আছর পাই কিনা। কখনো দুইটি বা তিনটি হাদীস পেতাম। তাঁর কাছে পেশ করার পর তিনি কোনোটি গ্রহণ করতেন আবার কোনোটি এই বলে বর্জন করতেন যে, এটি সহীহ নয় বা মারুফ নয়। অথচ তা তার সিদ্ধান্তের অনুকূলে। আমি বলতাম, এ সম্পর্কে আপনার ইলম কীরূপ। তিনি বলতেন, আমি কূফা নগরীর ইলমের ধারক।সত্যি তিনি ছিলেন কুফার মনীষীগণের কাছে সংরক্ষিত ইলমের ধারক।
ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১২ লাখ ৯০ হাজার মাসআলা ইস্তিহাত করেছেন।
► হযরত আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – « ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺻَﺎﺏَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব।
{সহীহ বুখারী,৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম ৪৫৮৪}
ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনিই সর্বপ্রথম ফিকহের তারতীবে ইলমে হাদীস সংকলন করেন এবং অমূল্য গ্রন্থ ‘কিতাবুল আছার’ লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর অনুসরণে মুয়াত্তা কিতাব প্রণয়ন করেন।
✽ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ছিলেন সাহাবায়ে-ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আর সাহাবীদের পরবর্তী মর্তবা হচ্ছে তাবেয়ীগণের। ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন তাবেয়ী। তাঁর এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাঝে মাত্র দুইজন বা তিনজন বর্ণনাকারী থাকতেন। এতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সবচেয়ে সহীহ বলে বিবেচিত হত।

✽ ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ৩৩ থেকে ৩৪ জন সাহাবী উনাদের নিকট সরাসরি ইলম হাসিল করেছেন। তন্মন্ধে কয়েকজন সাহাবীর নাম উল্লেখ করা হল।

১) হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৯৩ হিজরী)
২) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৮৭ হিজরী)
৩) হযরত সহল ইবনে সাআদ রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৮৮ হিজরী)
৪) হযরত আবু তোফায়ল রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ১১০ হিজরী)
৫) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়দী রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৯৯ হিজরী)
৬) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৯৪ হিজরী)
একটি স্মরণীয় ঘটনা
জনৈক ব্যক্তি একবার হযরত সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে হাজির হয়ে আরজ করল, হুজুর ! এক জায়াগায় আমি কিছু টাকা হিফাজতের জন্য রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন শত চেষ্টা সত্ত্বেও সে জায়গার কথা স্মরন করতে পারছি না।
অথচ টাকার খুবই দরকার। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন,হে ব্যক্তি এটাতো কোন ফিক্বহী মাসায়ালা নয়।আমি কি সমাধান দিব ?
আগন্তক ব্যক্তি বড় অনুনয় বিনয় করে বলল, হুজুর- একটা সমাধান বলে দিন। হযরত সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যাও ওযু করে সারা রাত নামাজ পড়তে থাক।
উক্ত ব্যক্তি বাড়ি গিয়ে ওযু করে নামাজ শুরু করে দিল। দু চার রাকাত পড়তে না পড়তেই টাকার কথা মনে পড়ে গেলো।সে দৌড়ে এসে সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সংবাদ দিলো যে,হুজুর আপনার নছীহত মুবারক কাজে লেগেছে।হারানো টাকা পেয়ে গেছি। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে ব্যক্তি !শয়তান কিভাবে এটা বরদাশত করবে যে, তুমি সারারাত নামাজ পড়তে থাক। তাই দু চার রাকায়াত পড়তে না পড়তেই মনে করিয়ে দিয়েছে। তবে তোমার উচিত ছিলো শুকরিয়া স্বরূপ বাকি রাত নামাজের মধ্যে কাটানো।”
সুবহানাল্লাহ্ !!(তাযকিরাতুন নু’মান ৩৫৬ পৃষ্ঠা)।
ফিকহ
ফিকহ ( الفقه) একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো উপলব্ধি করা, গভীরভাবে কিছু বুঝতে পারা, অনুধাবন করা, সূক্ষ্মদর্শিতা ইত্যাদি।
প্রখ্যাত অভিধান বিশারদ আল্লামা আবুল ফযল জামালুদ্দীন মুহাম্মদ আল মিসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
العلم بالشيء والفهمُ له
“ফিকহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, কোন কিছু সম্বন্ধে জানা ও বুঝা।” [লিসানুল আরব]
ইসলামি আইনশাস্ত্র, যা অধ্যয়নের মাধমে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সকল বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের বিধান জানা যায়।
কুরআন ও হাদীসের মৌলিক বিধানগুলোর যে প্রায়োগিক রূপ হলো ফিকহ শাস্ত্র।সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ফিক্বহী মাসায়ালার ইমাম।
(একজন ফকীহ শয়তানের জন্য হাজার (মূর্খ) আবেদ অপেক্ষা ভয়ংকর” (তিরমিযি)।
মাযহাব
মাযহাব (مذهب ) ফিকহ শাস্ত্রের অন্তর্ভূক্ত এক একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা। কেউ যদি কুরআন সুন্নাহ ইজমা কিয়াস ফিকাহ শাস্ত্রের সবকিছু রপ্ত করে ফেলেন তাহলে তার মাযহাব না মানলেও চলবে। সে নিজে নিজে ইস্তিহাদ করে মাসয়ালা বের করে করে আলম করবেন। কিন্তু সাধারণ মুসলমান যার কুরআন সুন্নাহ ইজমা কিয়াস সম্পর্কে নেহাত্যেই অজ্ঞ তাদের জন্য নিম্নোক্ত চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব অনুসরণ করা ফরজ অত্যাবশ্যক। আর এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে হক্ব বুঝার তৌফিক দান করুন আমিন

❶হানাফি (সুন্নি)  ইমামে আযম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। 
❷মালিকি (সুন্নি) ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহির অনুগামীদের মালিকি বলা হয়।
❸শাফিয়ী (সুন্নি) ইমাম শাফি রহমতুল্লাহি আলাইহি অনুগামীদের শাফিয়ী বলা হয়।
❹হাম্বলী (সুন্নি)  ইমাম ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহির অনুগামীদের হাম্বলী বলা হয়।
হানাফী মাযহাব
হানাফি (الحنفي) মাযহাব হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মধ্যে সবথেকে বড় মাযহাব। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইমামে আযম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে অর্থাৎ উনার ইস্তিহাদকে অনুসরণ করেন এই মতাবলম্বীগণ। পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম দেশে যেমন; সুদান, মিশর, জর্দান, সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, উজবেকিস্তান, আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান ইত্যাদি অসংখ্য দেশে এই মতবাদ প্রচলিত। এছাড়া সারা বিশ্বে এই মতাবলম্বী কোটি কোটি মুসলমান আছেন। তিনি ইরাকের বাগদাদ শহরে অবস্থান করতেন। ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি চার প্রসিদ্ধ ইমামের মাঝে বড় ইমাম হিসাবেই পরিচিত। অনেকের মতে তিনি মদীনা শরীফের হাদীস সমূহেই গ্রহণ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্রাহ হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শেষ দিকের আমলকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আর তাই হানাফী মাযহাব হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ও পূর্ণাঙ্গ মাযহাব।

শেষ জামানায় যখন হযরত ইছা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম পূনঃরায় জমিনে আগমন করবেন তবে নবী নিসেবে নয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্ল্হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে। কিন্ত তিনি যেহেতু নবী তাই উনার কোন মাযহাবের অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই বা অনুসরণ করা্টাও উনার শানের খিলাফ। তিনি কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ হতে সরাসরি ইস্তিহাদ করে মাসয়ালা বের করে করে আমল করবেন। কিন্ত লোকজন উনার আমল দেখে মনে করবে যে, উনি হানাফী মাযহাবের অনুসারী। অর্থাৎ উনার ইস্তিহাদ এবং ইমামে আযম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার  ইস্তিহাদের সাথে পুরোপুরি মিলে যাবে। সুবহানআল্লাহ। কাজেই ইমামে আযম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনি যে কত স্মুক্ষ সমজের অধিকারী ছিলেন তা খুব সহজেই অনুমেয়। 
ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বিজ্ঞ ইমাম ও ফকীহ গণের মতামত
►ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
ফিকাহশাস্ত্রের সকল মানুষ আবু হানিফা রহ.-এর পরিবারভুক্ত।
(আছারুল ফিকহিল ইসলামী,পৃ:২২৩)
►আল্লামা হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
“ইমাম আবু হানীফা রহ.-র মুত্যু সংবাদ শুনে ফিক্বাহ ও হাদীস শাস্ত্রের সুপ্রসিদ্ধ ইমাম,
শাফঈ মাযহাবের প্রধানতম সংকলক হযরত ইবনে জরীহ রহ. গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছিলেন,
“আহ! ইলমের কি এক অফুরন্ত খনি আজ আমাদের হাতছাড়া হলো”।
(তাহযীবুত্তাহযীব খন্ড ১,পৃ: ৪৫০)
►ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ননা করেন-
হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হানীফার চেয়ে অধিক জ্ঞানী আমার দৃষ্টিতে পড়েনি। সহীহ হাদীস সম্পর্কে তিনি আমার চেয়ে অধিক দুরদর্শী ছিলেন’।
►ইমাম বোখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহির অন্যতম উস্তাদ মক্কী বিন ইব্রাহীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলেন,
“আবু হানীফা তাঁর সময়কালের শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন”(মানাক্বেবে ইমাম আজম রহ.1/95)
►ইমাম তিরমিযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বহু স্হলে কূফাবাসীদের অভিমতের উল্লেখ করেছেন। এই কুফা নগরীতেই ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির জন্ম এবং এই শহরেই তিনি জ্ঞানার্জন করার সুযোগ লাভ করেছিলেন।
►হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে এই মতামত ব্যক্ত করেন- কথিত আছে যে, ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি আধা রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়তেন। একদা তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় তাঁর দিকে ইঙ্গিত করে এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে বলে যে, ইনি সেই ব্যক্তি যিনি সারা রাত আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করেন। ঐ দিনের পর থেকে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সারা রাত জাগ্রত থাকতেন এবং বলতেন যে, আল্লাহর নিকট আমার এ বিষয়ে লজ্জা হয় যে, লোকে আমার ইবাদত সম্পর্কে এ কথা বলে, যা আমার মধ্যে নেই।
বিছাল শরীফ
৭৬৩ আব্বাসীয় বংশের খলিফা আল-মনসুর ইমাম আবু হানিফাকে রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেন কিন্তু স্বাধীনভাবে থাকার জন্য তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তার পরীবর্তে তার ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফকে প্রধান বিচারপতির দ্বায়িত দেওয়া হয়। প্রস্তাব প্রত্যাখানের ব্যাপারে ইমাম আবু ইউসুফ আল মনসুরকে ব্যাখা দেন তিনি নিজেকে এই পদের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না। আল-মনসুরের এই পদ প্রস্তাব দেওয়ার পেছেনে তার (খলিফার) নিজস্ব কারণ ছিল, ইমাম আবু হানিফা প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পর মনসুর তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। এই অভিযোগের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হানিফা বলেন, “আমি যদি মিথ্যাবাদী হই তাহলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করার ব্যাপারে আমার মতামত সঠিক, কারণ কিভাবে আপনি প্রধান বিচারপতির পদে একজন মিথ্যাবাদিকে বসাবেন।”এই ব্যাখার উত্তরে আল-মনসুর ইমাম আবু হানিফাকে গেফতার করেন ও তাকে নির্যাতন করে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়।

১৫০ হিজরীতে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ৬৭ বছর বয়স মুবারকে বিছাল শরীফ লাভ করেন। বাগদাদ শহরের কারাগারে অবস্থানকালে খাদ্যের সঙ্গে বিষক্রিয়া বুঝতে পেরে সিজদায় পড়ে যান এবং সিজদা অবস্থায়ই শাহাদত বরণ করেন। উনার বিছাল শরীফের কারণ পরিষ্কার নয়। কেউ কেউ বলেন উনাকে কারাগারের অভ্যন্তরে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। 

ইন্তেকালের পরও কারামত প্রকাশ
তিনি কারাগারে থাকাকালীন সময়ে ইন্তিকালের মাত্র তিন দিন পূর্বে এক কুচক্রী বৃদ্ধা ইমামে অযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট একটি স্রওয়াল নিয়ে আসল। বৃদ্ধা উনার খাদেমের নিকট সুওয়াল খানা পেশ করলে খাদেম উহা চরম বেয়াদবী মনে করে তা পেশ করতে অস্বীকার করলে বৃদ্ধা সোরগোল শুরু করল। বিষয়টি অনুধাবন করে ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি খাদেমকে ডেকে জিঙ্গাসা করলেন, কি হয়েছে? খাদেম ইসস্তত করে বলল, হে ইমামে আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি এই বেয়াদব বৃদ্ধা মহিলা সুওয়াল করছে যে, আপনার দাড়ি মুবারকের মূল্য বেশী না তার ছাগলের থোতার পশমের মূল্য বেশী? ইমাম সাহেবের জানা সত্তেও তিনি জবাবে বললেন, যাও ঐ বৃদ্ধাকে জানিয়ে দাও আমি তিন দিন পর ঐ বৃদ্ধার সুওয়ালের জবাব দিব ইনশাআল্লাহ্‌।
আল্লাহ পাক উনার কুদরত তিন দিন পর ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ইনতিকাল করলেন। উনার গোসল মুবারক সম্পন্ন করে লাখ মানুষের সমাগমে উনাকে খাটিয়ার করে জানাযা ও দাফন মুবারক সম্পন্ন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ঠিক ঐ মূহুর্তে উক্ত দুষ্ট বৃদ্ধা সুযোগ বুঝে বলতে লাগল, তোমাদের ইমাম সাহেব আমার মাসয়ালার জবাব দেওয়ার ভয়ে ইনতিকাল করে পালিয়ে বেঁচেছেন। তখন খাটিয়ার উপর স্বয়ং ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উঠে বসে পড়লেন এবং স্বীয় জবান মুবারকে উচ্চ আওয়াজে বলে উঠলেন, হে বৃ্দ্ধা তোমার মাসয়ালার জবাব আমার ঐদিনই জানা ছিল কিন্ত আমি বলিনি কারণ, আমার সংশয় ছিল যে আমি ইমান নিয়ে আল্লাহ পাক উনার স্বাক্ষাতে যেতে পারব কিনা? যদি আমি ইমান হারা হয়ে ইনতিকাল করতাম তাহলে তোমার ছাগলের থোতার পশম মূল্যবান হয়ে যেত কিন্ত তুমি যেন রাখ আমি ইমানের সাথে ইনতিকাল করেছি আর তাই আমার দাড়ি মুবারকের মূল্য তোমার ছাগলের থোতার পশম অপেক্ষা লক্ষ কোটি গুন সন্মানিত।” এই বলে তিনি পূনঃরায় খাটিয়ার শুয়ে পড়লেন যা উপস্থিত লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখতে পেলেন। সুবহানআল্লাহ।

No comments:

Post a Comment